কি হল বিটোফেনের অসমাপ্ত দশম সিম্ফনির

লেখক - ডঃ দীপঙ্কর বসু

                                               

পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সুরকারদের মধ্যে জার্মান পিয়ানো বাদক সুরকার লুডভিগ ভ্যান বিটোফেন  যে একেবারে প্রথম সারির তা নিয়ে সারা বিশ্বের সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ এবং সঙ্গীতপ্রেমী মানুষদের মধ্যে কোনও দ্বিমত নেই। ভাবতে অবাক লাগে সঙ্গীত বিষয়ে মোজার্টের পরামর্শদাতা জোসেফ হেডেনের ছাত্র বিটোফেন তাঁর শ্রেষ্ঠ সুরগুলি যখন করেছিলেন তখন তিনি ভাল করে কানেও শুনতে পেতেন না। ১৮০০ সালে তিনি তাঁর প্রথম বড় অর্কেস্ট্রার কাজ প্রথম সিম্ফনি তৈরি করেন। ১৮০৪ সাল থেকে ১৮০৮ সালের মধ্যে যখন তিনি তৃতীয় এবং পঞ্চম সিম্ফনি তৈরি করেন তখন তাঁর কানে শোনার সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছিল। ১৮১৪ সালের মধ্যে বিটোফেন পুরোপুরি বধির হয়ে যান। এরপরেও অনেক দুর্দান্ত কাজ করেন তিনি। ১৮২২ থেকে ১৮২৪ সালের মধ্যে তিনি তাঁর নবম সিম্ফনি তৈরি করেন। এরপর তিনি আরেকটি সিম্ফনি তৈরির কাজ শুরু করেন। তাঁর সেই অসমাপ্ত দশম সিম্ফনির কাজের কথা তিনি ১৮২৭ সালের ১৮ই মার্চের একটি চিঠিতে উল্লেখ করেন।             

তারপর বিটোফেনের মৃত্যুর পর কেটে গেছে প্রায় দুশো বছর। সম্প্রতি জার্মানির জগদ্বিখ্যাত এই সুরকারের সুরের আঁচড়ের কিছু টুকরোকে এক জায়গায় এনে যন্ত্রের সাহায্যে পরিপূর্ণ সুরের রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন কয়েক জন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী এবং একদল সুরকার। সুরের টুকরোগুলো ছিল বিটোফেনের সেই অসমাপ্ত দশম সিম্ফনির অংশ। 

১৮২৭ সালে লুডভিগ ভ্যান বিটোফেন যখন মারা যান তিনি কিছু সুরের আঁচড় এবং নোট রেখে যান যাতে এক মাস্টার পিসের ইঙ্গিত ছিল। কিন্তু তা পরিপূর্ণ সিম্ফনি ছিল না। ১৯৮৮ সালে সংগীত বিশেষজ্ঞ ব্যারি কুপার চেষ্টা করেছিলেন অসমাপ্ত সিম্ফনিটিকে সম্পূর্ণ করতে। কিন্তু তিনি বিশেষ এগোতে পারেননি।  সুরের গতিবিধির প্রথম পর্যায় পর্যন্ত এগোলেও, বিটোফেনের হাতে লেখা নোটে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের সুরের  উল্লেখ সামান্য থাকার জন্য তা একটি পরিপূর্ণ সিম্ফোনি তৈরির পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। 

সুরকার ওয়াল্টার ওয়েরজোওয়া ও একদল সংগীত বিশেষজ্ঞ এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী মেশিন লার্নিং কে ব্যবহার করে  টুকরো গুলোকে নিয়ে কি করে একটি পরিপূর্ণ সিম্ফোনি বানানো যায় সেই কাজে উদ্যোগী হন। শিল্প ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশেষজ্ঞ বিখ্যাত বিজ্ঞানী আহমেদ এলগাম্মল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়টির নেতৃত্ব দেন। 

টিমের প্রথম কাজ ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বলীয়ান যন্ত্রকে বিটোফেনের পুরো কাজ, ওনার স্কেচ এবং নোটের সব কিছু সরবরাহ করা। বিজ্ঞানীরা যন্ত্রটিকে শেখান কিভাবে বিটোফেন বিখ্যাত চার নোট থেকে তাঁর পঞ্চম সিম্ফোনি সৃষ্টি করেন তার অভিনব পদ্ধতি। এরপর এসবের সঙ্গে সুরের মেলবন্ধন এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার শেখানো হয় যন্ত্রটিকে। এরপর বিটোফেনের লেখা ছোটছোট সুরের টুকরোগুলোকে নিয়ে এই যন্ত্রের সাহায্যে পরিপূর্ণ ভাবে তৈরি করা হয় বিটোফেনের  অসমাপ্ত দশম সিম্ফনি। 

সায়েন্টিফিক আমেরিকান পত্রিকায় ১৫ ই অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছে সেই অসাধারণ অডিও। 

বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন যে কি অসাধারণ কাজ করতে পারে এটি তার একটি অনন্য উদাহরণ। 

                                       

সূচিপত্র

কল্পবিজ্ঞান

গল্পবিজ্ঞান

বিজ্ঞান নিবন্ধ

পোড়োদের পাতা


Copyright © 2011. www.scientiphilia.com emPowered by dweb