  
তাতে কি হলো। অম্বল তো সবারই হয়। হাতি ঘোড়ার হয়,বাড়ির কুকুরের বেড়ালের হয়। তারা কি করে। এক দুবেলা উপোষ দেয়,বাড়ির কুকুর বেড়াল বাড়ির বাগানের গাছের কিছু পাতা খায় এক দুদিনেই ফিট,তারা জানে কোন পাতা খেতে হবে। আমাদের ঠাকুমা দিদিমা কি করতেন? একটু মৌরি বা জোয়ান খেয়ে নিতেন। ডাক্তারের কাছে ছুটতেন না,ওষুধও খেতে হতো না। আর আমরা বিশেষত বাঙালিদের এই নিয়ে কত দুশ্চিন্তা। ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট ,লাইনে বসে থাকা। তারপর ডাক্তারবাবু প্রেসক্রিপসন লিখে দিলেন। অবশ্য রুগীর এই ঔষধের নাম মুখস্ত। পাশের বাড়ির ছেলেটার নাম হয়তো জানেন,কিন্তু অম্বলের ঔষধের নামের লিস্ট জানা। ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লেখার আগেই রুগী বলবেন সকালে আমি একটা প্যান ডি খাই। ভালো কথা। কেন খান এবং এটা কি কাজ করে এবং কি ভাবে করে জানলে ঔষধ খাওয়ার তাড়না থেকে নিজেকে হয়তো কিছুটা বাঁচাতে পারবেন।
বাঙ্গালীদের কথা কেন লিখলাম। ছোটবেলা থেকেই শুনেছি বাঙ্গালীদের নাকি পেটে ব্যামো জন্ম থেকেই। এবং বাঙালিরা একটু বেশি আবেগপ্রবণ। আবেগের উৎপত্তি আমাদের মস্তিষ্কে, এই মস্তিস্কই আমাদের শরীরের হার্ড ডিস্ক যা শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়া প্রক্রিয়া সাজিয়ে গুছিয়ে চালিত করে। প্রতি দশ জন বাঙ্গালীর মধ্যে সাত আট জনের শারীরিক সমস্যার মধ্যে একটি খুবই সাধারণ অথচ তাদের কাছে খুবই কষ্টকর হচ্ছে অম্বল ও গ্যাসের ব্যাথা। তার উপশমের জন্য ডাক্তারে কাছে যাওয়ার অন্ত নেই। অবশ্য তার আগে অনেকেই দুই তিনটি বড়ি গিলে ফেলেছেন। বাজারে ঔষধের সংখ্যাতো গুনে শেষ করা যাবে না। অলি গলিতে ঔষধের দোকান। ডাক্তার যদি বুঝিয়ে বলেন খাওয়া দাওয়া একটু পাল্টে নিন ঠিক হয়ে যাবে। বেশির ভাগ রুগী রোগিণীরা তাতে সন্তষ্ট হন না। সুতরাং ডাক্তারবাবু ঔষধ লিখে দেন। আর লিখতে লিখতে - আবার একই কথা,মস্তিস্ক। মস্তিষ্কের সঙ্গে কলমের একটা সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায়। গবেষণা করে দেখা গেছে জিমন্যাস্ট একটা বারের উপর কিভাবে বারবার ডিগবাজি খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। পায়ের মাংসপেশিরও নাকি স্মৃতিশক্তি আছে। সুতরাং আশ্চর্য নয় মস্তিষ্কে যেটা বার বার ঢুকে যায় সেটা কলমের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসতেও পারে। রুগী - অম্বল -ডাক্তার -ঔষধ কোম্পানি - কলম -ঔষধ – রুগী। কি ঔষধ ? ডাক্তারি ভাষায় পি পি আই (প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর)।
পি পি আই কি করে? পাকস্থলীর অ্যাসিড তৈরি কমিয়ে দেয়।
নামে ও সংখ্যায় অনেক। প্যান ৪০,প্যান ডি,ওমেজ,ওমেজ ডি এস আর আরো অনেক অনেক। কথা হলো পাকস্থলীতে অ্যাসিড এলো কেন? প্রকৃতি কোনো কিছুই অপ্রয়োজনে তৈরি করেনি। কোন বাচ্চা যদি পাকস্থলীতে অ্যাসিড তৈরির কোষ ছাড়া জন্মায় তাহলে এই ধরণীতে তার বসবাস বেশিদিনের হবে না। তাহলে বুঝতেই পারছেন অ্যাসিড কতটা জরুরি। পাকস্থলীতে যে অ্যাসিড থাকে সেটা হলো এইচ সি এল ( হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড )। এসিডের ম্যাপ হয় পি এইচ দিয়ে। মানুষের পাকস্থলীর অ্যাসিড পি এইচ ১ -৩। কুকুরের পাকস্থলীর এসিডের ক্ষমতা আমাদের থেকে বেশি। তাই তারা পচা মাংস,রাস্তায় পড়ে থাকা খাবার,খেলে কোন হজমের সমস্যা হয়না। এই অ্যাসিড কি করে প্রোটিনকে ভেঙে হজমের পরের পর্যায়ে নিয়ে যায়?
পাকস্থলীর নিষ্ক্রিয় এনজাইম পেপসিনোজেনকে সক্রিয় করে জটপাকানো অ্যামিনো এসিডকে ভাঙতে সাহায্য করে।
খাবারের সঙ্গে যে ক্ষতিকারক জীবাণু পাকস্থলীতে পৌঁছে যায় যেমন হেলিকোব্যাক্টর, ক্লোসট্রিডিয়াম ডিফিসিল ,ইস্টস অ্যাসিড এগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে।
প্রয়োজনীয় পরিমান অ্যাসিড না থাকলে খাদ্যের হজম প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটে।
শরীরের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি, বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন কে রক্তে পৌঁছতে পারে না এবং তাতে শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটে।
অ্যাসিডের অভাব আমাদের অন্ত্রের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়।
অতি আবশ্যক ক্যালসিয়াম,কপার, সেলেনিয়াম অন্ত্রের ধমনীতে পৌঁছায় না।
অ্যাসিড বেশি কমে গেলে স্বাস্থ্যের উপর কি কি ক্ষতি হতে পারে? হতে পারে ইনফেকশন, রক্তাল্পতা, পেটে গ্যাস, পেট ফুলে কষ্ট, অস্টিওপোরেসিস,পাকস্থলীর ক্যান্সার।
এবার আসি আবেগের কথায়। পাকস্থলীর অ্যাসিড ক্ষরণ হয় ৩ ধাপে।
কেফালিক (ব্রেইন)- খাদ্যের দর্শনে,গন্ধে, ভাবনায় অ্যাসিড ক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। পাশের ঘরে ইলিশ মাছ রান্না হচ্ছে, গন্ধে নিশ্চয় খিদে বেড়ে যায়।
পাকস্থলী - খাবার পাকস্থলীতে পৌঁছালে তার স্পর্শে অ্যাসিড ক্ষরণ বেড়ে যায়।
অন্ত্রের যোগ এই প্রক্রিয়াতে খুব সামান্য।
স্বাভাবিক ভাবেই বলা যেতে পারে মনের বা মস্তিষ্কের অবস্থার উপর অনেকটাই পাকস্থলীর অ্যাসিড এর পরিমান ও শক্তি নির্ভর করে। মানসিক অস্থিরতা, উৎকণ্ঠা,দুঃখ,রাগ, নিদ্রাল্পতা,এসব অ্যাসিড ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ঔষধের উপর অনির্দিষ্ট কাল নির্ভর করে খেতে থাকলে বিশেষ ক্ষতি হতে পারে। এই ঔষধ গুলো অ্যাসিড জনিত আলসারের চিকিৎসায় যুগান্তকারী অবদান। ঔষধ খাবেন ,কিন্তু ডাক্তারের উপদেশ অনুযায়ী। ব্যাপারটা বুঝতে পারলে নিজেরও চেষ্টা থাকবে অম্বল থেকে কি ভাবে নিজেকে দূরে রাখা যায়। সুতরাং কিছু নিয়মিত ও খাবার দ্রব্যাদি পরিবর্তনে অনেক সময়ই অম্বলের কষ্ট থেকে রেহাই পেতে পারেন। আর অনির্দিষ্ট কালের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ বিনা ঔষধ খাওয়া মানে বিপদ ডেকে আনা। মনোবিশেষজ্ঞ না হয়েও বলছি কখনো নিজেকে বার বার বলবেন না আমার অম্বল হয়। আমাদের মস্তিস্ক( ব্রেইন ) সবচেয়ে আধুনিক কম্পিউটার থেকেও অনেক অনেক বড় সুপার কম্পিউটার। সে নিমেষে এগুলোকে প্রবাদ বাক্য হিসেবে ধরে নেয় আর তার কাজ চালিয়ে যায়, আপনার দুঃখ কষ্টে তার কিছু এসে যায় না।
গ্যাসের গল্প বলবো আবার অন্যদিন।

|