ছু মন্তর ফুস!

লেখক - ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়

                                       

মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন যাদুকর তাঁর নিজস্ব মানানসই পোশাকে। রঙীন ঝলমলে পোশাকের সঙ্গে উপযুক্ত রঙীন পালকের উষ্ণীষ। মুখে রঙ চোখে মোটা কাজল। চমৎকার মোহময় হাসি হেসে যাদুকর দর্শকদের দিকে তাকালেন। সামনের সারি থেকে দেখতে দেখতে অবশেষে পেছনের সারির একেবারে দেওয়ালের কাছে তাঁর দৃষ্টি থামল।

একজনকে ডাকলেন, ম্যাডাম প্লিজ, আমার মনে হয় আপনিই আমাকে ঠিকভাবে সাহায্য করতে পারবেন। একটু উঠে আসেন যদি।

ম্যাডাম হাসিমুখে জায়গা ছেড়ে এগিয়ে এলেন মঞ্চের দিকে। মঞ্চে উঠেও এলেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে। যাদুকরের যাদুহাসিকে কি উপেক্ষা করা যায়? ওতেও মন্ত্র থাকে যে।

মঞ্চে হাসিমুখে যাদুকরের দিকে এগিয়ে এলেন ভদ্রমহিলা। যাদুকরও এগোলেন কয়েক পা।  

-আমার এই সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগত। কি নামে আপনি সুপরিচিত ম্যাডাম?

-অলকা। অলকা সূত্রধর। সুন্দর হেসে বললেন সুন্দরী দর্শিকা।

-তা মিস অলকা আপনি কি রাজি আমার যাদু অনুষ্ঠানের ছোট্ট এক পর্বে অংশগ্রহণ করতে?

হাসিটা বজায় ছিল অলকার। তিনি তেমন ভাবেই বললেন, আমি ধন্য হব তবে।

সহকারিণী দুই সুন্দরী যাদুকরের ইঙ্গিত মাত্রই তারা মিস অলকাকে মঞ্চের মাঝে রাখা একটা কুঠরির ভেতরে পুরে দিয়ে বাইরে থেকে ছিটকিনি এঁটে দিল। সে কুঠুরি মঞ্চে খানিক এদিক ওদিক চালিয়ে দর্শকদের  দেখিয়ে দিলেন তার নিচে কোনও কারিকুরি নেই।

দুই সুন্দরী সহকারিণী দুপাশে সরে গেলেন। এগিয়ে এলেন যাদুকর তাঁর যাদুদন্ড হাতে। চেঁচিয়ে ডাকলেন, মিস অলকা আপনি আছেন এর ভেতরে?

কুঠুরির ভেতর থেকে আওয়াজ এল, হ্যাঁ আমি আছি স্যার।

যাদুকর এবার ঠোঁট নেড়ে কি সব যাদুমন্ত্র উচ্চারণ করলেন আর সেই সঙ্গে যাদুদন্ড কুঠরির কাঠের দেওয়ালে ঠুকে ঠুকে কি সব ভঙ্গি করলেন। তারপর জোরে জোরে বলতে লাগলেন, হোকাস ফোকাস গিলি গিলি ছু মন্তর ফুস!

তার পরেই আবার চেঁচিয়ে ডাকলেন, মিস অলকা আপনি কি এখনও এখানে আছেন?

কেউ উত্তর দিল না। যাদুকরের ইঙ্গিতে দুই সুন্দরী সহচরী দু’পাশ থেকে এগিয়ে এসে কুঠিরির দরজা খুলে দিল। আরে ভেতরে তো কেউ নেই? তার মানে যাদুকর সত্যি ভ্যানিস করে দিয়েছেন একটা জ্বলজ্যান্ত মানুষকে।

হলে উঠল বিরাট হাততালি। কুঠরির দরজা খোলাই রইল। 

যাদুকর আবার তাঁর যাদুদন্ড নেড়ে মুখে কি সব উচ্চারণ করলেন। এবার বেশ জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন, মিস অলকা আপনি এখন কোথায়? আমরা সবাই খুব উদ্বিগ্ন আপনার জন্যে।  

-এই যে আমি এখানে স্যার।

অনেক দূর থেকে মানে সেই হলের একেবারে পেছন থেকে আওয়াজটা আসছে। সবাই সেই আওয়াজ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখল আওয়াজ আসছে সেখান থেকেই যেখান থেকে মঞ্চে উঠে এসেছিলেন মিস অলকা। হাততালিতে ফেটে পড়ল হল। দারুন একটা যাদুর খেলা দেখা গেল। যাদুকর একটা জ্যান্ত মানুষকে ভ্যানিস করে আবার ফিরিয়ে আনলেন আর তার নিজের জায়গাতেই।

এটা যাদুকর পারেন। আর একমাত্র যাদুকরই পারেন একটা গোটা মানুষকে অদৃশ্য করে দিতে। এই যাদুর খেলা গত পরশু মামার সঙ্গে হলে গিয়ে দেখে এসেছে উদ্দীপ্ত। ভাবল মামার কাছে জানতে হবে কি করে অদৃশ্য করা যায় মানুষকে।

মামা বলল, তুই পাগল হলি? এ কাজ তো যাদুকরের। সেটা আমি করব কি করে?

ভাগ্নে মুখ ভার করে বলল, তুমি এত জান আর এটা জান না?

মামা রেগে গেল, কি করে জানব? যাদুকরেরা যদি সব জানিয়ে জানিয়েই খেলা দেখায় তো যাদুকরের ব্যবসা চলবে কি করে?

তাও শান্ত হয় না উদ্দীপ্ত। বলল, কিন্তু এ তো মানুষকে অদৃশ্য করে দেবার খেলা। অদৃশ্য হয়ে একটা মানুষ কি করে সেটা অন্তত বল। কজি করে হাঁটে কি করে চলে কি করে খায় এসব?

মামা বলল, হ্যাঁ সেটা বলতে পারি। কিন্তু আসলে কি জানিস মানুষকে ভ্যানিস করা খুব শক্ত। একমাত্র যাদুকর ছাড়া কেউ পারে না। আর ওরা অদৃশ্য হয়ে যে দিব্বি হাঁটতে চলতে পারে সে তো ম্যাজিক শো-তেই দেখলি? ভদ্রমহিলা মঞ্চ থেকে অদৃশ্য হয়ে আবার তাঁর নিজের জায়গাতেই গ্যাঁট হয়ে বসে গেল।

-যাদুকর পারে আর বিজ্ঞান পারে না? বিজ্ঞান তো সবচেয়ে বড় যাদুকর মামা?

মামা সে কথার উত্তর না দিয়ে বলল, তবে মানুষ অদৃশ্য হয়ে কি করে সেটা একটা বই পড়লে জানতে পারবি।

-কি বই?

-সেটা হল এইচ জি ওয়েলসের লেখা একটা উপন্যাস ‘দি ইনভিসিবল ম্যান’ বা অদৃশ্য মানুষ। সেখানে একজন মানুষকে এক বিজ্ঞানী অদৃশ্য করে দিয়েছিলেন। আর তারপর সে এক রোমহর্ষক মজার কান্ড। সেটা নিয়ে সিনেমাও হয়েছে অনেক। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায়। হয়েছে গল্প-উপন্যাস-থিয়েটার হাসি কত কিছু।

-সত্যি সত্যি কেউ অদৃশ্য হয়েছিল? নাকি বানিয়ে বানিয়ে-

-তুই ঠিক ধরেছিস। মামা বলল, বানিয়ে বানিয়ে। আরে এটা গল্প তো, বানিয়ে নয় তো কি হবে বল তো? লেখক কল্পনা থেকে এই গল্প বানিয়েছিলেন।

- ও তার মানে কল্পগল্প?

-আরে না না এটা ছিল কল্পবিজ্ঞানের গল্প মানে সায়েন্স ফিকশন। এতে শুধু গল্পই নেই বিজ্ঞানও আছে।

-বিজ্ঞান? এতে আবার কি বিজ্ঞান থাকতে পারে মামা এ তো স্রেফ গাঁজাখুরি। মানে যাদুকরেরা যেমন গিলি গিলি হোকাস পোকাস করে মানুষকে ধোঁকা দেয় এ তেমনি। একটা অদৃশ্য মানুষ যাকে দেখা যায় না শুধু দেখা যায় তার কোটপ্যান্ট আর জুতো? সেই কোটপ্যান্টের ভেতরে ফাঁকা বাতাস ছাড়া আর কিছু নেই। আচ্ছা বল মামা এ কি হতে পারে? আমার মনে হয় এটা ফ্যান্টাজি। মানে এর মধ্যে কোনও সত্যি নেই। কিন্তু বিজ্ঞান তো সত্যি হয় মামা?

-না সত্যি আছে। মামা দৃঢ়স্বরে বলল, সত্যি আছে। যাদুকরের মত এটা কোনও ছু মন্তর ভোজবাজি নয়। তবে-

-কি তবে? এই দেখ তুমি আবার হোঁচট খেলে।

-দেখ উদ্দীপ্ত, এই যে কল্পবিজ্ঞান এতেও একটা বিজ্ঞান থাকে। বরং বিজ্ঞানের থেকে আরও কিছু এগিয়ে থাকা বিজ্ঞান। তার বেশ কিছুটাই কল্পনা দিয়ে গড়া। যা এখন সম্ভব হচ্ছে না কিন্তু পরে হতেও পারে। এ জগতে স্থির বা অপরিবর্তনীয় বলে কিছু নেই।

-তা এর মধ্যে বিজ্ঞানটাই আগে বল মামা পরে নাহয় পরেরটা দেখা যাবে। সত্যি কি মানুষের পক্ষে অদৃশ্য মানুষ তৈরি করা যায়?

-বিজ্ঞানের দুটো ভাগ আছে। একটা হল তত্ত্বগত আর একটা হল ব্যবহারিক। কিছু কিছু এমন বিজ্ঞান আছে যা তত্ত্বগতভাবে ঠিক কিন্তু কার্যত সম্ভব নয়। অদৃশ্য মানুষের ব্যাপারটা কতকটা তাই।

-অর্থাৎ তুমি স্বীকার করছ অদৃশ্য মানুষ তৈরি করা যায়?

-স্বীকার করছি। আবার সেই সঙ্গে অস্বীকারও করছি। একটা কথা জানবি আমাদের এই মহা জগতে দুটো জিনিস আছে। একটা হল কারণ আর একটা কার্য। জগতের যা কিছু ঘটনাই ঘটছে তা সবই এই কার্য-কারণের গেরোয় বাঁধা। একটা ইট যদি  তোর মাথায় আলতো করে বসিয়ে রাখে কেউ তো তোর তেমন কিছুই হবে না। বড় জোর মাথায় একটু বেশি চাপ লাগবে এই যা।

কিছু বলল না উদ্দীপ্ত। চুপ করে শুনে গেল।

-কিন্তু সেই ইটটাকেই যদি কেউ আস্তে করে দোতলা বা তিনতলা থেকে কেউ আলতো করে ছেড়ে দিলে তোর মাথা ফেটে চৌচির হয়ে যাবে। মানে কারণ যেমন হবে কার্য তেমন হবে। প্রথম কারণটা ছিল ইটটা আলতো করে তোর মাথায় বসিয়ে রাখা। আর দ্বিতীয় কারণটা ছিল সেটা দোতলা থেকে আলতো করে ছেড়ে দেওয়া। দুটো ক্ষেত্রেই কিন্তু যে এ কাজ করেছে সে অতিরিক্ত কোনও বল প্রয়োগ করে নি। অদৃশ্য মানুষের ব্যাপারটা ঠিক তাই। তাত্ত্বিক দিক থেকে করা যায় কিন্তু ব্যবহারিক দিক থেকে করা যায় না। এই কার্য-কারণের গেরো আর কি।

-মামা প্লিজ একটু বুঝিয়ে বল না।

-তার আগে তুই বল কোনও জিনিসকে মানুষ দেখতে পায় কখন?

-এ তো ভারি সোজা। দেখতে পায় তখন যখন বাইরে থেকে আলো তার ওপর পড়ে ঠিকরে আসে আমাদের চোখে। চোখের রেটিনা একটা সংবেদনশীল পর্দা। এর পেছনে আছে দর্শন অনুভূতি জাগানো স্নায়ুমন্ডলী যাকে বলা হয় অপটিক নার্ভ। কেন্দ্রীয় স্নায়ুমন্ডলীর প্রথম স্নায়ু এটি।

-ব্যাস ব্যাস হয়েছে। আচ্ছা দেখতে পাই না কখন?

-ঠিক এর উলটো। যখন আলো ঠিকরে পড়ে না বা ঠিকরে পড়া আলো আমাদের চোখে এসে পৌঁছয় না।

-প্রশ্ন হল আলোকে ঠিকরে দেওয়া তো বস্তুর ধর্ম তবে কখন ঠিকরে বেরোয় না?

-আলোর দুটো ধর্ম আছে মামা। একটা ধর্ম অনুযায়ী আলো কোনও বস্তুর ওপর পড়লে কিছুটা ঠিকরে আসে আর কিছুটা বস্তুর ভেতর দিয়ে গলে যায়। এই ঠিকরে বেরিয়ে আসাটাকে বলে প্রতিফলন আর ভেতর দিয়ে গলে ওপাশে চলে যাওয়াটাকে বলে প্রতিসরণ। সর্বদাই কিন্তু প্রতিফলন আর প্রতিসরণ একসঙ্গে হয়। বস্তু যত বেশি অস্বচ্ছ হবে তত তার প্রতিফলন বেশি আর প্রতিসরণ কম হবে। আর যত বেশি স্বচ্ছ হবে তত এর উলটো হবে মানে প্রতিফলন কম আর প্রতিসরণ বেশি হবে।

মামা একটা কাঁচের গ্লাসে একটা লোহার টুকরো রাখল। প্রশ্ন করল, দেখতে পাচ্ছিস লোহাটাকে?

-হ্যাঁ দিব্বি।

মামা লোহার বদলে একটা কাঁচ এনে রাখল কাঁচের গ্লাসের মধ্যে। জিজ্ঞেস করল, দেখতে পাচ্ছিস কাঁচের টুকরোটাকে?

-না তো। কেন মামা?

-আসলে লোহার ওপর আলো পড়ে তা ঠিকরে এসে চোখে পড়ে তাই আমরা তাকে দেখতে পাই। কিন্তু এই কাঁচের ওপর আলো পড়লে প্রায় সব আলোই এর মধ্যে দিয়ে গলে ওপাশে চলে যায়। খুব অল্প আলো ফিরে এসে চোখে পড়ে। কিন্তু সেটা এত কম যে আমাদের চোখে তা দর্শন অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে না আর আমরা তাই দেখতে পাই না। তাই কাঁচের মধ্যে দিয়ে কাঁচকে জলের মধ্যে দিয়ে জলকে আমরা দেখতে পাই না। আবার কাঁচের মধ্যে দিয়ে জলকেও আমরা তেমন পরিষ্কার দেখি না। আবার জলের মধ্যে দিয়ে জলকে একাবারেই দেখতে পাই না।

-কেন মামা?

-আসলে কাঁচ আর জলের প্রতিসরাঙ্ক খুব কাছাকাছি বলে বেশির ভাগ আলো গলে যাবে। ফিরে আসবে খুব কম আলো। আর দুটো কাঁচের আলোক প্রতিসরাঙ্ক যদি একেবারে ঠিকঠাক হয় তবে সব আলো গলে বেরিয়ে যাবে কেউ আর ফিরে আসবে না। প্রতিসরাঙ্কের সামান্য ফারাক হলে খুব অস্পষ্ট ভাবে তাকে দেখা যাবে।

-তুমি ঠিক বলেছ মামা। খুব ভাল ব্যাখ্যা দিলে।

-ধর বাতাসে একটা জিনিস আছে আমরা তাকে দেখতে পাচ্ছি। এইবার সেই জিনিসটার আলোক প্রতিসরাঙ্ক বাতাসের সমান সমান করে দেওয়া হল। তবে কি হবে?

-কি আর হবে সেই বস্তুর মধ্যে দিয়ে আলো সোজা বেরিয়ে যাবে আর কোনও আলো ঠিকরে আমাদের চোখে পড়বে না তাই আমরা সেটাকে দেখতে পাব না। যেমন জলের মধ্যে দিয়ে জলকে আমরা দেখতে পাই না।

-একেবারে সঠিক। তার মানে?

-ওই যে গিলি গিলি হোকাস ফোকাস ফু!! আমরা ভ্যানিস করে দিলুম মামা।

মামা হেসে বললেন, তবে তুই তো হয়ে গেলি সেই যাদুকর যে জিনিসকে অদৃশ্য করে দিতে পারে তাই না?

-হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক।

-তা যদি এই জিনিস একটা মানুষ হয় তবে?

-ইনভিজিবল ম্যান! অদৃশ্য মানুষ!! মামা তোমার তুলনা হয় না। এস আমি তোমায় অদৃশ্য করে দিই।

-কিভাবে করবি?

উদ্দীপ্ত পড়ল ভারি ভাবনায়। অনেকক্ষণ চিন্তা করে বলল, তোমার গোটা শরীরটার আলোক প্রতিসরাঙ্ক পালটাতে হবে। বাতাসের সঙ্গে সমান করতে হবে?

-হ্যাঁ সে তো বটেই।

-কি করে করব মামা সব তো কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি। হিউম্যান বডির খুব জটিল গঠন।

মামা হেসে বলল, না রে এখনও পর্যন্ত এটা বেরোয় নি। শুধু মানুষের কেন কোনও বস্তুরই আলোক প্রতিসরাঙ্ক বাতাসের সঙ্গে সমান করা যায় নি। আর তা যদি করাও যায়-

-মানুষের শরীরের উপাদানের অনুপাত সব লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। মানুষ আর মানুষ থাকবে না তাই না মামা?

-ঠিক তাই তো। মানুষের শরীরের সব উপাদান যদি পালটে যায় তো সে আর মানুষ থাকে কি করে? তাই-

-মানুষকে অদৃশ্য করা যাবে না। তুমি ঠিক বলেছ মামা। মানে এখানে তত্ত্বগত ভাবে করা যাবে কিন্তু ব্যবহারিক ভাবে করা যাবে না। তুমি ঠিক বলেছ। অতএব ইনভিজিবল ম্যান একটা ইউটোপিয়ান আইডিয়া।

মামা ভাগ্নের কাঁধে জোরে চাপড় মেরে বলল, সর্বদা যুক্তির রাস্তায় হাঁটলেই দেখবি বিজ্ঞান কত সহজ। আচ্ছা ধর আমাদের বিজ্ঞান এতদূর এগিয়ে গেছে যে মানুষের শরীরের উপাদানের কোনও পরিবর্তন না ঘটিয়েই আমরা তার প্রতিসরাঙ্ক বাতাসের সঙ্গে সমান করে দিলুম। তাহলে কি আর কোনও বাধা থাকবে?

অনেকক্ষণ চুপ করে বসে ভাবতে লাগল উদ্দীপ্ত। তারপর বলল, আমার মনে হয় তাতেও বাধা থাকবে। হ্যাঁ একটা বাধা থাকবে। কিন্তু কি যে বাধা আমি ঠিক বলতে পারছি না।

-যুক্তির রাস্তায় পা ফেল তবে ঠিক রাস্তা খুঁজে পাবি। ভেবে দেখ আমাদের শরীরের সমস্ত উপাদানের প্রতিসরাঙ্ক বাতাসের সঙ্গে সমান হয়ে গেছে। আর-

-আর বাইরে থেকে আলো এসে আমাদের গায়ের ভেতর দিয়ে সোজা গলে বেরিয়ে যাচ্ছে। কিছুমাত্র ঠিকরে গিয়ে কারোর চোখে পড়ছে না। তাই তারা দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু এবার-এবার-

-হ্যাঁ হ্যাঁ বল বল? এবার?

চুপ করে রইল উদ্দীপ্ত। কিছুতেই যেন যুক্তির রাস্তায় পা ফেলতে পারছে না।

-মানুষ দেখে কোন অঙ্গ মানে অর্গান দিয়ে উদ্দীপ্ত?

ভাগ্নের চোখ অমনি উজ্জ্বল হয়ে উঠল, চোখ চোখ। বাইরে থেকে আসা সমস্ত আলো তার চোখের লেন্সের মধ্যে দিয়ে রেটিনায় একটা বিন্দুতে মিলিত হয়। সেই মিলিত বিন্দুগুলো সাজিয়ে সাজিয়ে একটা প্রতিবিম্ব তৈরি হয় বস্তুর তাই আমরা দেখি। কিন্তু- কিন্তু মামা সে যে অতি ভয়ঙ্কর!

-হ্যাঁ হ্যাঁ ভয়ঙ্কর। সত্যির রাস্তা তো ভয়ংকরই হয়। কিন্তু ভয়ঙ্কর হলেও ভাবতে হবে বৈকি। না ভাবলে যুক্তির রাস্তা খুঁজে পাবি কি করে? যুক্তি যে পথ হারাবে।

-আমাদের চোখ মানে লেন্সের উপাদানের তো একই অবস্থা হবে মানে আলো তার মধ্যে দিয়ে ঢুকে সোজা বেরিয়ে যাবে। রেটিনায় তো মিলিত হবে না মামা?

-বটেই তো। তাই বস্তুর প্রতিবিম্ব আর তৈরি হবে কি রেটিনায়?

-না একেবারেই না। তার মানে – মামা আমি আর ভাবতে পারছি না।

-কিন্তু ভাবতে তো তোকে হবেই উদ্দীপ্ত। অদৃশ্য মানুষ হয় কিনা তুই জিজ্ঞেস করেছিলি এখন হলে কি হয় সেটা তো তোকেই বলতে হবে?

ভাবতে ভাবতে শিউরে উঠল উদ্দীপ্ত। বহুক্ষণ পরে বলল, অদৃশ্য মানুষ যে নিজের দৃষ্টিশক্তিও হারাবে মামা?

মামা মিটি মিটি হেসে শুধু মৃদু মৃদু মাথা দোলাতে লাগলেন।  

                                                          

  

সূচিপত্র

কল্পবিজ্ঞান

গল্পবিজ্ঞান

বিজ্ঞান নিবন্ধ

পোড়োদের পাতা


Copyright © 2011. www.scientiphilia.com emPowered by dweb