কম্বোজারোহী

লেখক - ডঃ শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়

                                           

গভীর অন্ধকার মসের অরণ্যে দিনের আলো সরাসরি প্রবেশ করে না। ঘন সবুজ লম্বা লম্বা পাতার বাইরের দিকে যেটুকু সূর্যের কিরণ পড়ে, তাতে জঙ্গলের ভিতরটা একটা অপার্থিব সবুজ আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে থাকে। সন্ধ্যা নামলে অবশ্য পুরোটাই ঘন কালো আঁধার। এ পাতা সে পাতায় গড়াগড়ি খেয়ে নীচে নামতে থাকা টারডান অবশ্য সে সবুজ আলো চোখে দেখে না। শুধু সে কেন, ওদের গোষ্ঠীর কেউই কোনো রঙ কোনোকালে দেখেনি। ওদের দুনিয়া সাদাকালো। ধূসর আর হালকা ছাইরঙের কত আভা যে হতে পারে, টারডানদের চোখ সে খবর রাখে। আপাতত সামনে যে লম্বা ছায়াটা আট হাত-পা দোলাতে দোলাতে টারডানের সামনের পাতায় অবতীর্ণ হল, সে হচ্ছে টার্ডিগ। টারডানের ছোটবেলার বন্ধু ছাড়া টার্ডিগের আরেকটা পরিচয় হচ্ছে, সে ওদের গোষ্ঠীর 'আপাতত' দলপতি। আসল দলপতি টার্ডিগের বাবা দিনকয়েক হল সমাধিদশায় গেছেন। এখন দায়িত্ব টার্ডিগের কাঁধে। টারডানের কাছে তার আসার উদ্দেশ্য হল, নীচের নয় নম্বর পাতার আলোচনাসভায় টারডানকে নিয়ে যাওয়া।

নীচের পাতার আলোচনাসভাটা কিসের জন্য ডাকা হয়েছে তার কিছুটা টারডান আন্দাজ করতে পেরেছে। টারডানদের অনেক প্রজাতি। জগৎ জুড়ে আছে তাদের একজাতি, সে জাতির নাম টার্ডিগ্রেড-জাতি। আশ্চর্যজনকভাবে, এই যে আন্দাজ করা বা কোনো বিষয় নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা করা, অথবা এই গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে জীবনযাপন, এইসব গুণগুলো কিন্তু টারডানদের অন্য প্রজাতিগুলোর বা ওদের প্রজাতির‌ই অন্য গোষ্ঠীর মধ্যে একেবারে নেই। বাইরের বড় দুনিয়া থেকে একদা অদ্ভুত এক সাদা আলো এসে ওদের গোষ্ঠীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারপর থেকেই টারডানদের হালচালে আমূল পরিবর্তন ঘটে যায়। এমনিতে ওদের মাথা জটিল থেকে জটিলতর বিষয় নিয়ে ভাববার জন্য একেবারেই তৈরি ছিল না। কিন্তু ঐ ঘটনার পর থেকে ভাবনার সূত্রপাত। চিন্তার উৎপত্তি এবং বিষয় বিশ্লেষণ করে দেখার কৌশল-প্রাপ্তি। সেইসঙ্গে আজকাল জুড়েছে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা। সবমিলিয়ে টারডানদের দুশোজনের এই উপনিবেশ এখন বাইরের বড়দুনিয়ার সবচেয়ে উন্নত যে প্রাণী, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলার মত শক্তি অর্জন করেছে। দৈহিক শক্তি নয়, মানসিক, যাকে বলে--- মগজাস্ত্র। আশ্চর্য ক্রিপ্টোবায়োলজিক ক্ষমতার অধিকারী টার্ডিগ্রেডরা আগে ছিল‌ই। সেদিনের সেই তেজস্ক্রিয় সাদা আলো ওদের যেন আরো অদ্ভুত এক প্রাণীতে পরিণত করেছে। অবশ্য ডিএন‌এ-র কোন্ বাঁকের কোন্ ক্ষারে কী রকম আচমকা আঘাত হেনেছে সেই আলো, তার খবর রাখা ওদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। টারডান এবং তার দলের অনেকে যেটা দেখেছে, সেটা আরো ভয়ঙ্কর একটা ভবিষ্যৎ ডেকে আনতে পারে বলে মনে হয়েছে তাদের। আলোচনাটা সেই জন্যই।

সেকালের সেই আলোর আঘাতে প্রকৃতপক্ষে টারডানদের এই গোষ্ঠীটা দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে। দশজন সমাধি নিয়েছিল তৎক্ষণাৎ। পাঁচজন আলোর আঘাতে একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছিল। কোনোক্রমে যারা টিকে ছিল তারা হচ্ছে এই টারডানদের দলটা। এরপরে কিছু সময় কেটে গেছে। সমস্যা দেখা দিল সেই দশজনের সমাধি ভাঙার পরে। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে টার্ডিগ্রেডদের জীবনচক্রে এই সমাধিদশা সংযোজন হয়েছে স্মরণাতীত কাল থেকেই। এই সমাধির গুণেই এরা জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করে বেড়ায়। লক্ষ কোটি মূহুর্ত পার করেও ওঠে বেঁচে, এবং শুধু তাই নয়, খুব তৎপরতার সাথে বংশবিস্তার করতে থাকে। আরো অনেক টার্ডিগ্রেডদের মত‌ই এই দশজন‌ও একটা সময় সুযোগ বুঝে সমাধিদশার ঘোর কাটিয়ে বাইরে আসে। বাইরের দিক থেকে সেই সময় এই মসারণ্যে মুহুর্মুহু আছড়ে পড়ছিল তরল জলের বিপুলায়তন সব গোলা! ট্রিহ্যালোজের কঠিন যে আস্তরণ ওদের অঙ্গ এবং তন্ত্রগুলো আবৃত করে রেখেছিল নিঁখুত নৈপুণ্যে, সেই আস্তরণ ধীরে ধীরে দ্রবীভূত হল অরণ্যের আর্দ্র আবহাওয়ায়। আলোর তেজে ভাগ্যক্রমে রেহাই পাওয়া সমাধি-প্রোটিন ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে আর তখনই মাংসপেশী আর স্নায়ুর সংযোগ চালু হয়। একখণ্ড খনিজের টুকরো থেকে প্রথমে কিশমিশ, তারপর আঙুরে পর্যবসিত হয় প্রাণীগুলো। আটটা হাত-পায়ে ফের ফিরে আসে সাড়। গোটা গা দিয়ে ওরা শ্বাসবায়ু নিচ্ছিল, স্বাভাবিকভাবেই। অবাক হয়ে এই পুরো ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করছিল টারডান, টার্ডিগ, তার বান্ধবী টার্ডিগা, এবং আরো জনাবিশেক টার্ডিগ্রেড। আগে কোনোদিন তারা দেখে নি সমাধিভঙ্গের পরবর্তী ধাপগুলো। ঠিক তার কিছুক্ষণ পরেই ঘটল ঘটনাটা।

প্রথমে চার হাত-পা বুকের কাছে জড়ো করে দশজনের তিনজন একটা অদ্ভুত নাম উচ্চারণ করে উঠল: হে দ্রুতপদ বিরাট। আনুগত্য, হে দ্রুতপদ বিরাট। আশীর্বাদ করবেন, আপনারা যা চাইছেন, যেন তাই ঘটাতে সমর্থ হ‌ই।

টারডানদের মধ্য থেকে কেউ একজন ঐ তিনজনের উদ্দেশ্যে বলে উঠল, 'হে অতিমন্থর টার্ডা, শ্লথগতি টার্ড এবং ভল্লুকপদ টার্ডাগ, আপনারা  বিরাট বলে কাকে সম্বোধন করছেন? কাদের উদ্দেশ্যে আপন আনুগত্য জ্ঞাপন করছেন? কার কাছে চাইছেন‌ আশীর্বাদ?'

ভল্লুকপদ টার্ডা বলেছিল, 'টার্ডিগ, তোমরা মহামূর্খ! চোখের সামনে স্রষ্টাকে দেখেও চিনতে পারছ না! শীঘ্র প্রদর্শন করো মহামহিম বিরাটকায় দ্রুতপদদের প্রতি আপন আনুগত্য! ওরা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য বুঝিয়েছে। একটা বিশেষ কারণে আমরা এই জগতে এসেছি।'

অতিমন্থর টার্ডা তারপর চিৎকার করে জানায়, 'টার্ডিগ্রেড জাতি হিসেবে আমরা সর্বত্র বিরাজমান। জলে-স্থলে-ফলে-ফুলে-পাতায়। এই সব জিনিস বিরাটকায়েরা খায়, আমাদের নিয়েই, তবু কোনোদিন কোনো দ্রুতপদ বিরাটকায়ের ক্ষতি করেছি কি আমরা? অত সাহস আমাদের ছিল না। কিন্তু সাদা আলো ফেলা দ্রুতপদ বিরাট এবার আমাদের অসীম ক্ষমতার অধিকারী করেছে। আমাদের হাতে রয়েছে ইচ্ছেমত পরজীবী পোষার ক্ষমতা। আমাদের পুনর্জাগরণের উদ্দেশ্য‌ই হচ্ছে, সেই পোষা পরজীবীর সাহায্যে বাছাইকরা কিছু বিরাটকায়দের ধ্বংস করা।'

'কী সাংঘাতিক!' আর্তনাদ করে উঠেছিল টার্ডিগা।‌ ওদের ভিড়ে কারো মুখে আর কথা সরে নি। আরো কিছুক্ষণ ভাষণ চলার পরে স্পষ্ট হয়েছিল ব্যাপারখানা। বাইরের দুনিয়ার বিরাটকায় দ্রুতপদদের এই তিনজন তাদের জীবনের অধিশ্বর বলে মেনে নিয়েছে। তারা চায় টার্ডিগ্রেডদের অতীব শক্তিশালী মারণাস্ত্রে রূপান্তরিত করতে। সাদা আলো ফেলে এই তিনজনের মধ্যে তারা জন্ম দিয়েছে উদগ্র বিষের। বিষের নিয়ন্ত্রণ রাখবে বিরাটকায়েরা। এবং সেই বিষের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে চক্ষের নিমেষে।

সেসময় টার্ডিগ প্রথম প্রশ্নটা তুলেছিল, 'মাত্র তিনজন মিলে তোমরা পারবে, পারবে বাইরের বিরাট দুনিয়ার তাবৎ প্রাণের অস্তিত্বের পক্ষে বিষ হয়ে দাঁড়াতে?'

একটা মোহগ্রস্ত বিনবিনে সুরে জবাব দিয়েছিল শ্লথগতি টার্ড, 'পারব না? আমাদের ডিম পারবে, ডিম পাড়বি তোরা! কিরে, পাড়বি না? ঈশ্বরের অভীষ্ট বলে কথা!'

স্পষ্টতই, এইরকম জবাবের পরে টার্ডিগা এবং বাকি স্ত্রী-টার্ডিগ্রেড, অন্তত যাদের শরীরে পরিপুষ্ট স্ত্রীজননতন্ত্র উপস্থিত ছিল, তারা গড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করেছে। ঐ বিষ নিজের ডিমে ধারণ করে বংশানুক্রমে ছড়িয়ে দেবার অর্থ, সমগ্র উপনিবেশ ক্রীতদাস হয়ে যাওয়া। কে বলতে পারে, একটা গোটা জাতি‌ই হয়ত লোপ পেয়ে যেতে পারে এই বিষাক্ত চৈতন্যের প্রভাবে। কিন্তু অনেকেই বাঁচতে পারে নি সেসময়। মন্থরের চাইতেও মন্থর গতি যে টার্ডিগ্রেডদের, সেই তাদের প্রজাতির এই তিন বদলে যাওয়া টার্ড যে কিভাবে অত দ্রুতগতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আর কামড়ে ধরেছিল স্ত্রী-টার্ডিগ্রেডগুলোর ঘাড়, তা বর্ণনার অতীত। মসের গভীর অরণ্য তোলপাড় করে আরো গভীরে ওদের টেনে নিয়ে গেছিল ঐ তিন সাক্ষাৎ দুশমন। একসময় সব শব্দ মিলিয়ে থেকে গেছিল কেবল কয়েকটা ছায়া আর তাদের যন্ত্রণাময় নীরবতা।

সেই ঘটনার পর এই আলোচনাসভা। টারডানদের দলের সকলেই জড়ো হয়েছে। টার্ডিগ চারটে হাত-পা ছড়িয়ে খানিকটা বুকে ভর দিয়ে দাঁড়ায়। গাছের ছালের এক টুকরো ওর চোষক থেকে ফেলে দিয়ে বলে, 'আমি একটা উপায় ভেবেছি। আমরা পালাব। এই মসের জঙ্গল পেরিয়ে পালাব। একটা এপাশ-ওপাশ দেখা যায় এরকম পাঁচিল আছে। সেটা টপকাতে হবে।'

অপেক্ষাকৃত বয়স্ক এক টার্ড বলে ওঠে, 'পালিয়ে যাবে? তাহলে ডিমগুলোর কি হবে? বিষ ফুটে বেরিয়ে এল বলে!'

টার্ডিগ জানায়, 'সংখ্যায় যতক্ষণ ওরা না বাড়ে, ততক্ষণ ওদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে না। এই উপনিবেশে ঐ বিষ ছড়াতে দেয়া চলবে না। আমরা ওদের নাগাল থেকে পালাব এবং তার উপায় আমি এর মধ্যে ভেবে নিয়েছি।'

টার্ডিগ যাদের দেখেছিল, তারা হচ্ছে কিছু কম্বোজী প্রাণী। ক্যালশিয়াম কার্বোনেটের শক্ত কবচে মোড়া থকথকে জেলির মত দেহ তাদের। মসের জঙ্গলের খুব কাছে এদের কয়েকজন কিছুকাল হল অতীব ধীরগতিতে পদচারণা করছিল। টার্ডিগের পরিকল্পনা হচ্ছে এদের পিঠে চড়ে পালানো। টার্ডিগ্রেডদের অতি মন্থরগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওদের উপযুক্ত বাহন হতে পারে একমাত্র এই কম্বোজী প্রাণীগুলো।

পরিকল্পনা শুনে টারডান বলল, 'আর ওরা টের পেলে?'

'আমরা তার আগেই পাঁচিলের কাছে পৌঁছে যাব', টার্ডিগ বলল, 'এখন‌ই। আমি পাতার গলি দেখে রেখেছি। ইতোমধ্যে আমরা পাঁচিলের অনেক কাছে এসে গেছি। দেহ ফুলিয়ে এবং কুঁচকিয়ে সবাই শ্বাসবায়ু নিতে থাকো।' আসলে পরিকল্পনা, আলোচনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কাজ করার মধ্যে কালবিলম্ব করতে শেখেনি এই দলটা এখন‌ও। তাই ভাবার সাথে সাথেই কাজ করে ফেলে।

পাঁচিলের কাছে পৌঁছতে বেশি সময় লাগেনি এই দলটার। নিজের নিজের নক্সাকাটা অদ্ভুতদর্শন কবচ পিঠে নিয়ে দানবাকার প্রাণীগুলো এত আস্তে চলছিল যে টার্ডিগ্রেড বাদে অন্য কোনো বিরাট প্রাণীদের মনে হবে, ওরা থেমেই আছে। কিন্তু টারডানদের মস্তিষ্ক যে জড়ত্বতন্ত্রের কল্পনা করে, তার সাপেক্ষে এই প্রাণীগুলো যথেষ্ট জোরে হাঁটছে। ওদের কাজ বলতে পাঁচিলের ওপারে দেহের অর্ধেকের বেশিটা মেলে ধরা। বাকি কাজটা করে দিল বাইরের দমকা হাওয়া। প্রায় সকলেই উড়ে গিয়ে জুড়ে বসল কোনো না কোনো কম্বোজীর পৃষ্ঠদেশে।

আর তখন‌ই টারডানরা যেন আঁতকে উঠে দেখল--- ঐ তিন মূর্তিমান লাফিয়ে নেমেছে ওদের‌ই পাশে, একটা কম্বোজীর পিঠে। বংশবিস্তারের উদ্দেশ্যে, এবং তার থেকেও বেশি চেষ্টা করছে ওদের ঈশ্বরের হুকুম তামিল করতে। ওরা যেন পণ করেছে এই দলের কারো পিছু ছাড়বে না! বিষাক্ত করে তুলবে আকাশ-বাতাস। ক্লেদাক্ত করে তুলবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।

একটা উল্লম্ব দেয়ালের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল কম্বোজীদের দলটা। উপরের একটা কবচে বসে বিষাক্ত দৃষ্টিতে নীচের কবচে তাকিয়ে ছিল তিন মূর্তিমান। সুস্থ উপনিবেশটার নাগাল পেতে হলে ওদের নীচের কম্বোজীটার জেলিময় দেহ টপকে আসতে হবে। ওরা যেরকম গতিলাভ করেছে, তাতে ওদের পক্ষে এটা অসম্ভব কিছু ছিল না। কিন্তু তারপরেই ঘটল আরো চমকপ্রদ একটা ঘটনা।

জেলি যে শুধু জেলি নয়, ঢাকা আছে চটচটে একরকম স্লাইমে, সেটা কেউই জানে না। এবং সেই স্লাইমের স্পর্শে টার্ডিগ্রেডদের কি হাল হবে, তাও ওদের জানা ছিল না। এখন টারডানরা অবাক হয়ে দেখল, লাফ দিয়ে এসে তিন বিষাক্ত প্রাণী ডুবে মিশে যাচ্ছে ঐ জেলিতে! মিশে যাচ্ছে মানে একেবারেই মিশে যাচ্ছে। সমাধিদশায় যাবার মত কিছু নয় সেটা। দেহের সহস্র কোষ একসাথে ফেটে বেরিয়ে এল কোষরস! মুহুর্ত লাগল ঐ মূর্তিমান শয়তান তিনটের মরে যেতে। ঘটনায় হতচকিত হয়ে পড়লেও টার্ডিগ সবাইকে সাবধান করে দিল, 'খবর্দার! জেলি ছোঁয়া যাবে না! কিছুতেই না! শক্ত খোলার উপরে আটকে থাকো। যখন কবচ থেমে যাবে, তখন আমরা নতুন জায়গায় গড়িয়ে নেমে যাব।

কম্বোজীর দেহে যখন চিরদিনের মত মিশে যাচ্ছিল সাদা আলোর আঘাতে জন্ম নেয়া তিন বিষাক্ত মূর্তিমান, তখন তাদের হিংস্র চোখের দিকে তাকিয়ে দেখছিল টারডান। সেই দৃষ্টিতে পরাজয়ের গ্লানির পরিবর্তে বিজয়ের আত্মতুষ্টি দেখেছিল সে। অন্ততঃ তার মস্তিষ্ক তাকে তাই বোঝাচ্ছিল। ওর জানা ছিল না, নেপথ্যে আর একটি প্রাণীও এইরকম আত্মতুষ্টিতে ভুগছিল। সে হচ্ছে ওদের অনুমিত বিরাটকায় দ্রুতপদ ঈশ্বর। পরিত্যক্ত, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বোমার আঘাতে ভেঙে পড়া, একদা জগদ্বিখ্যাত এক ল্যাবরেটরির খোলা বারান্দায় এককোণে বসে জৈব মারণাস্ত্রের মাস্টারমাইন্ড সেই প্রাণীটা মাইক্রোস্কোপ দিয়ে লক্ষ্য করছিল ঘন মসে-ছাওয়া পেট্রিডিশের প্রতি মিলিমিটারে। কয়েকটা টার্ডিগ্রেডের বাচ্চা ছিল সেখানে। এত কম পপুলেশন দিয়ে কিছুই হবে না বুঝে রাগে গজগজ করতে করতে পেট্রিডিশটা ছুঁড়ে ফেলল সে বারান্দা থেকে বহুদূরে রাস্তায়। আর কাচের কিনারা ফেটে তার ভিতর থেকে কিলবিলিয়ে বেরিয়ে এল বিষাক্ত বাচ্চাগুলো। মিশে গেল ওদের অন্য কোনো প্রজাতির উপনিবেশে স্থানীয় নর্দমার বুকে। এবার বাকি পরীক্ষা চালাবে বিরাটকায়ের চাইতেও বিরাট, প্রকৃতি নিজে।

                                              

সূচিপত্র

কল্পবিজ্ঞান

গল্পবিজ্ঞান

বিজ্ঞান নিবন্ধ

পোড়োদের পাতা


Copyright © 2011. www.scientiphilia.com emPowered by dweb