সমুদ্রের কিছু অদ্ভুত বাসিন্দা

লেখক - ড. শতাব্দী দাশ

                                              

সমুদ্র নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। একদিকে সে যেমন রত্নাকর, অন্যদিকে জীববৈচিত্রের এক বিশাল ভান্ডার রয়েছে তার অন্দরে। এই জীববৈচিত্রের মধ্যে বড় অংশই হল বিভিন্ন রকমের সামুদ্রিক মাছ।  এর মধ্যে অনেক মাছ ই বেশ অদ্ভুত দর্শন। এইরকম কয়েকটি প্রাণী ও মাছের সঙ্গে আসুন একটু পরিচয় করা যাক।

১) অ্যাঙ্গলার মাছ (Angler fish): এটি খুব ভয়ঙ্কর দর্শন একটি সামুদ্রিক মাছ।  এদের মুখের সামনের দিক থেকে একটি রডের মত অংশ বের হয়। ওই অংশের শেষ মাথায় একটি অঙ্গ থাকে, যাতে আলো সৃষ্টিকারী লক্ষ লক্ষ একরকম ব্যাক্টিরিয়া থাকে। ওই আলোতে আকৃষ্ট হয়ে শিকার চলে আসে মাছের মুখের সামনে।  অ্যাঙ্গলার মাছকে কষ্ট করে শিকার ধরার জন্য শক্তিক্ষয় করতে হয় না। শিকার এসে তার মুখে আপনিই ধরা দেয়।
এই মাছের পুরুষগুলি অনেক সময় পরজীবী প্রকৃতির হয়। এরা আকারে তুলনায় বড় স্ত্রী মাছের গায়ে দাঁত দিয়ে আটকে থাকে এবং তাদের রক্ত থেকে সমস্ত পুষ্টি উপাদান নিজের দেহে শোষণ করতে থাকে।  পুরুষ মাছের বিভিন্ন অঙ্গগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।  তাদের ত্বক এবং রক্তজালকগুলি প্রধানত কাজ করতে থাকে । স্ত্রীমাছ প্রজননের কাজে এই পুরুষ মাছ কে ব্যবহার করে।

২) ভ্যাম্পায়ার স্কুইড: এটি একটি ছোট  শামুক জাতীয় (Cephalopod) প্রাণী। উষ্ণ এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের সমুদ্রের গভীরে এদের দেখা যায়। এদের দেহে বেশ কিছু আলোক উৎপাদনকারী (luminescent) অঙ্গ আছে।  এরা সমুদ্রের জলে ,যেখানে অক্সিজেনের পরিমাণ খুব কম,  সেখানেও বেঁচে থাকতে পারে। এদের পিঠের দিকে প্রথম দু -জোড়া বাহুর মধ্যে লম্বা লম্বা শুড়ের মত অংশ থাকে, যা দিয়ে এদের অক্টোপাস ও স্কুইডের থেকে আলাদা করা যায়। এরা লম্বায় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এদের চোখগুলো হয় লাল বা নীল।  এদের আটটি বাহু একটি চামড়া দিয়ে যুক্ত থাকে। প্রতিটি বাহুতে থাকে মাংসল কাঁটার মত অংশ। এরা পচা জিনিসপত্র খায়। অন্যান্য সেফালোপোডের মত এদের দেহে ক্রোমাটোফোর (pigment organ) খুবই দুর্বল। তাই এরা অন্যান্য সেফালোপোডের মত ত্বকের রং পরিবর্তন করতে পারে না। এদের দেহে কালির থলি (ink sac) ও নেই।  প্রতিটি বাহুর সামনের অংশে আলোক উৎপাদনকারী অঙ্গের মাধ্যমে এরা শিকার কে আকৃষ্ট করে।

৩) মেগামাউথ শার্ক : এরা হল গভীর সমুদ্রে বসবাসকারী একধরণের হাঙর। ১৯৭৬ সালে প্রথম এটিকে দেখতে পায় মানুষ।  এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ টি এই হাঙর দেখা গেছে। এদের মাথা, বিশেষত মুখ অংশটি বিশাল বড় হয়। এরা সাঁতার কাটার সময়ে বিশাল মুখটি  খোলা থাকে। ফলে প্ল্যাঙ্কটন এবং জেলিফিশ মুখের মধ্যে প্রবেশ করে। এদের শরীরের ওপরের অংশ কালচে বাদামী, পেটের দিক সাদা। লেজের একটি ভাগ বড়। এরা খুব ভাল সাঁতারু নয়। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ ফুট অবধি হতে পারে। ওজন ১০০০ কেজির বেশি হয়। এদের দেখা যায় প্রধানত উত্তর জাপান, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ,  ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন্স, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইকুয়েডর অঞ্চলের সমুদ্রে। সমুদ্রের ৩২৮০ ফুট গভীরতা অবধি এরা থাকতে পারে। এদের ওপরের চোয়ালে এবং নীচের চোয়ালে সারিবদ্ধ তীক্ষ্ণ দাঁত দেখা যায়। এদের মুখের হাঁ ৪-৪.৫ ফুট হতে পারে। এরা ডিম পাড়ে, কিন্তু ডিম থেকে বাচ্চা মায়ের শরীরের মধ্যে বের হয় (ovoviviparous)। তারপর বাচ্চারা মায়ের দেহের বাইরে আসে।

৪) ফ্লাউন্ডার মাছ (Flounder fish): এই  মাছগুলো হল চ্যাপ্টা মাছের (flat fish)  মধ্যে একটি। এরা সমুদ্রের তলদেশের অধিবাসী। এদের দেহে একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। এদের লার্ভা অবস্থায় শরীরের দুপাশে দুটি চোখ থাকে। কিন্তু একটু বড় হয়ে এরা যখন বাচ্ছা মাছে পরিণত হয়, তখন এদের দুটি চোখ একই দিকে চলে আসে। বড় অবস্থায় এদের দেহের রঙ এমন হয় যে এরা সহজেই সমুদ্রের তলদেশের সঙ্গে মিশে থাকতে পারে (camouflage)।  ফলে অন্য মাছ বা প্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। সমুদ্রের তলা থেকেই এরা খাবার সংগ্রহ করে। এদের দেহের দৈর্ঘ্য ২৫- ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রস্থ হয় দৈর্ঘ্যের প্রায় অর্ধেক।  বর্তমানে সমুদ্রে অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং শিল্প -জনিত দূষণের ফলে এদের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। বর্তমানে মাত্র ৩০ মিলিয়ন মত এই মাছ রয়েছে সমুদ্রে।
আজ এদের নিয়েই গল্প করলাম।  আপনাদের ভাল লাগলে পরে আবার আরও রত্নাকরবাসীদের নিয়ে গল্প করা যাবে।

                                                 
 

 

 

 

 

 

সূচিপত্র

কল্পবিজ্ঞান

গল্পবিজ্ঞান

বিজ্ঞান নিবন্ধ

পোড়োদের পাতা


Copyright © 2011. www.scientiphilia.com emPowered by dweb