গাছে-মানুষে

লেখক - ডঃ শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়

                                                                                     
চিত্রসূত্র – অন্তর্জাল

চুঁচড়ো ক্লাবের সভাপতি ত্রিভুবন পাত্র তিড়িক করে লাফিয়ে উঠলেন, "পোষা গাছ রেখেছেন মানে? গাছ আবার কারো পোষা হয় নাকি মশাই? সে তো আপনা-আপনি গজায় আর সময় ফুরুলেই মরে। আর নড়াচড়াও করে না যে তাকে পোষ মানানোর দরকার পড়ে! তার মানে, আপনি কি বলতে চান, আপনার এই গাছটা হাঁটাচলা করে? অ্যাঁ!"

প্রোফেসর নাড়ুগোপাল মিত্তিরের ল্যাবে বসে আরশোলার দুধ দিয়ে গোলাপের চা খেতে খেতে কথা হচ্ছিল। বাইরে তুমুল বৃষ্টি পড়ছে আর আমি বা ত্রিভুবনবাবু দুজনের কেউই সেদিন ছাতা নিয়ে আসিনি। আসব‌ই বা কেন, সারাদিন ধরে আকাশে তো মেঘের ছিটেফোঁটা ছিল না। আর এদিকে এসেছি এই পাড়ার‌ই মধ্যে চাঁদা তুলতে। দোসরা আগষ্ট আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জন্মদিন উপলক্ষে আমাদের পাড়ার ক্লাবে একটা অনুষ্ঠান হবে, সঙ্গে হবে একটা হাতে-কলমে খাবারে ভেজাল-ধরা শেখানোর শিবির। সেই কারণেই চাঁদা তুলতে এবং আলোচনা করে নিতে এসেছি একমেবদ্বিতীয়ম বিজ্ঞানী নাড়ুগোপাল মিত্তিরের সঙ্গে আর বসতে না বসতেই একেবারে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি।

প্রোফেসর দয়ালু মানুষ, ঘরে অতিথি এলে না খাইয়ে ছাড়েন না বটে, তবে মাঝেমাঝে খাবারটা অতিথিদের পক্ষে হজম করা কিঞ্চিৎ দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। গেলবার যেমন সদ্য আবিষ্কৃত মডিফায়েড স্পীড অয়েলে ভাজা লুচি খেয়ে আমার এক সপ্তাহ গলা-পেট সব জ্বলেছিল। আজ‌ও তাই আরশোলার দুধের চা সাবধানেই চুমুক দিলাম, ও বাবা, দেখি কাপটার গায়ে কি সব লেখা ইংরেজিতে ফুটে উঠল। ভালো করে ঠাহর করে দেখি, লেখা আছে: "ডোন্ট প্যানিক, আই অ্যাম ইজি টু ডাইজেস্ট"! তারপর গোলাপের ফুল না পাতা থেকে কিভাবে না জানি ট্যানিন বলে একটা অণু বার করে তার সঙ্গে আরো কী সব অণু ঘষামাজা করে তার চা বানিয়েছেন জানি না, তবে ঐ আগেরবারের কুমড়োর চায়ের চাইতে স্বাদটা ভালো, সেটা ওনাকে জানালাম। ত্রিভুবনবাবু অবশ্য এসব কিছুই খান নি, কারণ এসব দেখলেই নাকি ওনার গা গুলোয়। সেই কথার প্রসঙ্গে‌ই প্রোফেসর বলেছিলেন যে যদি তাঁর পোষা গাছটাকে দিয়ে ওনার গা হাত-পা একটু মালিশ করে দেয়া যায়, বা চোখেমুখে কয়েক আউন্স তাজা অক্সিজেন গ্যাস দেয়া যায়, তবে মন্দ হয় না; বলা যায় না পাত্রবাবুর গা-গুলানো থেমেও যেতে পারে। বিশেষভাবে এইসব যে একটা গাছ করতে পারে সেটা কারো উপরে পরীক্ষা করতে হবে, খানিকটা এমন মনে করেই তিনি গাছটাকে পুষেছেন। আর সেটা শুনেই ত্রিভুবনবাবুর ঐরকম প্রতিক্রিয়া হল!

নাড়ুগোপাল মিত্তিরের মেজাজ দেখি সেদিন বেজায় খুশি। বললেন, "আহা! ঐ গ্রুট দেখেন নি হলিউডের সিনেমায়, মানে বৃক্ষ-মানব? এ হল সেইরকম ব্যাপার। এর নাম আমি অবশ্য রেখেছি বৃমা, আদর করে ডাকি বিড়িমা। মাঝে মাঝে আদরের আতিশয্যে নামটা আরো সংক্ষেপে হয়ে যায় 'বিড়ি', তবে তাতে অবশ্য সে কিছু মনে করে না।"

"কিন্তু গাছটা হাঁটাচলা করে কিভাবে? মানে আপনার বিড়ির শিকড়ে মাটি দরকার পড়ে না? নিজের শিকড় সম্পর্কে এতটাই উদাসীন সে?" আমি জিজ্ঞেস করি।

প্রোফেসরের মেজাজ আজ এতটাই খুশ যে এরকম বেয়াড়া প্রশ্নেও তিনি চটে গেলেন না। উল্টে আরো ব্যাখ্যা করতে বসলেন, "শিকড়ের আগায় মাটির বিকল্প আটকানো আছে হে! প্রকৃতির মাটির উপাদান সমৃদ্ধ একরকম পলিমার টুপি বানিয়েছি। ওতে আগামী একবছরের ম্যাক্রো আর মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্টস ভরা আছে। তার মধ্যে এমন কন্ট্রোলড্ রিলিজড্ সিস্টেম বানিয়েছি যাতে একবারে নয়, একটু একটু করে ব্যাটা খাবারের জোগান পায়। ফ্লোয়েম বেয়ে সেই খাবার…"

"আর জল?" আচমকা তাঁর ব্যাখ্যায় বাধা পড়ে। এইবারে বাধা দিয়েছেন ত্রিভুবনবাবু। অন্য দিন হলে প্রোফেসর নির্ঘাত কোনো ভিটামিন-ভরা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ নিয়ে তাঁকে তাড়া করতেন, কিন্তু আজ দেখছি সূর্য তো বটেই আলফা-সেন্টারাই পর্যন্ত ঈশানকোণে উঠেছে!

নাতিকে যেমন দাদু স্নেহভরে বোঝান, তেমনি আমাদের তিনি বোঝাতে থাকেন, "আহা! জল ওর জাইলেমে ভরাই আছে যথেষ্ট। কিন্তু সেটা এইচ-টু-ও নয়। ওর মূল গুঁড়ির মাঝে একখান বাক্স বসাতে হয়েছে। সেটাকে জমালয় বলে ডাকতে পারো তোমরা। কারণ এতে ফ্রিজের মত শুধু কম তাপমাত্রা যে করা যায় তাইই নয়, বরং ভয়ানক পরিমাণে চাপ‌ও তৈরি করা যায়।"

আমি ফস করে বলে ফেললাম, "মানে বরফ দিয়ে গাছটা চলে?"

"রাসভ!" প্রোফেসর বললেন। মেজাজটা এক ডিগ্রি চড়েছে বোঝা গেল। "শিরায় শিরায় বরফ জমে গেলে খাবার পৌঁছাবে কি করে? এই বরফ আমাদের পৃথিবীর হেক্সাগোনাল বরফ নয় হে ছোকরা, যাকে তোমরা আইস এইচ বলো!"

ত্রিভুবন পাত্রের মুখ হাঁ হয়ে গেল। "চুঁচড়োয় বসে বসে আপনি নেপচুন থেকে বরফ আনালেন নাকি মশায়?"

প্রোফেসর সোফা ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে ত্রিভুবনের গালে একখানা জবরদস্ত চুমু দিয়ে বসলেন। ব্যাপারটা এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেল যে আমার বুঝে উঠতে বিশ সেকেন্ড সময় লাগল!

"তুমি তো জিনিয়াস পাত্র হে পাত্র!" উল্লসিত হয়ে প্রোফেসর বলে চললেন, "নেপচুন বা প্লুটোর অ্যাটমোস্ফিয়ারে এবং সারফেসে এরকম বরফ থাকার প্রমাণ কিছু পাওয়া গেছে। এটা হচ্ছে আঠারো নম্বর বরফ। মানে, বরফের আঠারো নম্বর দশা। এই দশায় বরফের হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন একেবারে আয়ন মানে চার্জ-ওয়ালা কণা হয়ে গিয়ে বরফটাকে বানিয়ে তোলে সুপার-কন্ডাকটর। এই রকম জিনিস আমার বিড়িমার শিরায় শিরায় আছে বলেই সে এত চটপট সব কাজ করতে পারে। তার ডালপালা, গুঁড়ি, শিকড়, ফুল, ফল—-সবার মধ্যে থাকে একটা কমপ্লিট নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্ক প্রকৃতির দেয়া নেটওয়ার্কের চাইতেও একশোগুণ বেশি শক্তিশালী। তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ওর জাইলেম আর ফ্লোয়েম ফাইবারগুলোকে আমায় গ্রাফিন দিয়ে তাপ্পি মারতে হয়েছে, বুঝলে হে?"

আমি এই তালে জিজ্ঞেস করি, "তাহলে গুঁড়ির মধ্যে থাকা সেই বাক্সটার কাজ কি স্যার?"

প্রোফেসর আমার দিকে ফিরে বললেন, "ওটায় একটা হীরের ভল্ট আছে, মানে হীরে মোড়ানো ভল্ট। তার ভিতরে জলকে আড়াই হাজার মেগাপাস্কাল চাপ দিয়ে বরফ বানানো হয়। এরপর চারপাশ থেকে ঐ বরফে বিশেষ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লেজার ফেলে ওটাকে খেপিয়ে তুললেই আঠারো নম্বর বরফ তৈরি, ব্যস! এটার‌ই ব্যবস্থা করেছি ঐ বাক্সের ভিতরে।"

একটু দম নিয়ে প্রোফেসর আবার বললেন, "কিন্তু জলের সাপ্লাই তো একটা না একটা সময় লাগছেই। সে তোমরা ঠিক জায়গাতেই ধরেছিলে। বিড়ি এই কাজটা করে বাতাস থেকে জল শুষে। তোমরা তো জানোই সাধারণ তাপমাত্রায় একশো ভাগ বাতাসে চার ভাগ জলীয় বাষ্প থাকে। বিড়ির ডালপালার গঠনটা এমন করে বানিয়েছি যে তার চাইতেও বহু কম জলের পরিমাণ থাকলেও সে ঠিক শুঁকে শুঁকে শুষে নেবে। এর জন্য আমায় বহু মাথা খাটিয়ে বিশেষ একরকমের ওয়াটার সেন্সর বানাতে হয়েছে।"

"কিন্তু এমনি বৃষ্টির জল ধরেও তো কাজটা করা যেত", ত্রিভুবন বাবু জানতে চাইলেন। একটু আগে প্রোফেসরের চুমু খেয়ে মনে হয় তাঁর শিক্ষে হয় নি, আমি মনে মনে ভাবি।

"ওহে পাত্র, তুমি ভাবলে কি করে যে আমি বৃষ্টির জল ধরার পাত্র আটকে দিইনি ওর সঙ্গে? প্রতিটি পাতায় স্পেশাল ছ্যাঁদা করাই আছে তার জন্য। ঐসব মডিফায়েড পত্ররন্ধ্র আবার পাহারা দিচ্ছে কোনো রক্ষীকোষ-টোষ নয়। কে আন্দাজ করো তো?"

পাত্র বাংলার ছাত্র, আমি কেমিস্ট্রির। বোটানির ভাষা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল। তাই প্রশ্ন শুনে একে অন্যের দিকে তাকাই। কিন্তু প্রোফেসর যে উত্তরটা জুওলজি দিয়ে দেবেন তা জানতাম না।

"এই মোটা মোটা ধেড়ে ধেড়ে লাল পিঁপড়ের দল। ওরাই পাহারা দেয় পাতার ফুটোর চারপাশে, কারণ ধুলোবালি ঢুকে গেলে বৃক্ষমানবের কোনো নেটওয়ার্ক‌ই কাজ করবে না। এর জন্য অবশ্য ঝাড়া তিন বছর ধরে পিঁপড়েগুলোকে ঝাঁট দেয়া ও পাতা মোছা শেখাতে হয়েছে, সে ভারি ঝক্কির ব্যাপার!"

আমি সভয়ে বললাম, "মানে আপনার গাছ মানে শুধু গাছ নয়, জানোয়ার আর গাছের সহাবস্থান, তাই তো?"

ত্রিভুবন পাত্র খুব উশখুশ করছেন। সত্যিই যদি কেউ এরকম লাল পিঁপড়ে সমেত একটা গাছ কারো মাথা টিপতে লেলিয়ে দেয় তাহলে কি পত্রপাঠ পালানো উচিত নয়? "আমার গিন্নি কি একটা আনতে পাঠিয়েছিল স্যার", এই বলে সোফা থেকে উঠে পড়ার উপক্রম করলেন।

প্রোফেসর মিত্তির শশব্যস্ত হয়ে বললেন, "আহা, সে নয় পরে আনবে, তুমি কি আর ভোলার পাত্র? তুমি হচ্ছো ত্রিভুবনের পাত্র। এতটা যদি শুনলে তো একবার নিজের চোখেই দেখে যাও গাছটাকে? হ্যাঁ, ওকে ডাকছি, বাবা বিড়িমা, ও বিড়ি, বিড়িসোনা, এদিকে আয় বাবা। একবার একটু ফ্রেশ অক্সিজেন দিয়ে যা দিকিনি। তাজা তাজা অক্সিজেন ফুসফুস ভরে নাও তো, কোথায় লাগবে তোমাদের এসি, হুঁঃ!"

দোতলা থেকে একটা দুদ্দাড় আওয়াজ হচ্ছে। কেউ যেন হুড়ুম দুড়ুম করে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামা শুরু করেছে। দুজনেই কাঠ হয়ে সোফায় বসে র‌ইলাম। চলন্ত গাছ আর জ্বলন্ত, মানে কামড়ালে যা জ্বলিয়ে অন্ত করে দিতে পারে, তেমন লাল পিঁপড়ের একটা অদ্ভুত সমন্বয় যেন একটু ঝুঁকে পড়ে আমাদের দিকে দেখছে দোতলার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে। তার দিকে তাকিয়েই আমাদের পিলে চমকে উঠলো। দেড়শো বছরের পুরনো মিত্তিরদের বাড়ির ছাদ অতটা উঁচু বলে তার মাথা ছাদে ঠেকে যায় নি! শালগাছের মত লম্বা, প্রাচীন বটগাছের মত ডালপালা বা ঝুড়ির অন্ত নেই মনে হয়, সবুজ পুরুষ্টু পাতাগুলো প্রায় কলাপাতার মত, মাথায় ইয়াব্বড়ো একটা ঝাঁকা, আর ঐ যে সারা গা বেয়ে ইঞ্চিখানেক লম্বা লাল পিঁপড়ে ওঠানামা করছে সংঘবদ্ধভাবে। শিকড়গুলো সিঁড়িতে আলতো করে ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে সে নেমে আসছে আমাদের দিকে। 'শালপ্রাংশু মহাভুজ‌'-ই বটে!

প্রোফেসর মিত্তির বলে চলেছেন, "গাছ থাকলে পোকামাকড় আর পাখি থাকবে না, তা কি হয় নাকি। আমার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পূর্ণ আর্টিফিশিয়াল নয় যে, এর মধ্যে ন্যাচারাল ইন্টেলিজেন্সের বিষয়টা আমি একেবারে অবহেলা করি নি। কারণ তা করলে, বিড়ি প্রকৃতির মধ্যে এসে বেঘোরে মারা পড়তো। ঐ যে লাল পিঁপড়ের দল, এদের মতো সুসভ্য প্রাণী আর দুনিয়ায় নেই। ঠিকমতো ট্রেনিং দিতে পারলে এরা মানুষের উপর দিয়ে যাবে। বিড়ির শিকড়টা, ইয়ে, মানে বীজটা আসলে আফ্রিকার জঙ্গল থেকে তুলে আনা কিনা, তাই ওর সঙ্গে সবথেকে ভালো খাপ খেয়েছে ওখানকার ডোরাইলাস পিঁপড়ে, সাইজ‌ও ত্যায়সা, এক একখানা দেড় থেকে দুই ইঞ্চি লম্বা। আর্মি অ্যান্ট এমনি এমনি বলে না এদের, দ্যাখো দ্যাখো…ঐ যাঃ! এরা গেল ক‌ই? এখনো তো মাথার উপরের পাখির বাসাটার কথা বলা হল না! আরে ও পাত্র, আমার অলম্বুষ ছাত্রটাই বা কোথায় পালাল!"

আর এক মুহূর্তও কেউ বসে থাকে ওখানে! বাইরে তুমুল বৃষ্টি। তা হোক গে! সদর দরজা দিয়ে দুজনেই ছুটে বেরিয়েছি আর ততক্ষণে প্রোফেসরের বাড়ির ত্রিসীমানা ছাড়িয়ে বড় রাস্তায় এসে পড়েছি ছুটতে ছুটতে।

"বৈজ্ঞানিক বুদ্ধি দিয়ে কেন যে এমন দশাস‌ই গাছ-গাছালি তৈরি করতে যায় মানুষে কে জানে! তার উপর পিঁপড়েগুলো যদি একবার দাঁড়া দিয়ে টুঁটি চিপে ধরে তবে মশাই চুঁচড়ো ক্লাবের সভাপতির স্মরণে আপনাদের পরবর্তী সভা কলতে হত, হ্যাঁ!" আমার পাশে ছুটতে ছুটতে বলছিলেন ত্রিভুবন পাত্র। হাঁফাতে হাঁফাতে দুজনে এসে থামলাম রবীন্দ্রভবনের কাছে ফার্স্ট গ্রাউন্ডের বড় গাছটার নীচে। একটু দম নিয়েছি কি নিইনি, গাছের উপর থেকে, না না, ভুল বললাম, গাছটাই যেন নড়েচড়ে উঠে বলে বসলো, "পুরোটা না শুনে চলে আসা বড় অভদ্রতা, ভয়ানক গর্হিত কাজ।"

বহুদিনের পুরনো গাছটা ঝুড়ি দুলিয়ে আরো কিসব বলেছিল বটে আর তা আমদের দুজনের মনে নেই। কারণ, গাছে কথা বলছে দেখে দুজনের কারোরই বাহ্যজ্ঞান ছিল না বেশ কয়েকঘন্টা। বৃষ্টির মধ্যে বটের গুঁড়ির উপর থম্ মেরে বসে থাকতে দেখে দুজনকে বাড়ির লোকে এসে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে যায় বলে শুনেছি পরে। ত্রিভুবন পাত্রের ভালো জ্বর এসেছিল নাকি। দিনে পাঁচটা করে প্যারাসিটামল খাইয়ে তবে সে জ্বর ছাড়াতে হয়েছিল। সিঙ্কোনা গাছে জ্বর ছাড়ালে, জ্বর বাধিয়ে দেবার মত গাছ‌ও আছে নিশ্চয়ই, এই ভেবে আমি আর এটা নিয়ে পাড়ায় হ‌ইচ‌ই করিনি। গাছটা, থুড়ি বৃক্ষমানবটা, নির্জন রাস্তায় কাউকে ধরে লাল পিঁপড়ে বুলিয়ে দিলে তখন আর কার কাছে অভিযোগ জানাব বলো তো? তোমাদের ভারি আপন ভেবে ঘটনাটা জানিয়ে রাখলাম। প্রোফেসর মিত্তিরের বাড়ি আর যাই হোক পুজোর কেন, কোনো কিছুর‌ই চাঁদা-টাদা চাইতে যেও না।

সূচিপত্র

কল্পবিজ্ঞান

গল্পবিজ্ঞান

বিজ্ঞান নিবন্ধ

পোড়োদের পাতা


Copyright © 2011. www.scientiphilia.com emPowered by dweb