সময়রেখা

লেখক - স্বর্ণেন্দু সাহা

 

                                                   

                                                                                      

লোকটার দিকে একপলক তাকিয়েই পরিমলবাবু বিরক্ত হলেন। অবশ্য বিরক্তিটা বুঝতে দেওয়া চলবে না। হ্যালাফেলা গোত্রের একটা পোশাক গায়ে জড়ানো। চামড়ায় সাবান পড়েছিল শুধু বোধ হয় সেই সাবান আবিষ্কারের দিনেই! দেহ শীর্ণ, দড়ি পাকিয়ে যাওয়া। মুখে, চুলে তেলচিটে ভাব।

"বলুন, আপনি কী কাজ পারেন?"

লোকটা দাঁত বার করে অপ্রস্তুত মুখে হাসল, "আজ্ঞে ছ্যার, আমি ইদিক-উদিক যেতে পারি।"

পরিমলবাবুর মুখে বিরক্তির জায়গা নিল ক্রোধ। লোকটা কি তার সঙ্গে মশকরা করছে? এই কাজের সময়ে… উঁহু, মাথা গরম করা যাবে না। ফিলানথ্রপিস্ট হিসেবে গোটা মহল্লা তাকে চেনে। সেই ভাবমূর্তিতে এতটুকু নোংরা লাগতে দেওয়া যাবে না।

বড় করে শ্বাস নিলেন পরিমল, "এদিক-ওদিক তো সবাই যেতে পারে। একটা তুচ্ছ পিঁপড়েও পারে। পিঁপড়েকে দিয়ে কি আমার কোনও কাজ হবে?"

"মানে ছ্যার," লোকটা গলা চুলকাল, "ইদিক-উদিক বলতে, সময়ের মদ্যে ইদিক-উদিক। এই ধরুন, আগামীকাল, গতকাল, গতবছর, আগামীবছর.."

পরিমলবাবু স্তম্ভিত হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন লোকটার দিকে। তারপর শান্ত স্বরে বললেন, "বেরোন।"

"কিন্তু ছ্যার, " লোকটা কাঁদোকাঁদো হয়ে পড়ল, "একটা কাজের খুব দরকার। খেতে পাচ্ছি নে মোটে। সবাই বলল, এখানে আসতে। আপনে কাজ জুটিয়ে দেন.."

"পাগলদের উপকার করতে বসিনি। বেরোন বলছি!"

লোকটা এবার ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, "বিস্বাছ করুন ছ্যার।"

"এটা কি বিশ্বাস করার মতো কথা?"

"আমার নিজেরই তো বিস্বাছ হয় না ছ্যার। পেট একেবারে দমসম হয়ে না-ভরলে সময়ের মদ্যে যাইতে পারি না। তারপর যাইতে-যাইতে সব খাবার বিলকুল হজম হয়ে খাঁ-খাঁ। কাজ নাই, খাবার পাই না। যেখানে যাই, সেখানে গিয়ে আবার কী করে খাবার জোগাড় করব, ভেবে পাই না।"

পরিমলবাবু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এইভাবে কেউ কাঁদতে থাকলে তাকে খুব কড়া কথা বলাও মুশকিল।

"আপনার নাম?" একটু নরম হয়ে তিনি জানতে চাইলেন।

লোকটা হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছে বলল, "আজ্ঞে, নুরুল বলেই সবাই ডাকত। হুঁশ হওয়ার পর থেকে বাবা-মাকে দেখিনি। তাপ্পর-"

"সেসব থাক।" পরিমল বললেন, "তা আপনার এদিক-ওদিক যাওয়ার কথা কেউ বিশ্বাস করেনি? প্রমাণ দিতে পারতেন। এ তো দুর্দান্ত ক্ষমতা। সুপার-পাওয়ার যাকে বলে।"

নুরুল করুণ মুখে হাসল, "লোকে আমার কথা শুনে ইয়াক্কি করে। বলে, তিনদিন পরের কিরিকেট ম্যাচের রান জেনে এসে বলতে। সে পেট ভরে খেয়ে নিলে, আমি যাইতে তো পারি, কিন্তুক ফিরব কেমনে? ফিরতে চাইলে যে আবার ভরপেট খাবার দরকার। এদিকে তিনদিন পরের সময়ে যাবার জন্য আজকে যে খাওয়া দরকার সেটাও কেউ দেয় না। বলে, লোকঠকানোর নতুন ফন্দি ধরেছি। ফিরিতে খাওয়ার ধান্দা!"

"টাকা নিয়ে যাবেন। রেস্তরা থেকে খেয়ে আবার চলে আসবেন।"

"সে গুড়ে বালি কত্তা। এদিক-ওদিক গেলে, এই ধরুন শরীর, মাটি, পাথর সব পাকিতিক জিনিস ঠিক থাকবে, বাকি সব কিছু উল্টেপাল্টে যায়। টাকা নিয়ে গেছি। নোটের রং নীল, সবুজ হয়ে গেছে। গান্দিজির মুখ এলোমেলো…"

এই নুরুল কি হাড়ে বজ্জাত শয়তান নাকি প্রকৃত উন্মাদ! এত সাজিয়ে গুছিয়ে যুক্তিসমেত মিথ্যা তো পাগলরা বলতে পারে না!

"ছ্যার, আমায় একটা কাজ দিন। সময়ের মদ্যে গিয়ে কুনো লাভ নাই। আমি মজুর খাটব।"

একে বিদায় করতে হবে এর চালেই। পরিমল উঠে গিয়ে দরজার চৌকাঠের বাইরে উঁকি দিলেন। অপেক্ষা করছে অন্যান্য সাক্ষাৎপ্রার্থীরা। ফিসফিসানি সহকারে গুলতানি করছে নিজেদের মধ্যে। ঘর থেকে একজন বেরলে লাইন অনুযায়ী পরের জন ঢোকে। হাঁক দিয়ে বললেন, "বিশেষ দরকারে দরজাটা একটু বন্ধ করছি। মিনিট-দশেকের ব্যাপার। কেমন!"

সবাই শশব্যস্ত হয়ে গ্যালগেলে হেসে সম্মতি জানাল।

পরিমলবাবু ভিতরে গিয়ে ভাত, তরকারি বেড়ে নিয়ে এলেন, বেশি পরিমাণেই। বললেন, "এখন খান এটা। সময়ের মধ্যে গিয়ে আগামীকাল সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ঠিক এই ঘরে চলে আসবেন। তখনও আমি খাবার নিয়ে রেডি থাকব। যদি করে দেখাতে পারেন, তারপর থেকে আপনার খাওয়া-পরার দায়িত্ব আমার।"

নুরুল প্রথমে অবাক হল। তারপর তার গোটা শরীর জুড়ে বইতে লাগল কৃতজ্ঞতার ফল্গুধারা। কয়েকবার ঢোক গিলে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে থালার খাদ্যের দিকে চেয়ে রইল। আমতা-আমতা করে বলল, "তা-লে খাই?"

"নিশ্চিন্তে।"

নুরুল সাপটে খেল। ভাতের শেষ বিন্দুটাও যত্ন করে মুখে পুরে চেবাল বারকয়েক। থালার কোণে লেগে থাকা তরকারির কাই সতর্ক চোখে লক্ষ্য করে আঙুল দিয়ে তুলে জিভে মাখিয়ে নিল।

"পেট ভরেছে?"

আকর্ণবিস্তৃত হাসি হাসল নুরুল। তার মেদহীন পেট সামান্য ঠেলে উঠেছে। বলল, "আজ্ঞে ছ্যার। তা-লে আমি যাই?"

পরিমলবাবু হাসলেন। খুঁটিয়ে দেখলেন লোকটাকে। জোচ্চোরের ভাবভঙ্গি এত সরল! এগুলোও রীতিমত শিখতে হয়। তিনি অনুমতি দেওয়ার মতো করে হ্যাঁ-সূচক ঘাড় নাড়লেন। ব্যাটার দৌড় এবার দেখা যাক। হেঁটে বেরতে গেলেই ক্যাক করে চেপে ধরতে হবে।

নুরুল নিজের পেটে একবার আদরের হাত বোলাল। ঢেঁকুর তুলল। তারপর মুহূর্তে উধাওহয়ে গেল।

উধাও!

পরিমলবাবু সজোরে চোখ কচলালেন। দরজায় তালা ঝুলছে অবিকল। তিনি তৈরি ছিলেন নতুন একপ্রস্থ মিথ্যে শোনবার জন্য। কিন্তু লোকটা সত্যিই অদৃশ্য হয়ে গেল! তিনি কি স্বপ্ন দেখছিলেন? না! এই তো এঁটো ভাতের থালা।

পরিমলবাবু বড় করে শ্বাস নিলেন।

স্ত্রী বান্ধবীর বাড়িতে গেছে। মেয়ে কোচিংয়ে। পরিমলবাবু হাত ফাঁকা। খবরের কাগজ নিয়ে বসে তিনি মুচকি হাসলেন। ঘড়িতে সাড়ে সাতটা বাজে। নুরুলের তো এখন আসার কথা, তাই না? সময়ের মধ্যে এদিক-ওদিক! হা হা! কোনও একটা ভোজবাজি দেখিয়ে বা সম্মোহন-টম্মোহন করে কাল পালিয়ে গেছিল। আজ কোনও উপায় নেই। বাইরের কোলাপসিবল বন্ধ। ঘরের দরজা বন্ধ। সব ট্রিকস অকেজো হয়ে পড়বে। অবশ্য জোচ্চোর-রা দ্বিতীয়দিন কখনও আসে না।

নুরুল এল। ঘরের মাঝখানে ঠিক যেন বাতাসের মধ্যে আবির্ভুত হল তার সেই কালকের অবয়বটা। নিঃশব্দে। পরিমলের হাত থেকে খবরের কাগজ আলগা হয়ে পড়ে গেল। তিনি হাঁ করে চেয়ে রইলেন।

জামার গড়ন একটু যেন আলাদা। রং-ও সামান্য বদলে গেছে। নাকি তাঁর চোখের ভুল! ঘরে বিড়াল পর্যন্ত ঢোকার উপায় নেই! লোকটা কি তা হলে সত্যিই..

"ছ্যার! বিস্বাছ করলেন ছ্যার!"।

পরিমলবাবুর বুক ধুকপুক করতে আরম্ভ করল। এ এক মারাত্মক সম্পদ তার হাতে এসেছে। ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারলে..

তার উল্লসিত ভাবনাকে চমকে দিয়ে শূন্যপথে যেন আচমকা বাতাস ফুঁড়ে, ঠিক নুরুলের কায়দাতেই আবির্ভুত হল দুই মূর্তি। আপাদমস্তক বাদামি কাপড়ে ঢাকা দেহ। মাথায় হেলমেটের মতো বস্তু লাগানো। একজনের হেলমেট নীল, অন্যজনের সবুজ। কব্জিতে পেল্লাই বিকটদর্শন ঘড়ি।

"শ্রী পরিমল দাস চটপট ফোন বার করে ইউপিআই ট্রান্সফারের অ্যাপ্লিকেশনটা খুলুন।

"কী, কেন, আপনারা, মানে--" ভ্যাবাচাকা খেয়ে তিনি পরপর চারটে অসমাপ্ত বাক্য সৃষ্টি করে থেমে গেলেন।

সবুজ হেলমেট বলল, "আনঅথরাইজড টাইম ট্রাভেলের জন্য যদি কোনও ভবিষ্যৎ সমস্যার সৃষ্টি হয়, আমরা সেটা হওয়া আটকে দিই। এখন আমরা যা করতে চলেছি, এটাই সময়রেখাকে অবিচলিত রাখবার শ্রেষ্ঠ পথ। নিন, ফোন বার করুন। একটা একাউন্ট নম্বর বলছি। অনাথ আশ্রমের। সব টাকা ওখানে পাঠিয়ে দিন।"

পরিমলবাবু ফ্যাকাসে মুখে হাসলেন, "মামদোবাজি? ট্রেসপাসার্স কোথাকার! এক্ষুণি পুলিশে খবর দেব।"

নীল হেলমেট অন্যজনের দিকে চেয়ে হতাশ গলায় বলল, "চিফকে কতবার বলেছি আমাদের সংবিধান বদলাতে। এইসব হাঙ্গামা ভাল লাগে? এঁর আইডি পাসওয়ার্ড জেনে নিজেরাই সব করে ফেলতে পারি। তা না-করে ফালতু.."

সবুজ হেলমেট সামান্য ঘাড় হেলিয়ে রুক্ষ গলায় বলল, "চুপচাপ আমাদের কথা অনুযায়ী কাজ না করে বেগরবাই করার চেষ্টা করলে, ঝট করে তুলে পট করে ডাইনোসর যুগের গাছে ঝুলিয়ে দিয়েও আসব। ওই কাজ করলে সময়রেখা তেমন বিগড়োবে না। আপনার সিদ্ধান্ত। বলুন, ডায়নোসরের পেট যাবেন নাকি ভিখারি হবেন?".

"সময়রেখা!" পরিমলবাবু বুঝে গেছেন, যা ঘটছে তার সমস্ত কিছুই সূর্য-চন্দ্রের মতো সত্যি। এদের কথামতো কাজ না করলে দুই হেলমেট-ভাই তাকে ডাইনোসর বা রাক্ষস কারও একটা খপ্পরে ফেলে দিয়ে আসবে।

"অর্থাৎ টাইমলাইন। বুঝলেন?"

"না, মানে-"

নীল হেলমেট অন্যজনের দিকে তাকিয়ে বলল, "এত বকবকের কোনও দরকার আছে? যতসব বিশ্রী আইন। এই মাইনেতে এত কাজ করা যায়?"

সবুজ হেলমেট সঙ্গীকে শান্ত হওয়ার ইশারা করে বলল পরিমলবাবুকে বলল, "ধরুন আপনি ভাবলেন এখন সিনেমা দেখতে যাবেন। যাওয়ার পথে ছিনতাইবাজ আক্রমণ করল। আপনি তাকে কুপোকাত করলেন। পরেরদিন আপনার ছবি সংবাদপত্রে। এবার ধরুন সেই ছিনটাইবাজ বিরাট এক গ্যাং এর সদস্য ছিল। সেই গ্যাং আপনাকে চিনে নিয়ে কয়েকদিন পর আক্রমণ করল। আপনি কোনোমতে বেঁচে গেলেন। কিন্তু ওদের প্রতিদ্বন্ধি গ্যাং এর দল চাইল আপনাকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করতে। আপনি সেই গ্যাং-এর সদস্য হয়ে গিয়ে কালক্রমে বিরাট এক দুষ্কৃতী হয়ে উঠলেন। তখন আপনি হয়ত এমন কিছু অসামাজিক কাজ করবেন যার ফলে ভবিষ্যতে জরুরি কয়েকটা ঘটনা ঘটতে পারবে না। এটা একটা সময়রেখা হতেই পারে যা কিনা ভবিষ্যতের জন্য আশঙ্কা-স্বরূপ। এটা আমরা হতে দিতে পারি না। তখনই আমরা আপনাকে সিনেমায় যাওয়া থেকেই আটকে দেব। "

পরিমলবাবুর গলা বসে গেছে। সেই অবস্থাতেই তিনি একটা বিবর্ণ গর্জন ছাড়ার চেষ্টা করলেন। গর্জন অবশ্য বেরল না। ন্যাতানো আর্তনাদ হিসেবে চালানো গেলেও যেতে পারে। বললেন, 'তা হলে নূরুলকে এখন এখানে ডেকে ফেলাটাই বিশাল ভুল হয়ে গেছে?"

"হ্যাঁ। এবার তাড়াতাড়ি করুন।" নীল হেলমেট তার পকেট থেকে একটা কাগজ বার করল, "এই যে, আপনার বাড়ির দলিল। বছরতিনেক আগে এটা একদিন বাড়িতে এনেছিলেন। তখন গিয়ে ঝেঁপে-" সবুজ হেলমেটের কনুইয়ের গুঁতো খেয়ে বলল, "মানে হরণ করে আনা হয়েছে। এটাও একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দান করে দেবেন। যাবতীয় কাগজপত্র নিয়েই এসেছি। স্রেফ আপনার স্বাক্ষরের অপেক্ষা।"

আর কোনও উপায় নেই। আগে প্রাণ তো রক্ষা পাক। পরিমলবাবু সব টাকা ট্রান্সফার করে দিলেন। বাড়ি দান করে দিলেন। তারপর বজ্রাহতের মতো বসে পড়লেন মেঝেতে।

নুরুল ইতস্তত গলায় বলল, "আজ্ঞে, টাইম ছ্যার, ওনার ব্যাংকের কিছু টাকা যদি আমি পেতাম! বুঝতেই পাচ্ছেন, গরিব মানুষ। খিদেয় পেটে একেবারে--"

"ওহ হ্যাঁ, আপনি সেই জেনেটিকাল টাইম ট্রাভেলার। আপনি মশাই নিজেকে ঠিক করে চিনলেনই না। অবশ্য চিনলেই পৃথিবীর সমস্যা বাড়ত। পরিমল দাস, ঘরে ক্যাশ আছে? অনেক? তা হলে তো ভালোই। যা আছে এই ভদ্রলোককে দিয়ে দিন।"

আলমারির খোপ, মানিব্যাগ ও তক্তাপোষের নিচ থেকে সমবেত যা নোটের তাড়া বেরল, সবটাই ধরে দেওয়া হল নূরুলকে। তার পোশাকের পকেটের হাল ভাল নয়। মানিব্যাগটাও দিয়ে দেওয়া হল। বড়সড় দামি জিনিস। সব নোট কষ্টেসৃষ্টে হলেও এঁটে গেল ওতে।

পরিমলবাবু ক্ষীণ স্বরে বললেন, "আমি না-হয় সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম। এসব যে আসলেই ঘটছে তা-ও ঠিক মেনে নিতে মন চাইছে না। আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিন। আমার থেকে সব কেড়ে না নিলে কী এমন ক্ষতি হত একটু বলবেন?"

নীল হেলমেট আরেকজনের দিকে তাকিয়ে হতাশ কন্ঠে বলল, 'এখন আবার ব্যাখ্যা করতে হবে!"

"মানুষটার সব চলে গেল। এটুকু জবাব তার প্রাপ্য।" সবুজ হেলমেট ক্লান্ত গলায় বলল, "আপনাকে সতর্ক করে, নুরুলবাবুকে সরিয়ে দিয়ে আমার চলে যেতেই পারতাম। কিন্তু সচক্ষে দেখা এই কান্ড আপনি হজম করতে পারতেন না। নুরুলবাবুকে আবার খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাতেন আপ্রাণ। সেটা করতে গিয়ে সফল হতেন না। শেষমেশ মনক্ষুন্ন হয়ে এইসব ঘটনা সপরিবারে আপনারা চারদিকে ছড়াতে আরম্ভ করতেন। আপনি যথেষ্ট বিখ্যাত লোক, তাই লোকজন অল্প হলেও বিশ্বাস করত এবং গল্পটা ক্রমশ আরও দ্রুত ছড়াতে থাকত। ক্রমে এই গল্প এমন একজনের কাছে পৌঁছত, যে অত্যন্ত চৌকশ ও ধুরন্ধর বিরল প্রতিভাবান গোত্রের মানুষ। সে নুরুলবাবুকে খুঁজে বের করত। এবং তাকে ব্যবহার করে সে সুদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীকে মরুভূমি বানিয়ে দিত। আমরা সেই ভয়ঙ্কর সময়রেখা চাই না। কেউই চায় না। এখন যা অবস্থা দাঁড়াল, আপনারা কোথায় থাকবেন, কী খাবেন তাই নিয়েই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বেন। এবং ভিখারীরা যা-ই বলুক, কেউ পাত্তা দেবে না। ভাববে টাকার শোকে উন্মাদ হয়ে গেছে।"

নুরুল গদগদ স্বরে বলল, "অনেক টাকা পেয়েছি টাইম-ছ্যার। আর আমি কোথাও যাব না। এখানে কোথাও চায়ের দোকান খুলে বসব।"

নীল হেলমেট আৎকে উঠে বলল, "এখানে নয়। এই চৌহদ্দিতে নয়। কয়েকদিন পরের সময়ে আপনাকে রেখে আসছি। আমাদের যন্ত্রের মাধ্যমে যাব, তাই আপনার টাকা-পয়সার চেহারায় কোনও প্রভাব পড়বে না। এটুকুই আমাদের উপর আদেশ ছিল। আর হ্যাঁ, পরিমলবাবুকে এখন থেকে আপনি চেনেন না, কেমন?"

"আজ্ঞে একদম। চেনার চেষ্টা করতে গেলে ওই আপনাদের সময়রেকা বদলে যাবে, তাই না? বাপরে, ছ্যারবাবুর সব কিছু কেমন করে চোখের নিমিষে…আমি কাউকে চিনি না টাইম-ছ্যার। "

নীল হেলমেট নুরুলের কাঁধ জাপটে ধরল। কব্জির পেল্লাই ঘড়িতে খুটখাট করতে করতে বলল, "চলুন।"

                                                  

সূচিপত্র

কল্পবিজ্ঞান

গল্পবিজ্ঞান

বিজ্ঞান নিবন্ধ

পোড়োদের পাতা


Copyright © 2011. www.scientiphilia.com emPowered by dweb