নিঠুর কেন মা

লেখক - সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

 

বিরাট ঘরটায় ঢুকে নরম গদি আঁটা চেয়ারে বসার সময় জয়ন্তর বুকটা ঢিপঢিপ করে উঠল। বাম হাতের মুঠোর মধ্যে ধরা ছোট্ট জিনিসটা আশা করা যায় কারও নজরে আসেনি। আসলে একেবারে হাতের নাগালে এমন একটা লোভনীয় বস্তু দেখে সেটা হস্তগত না করে থাকতে পারেনি জয়ন্ত। টাকা-কড়ি বা সোনা দানা নয়, জিনিসটা নেহাতই একটা কলম। সেই কলম, যা দিয়ে সাদা কাগজে লিখে ফেলা যায় যা খুশি। চাইলে সে লেখা পড়ার জন্য ছড়িয়ে দেওয়া যায় আরও অনেকের কাছে। লেখার তো অনেক কিছুই আছে। কত প্রশ্ন, কত ক্ষোভ, কত   হতাশা যা মুখ ফুটে বলা যায় না কাউকে, সে সব লিখবে সে। জয়ন্ত কাগজের জোগাড় করে ফেলেছে, টিস্যু রোল দিয়েই কাজ চালানো যাবে আপাতত। ব্যক্তিগত প্রয়োজনের জন্য কাগজ-কলম দুটোর ব্যবহারই যদিও নিষিদ্ধ এখন এই সমাজে। নাগরিকদের স্বাধীন ভাবে ভাবনা চিন্তা করাই দূর অস্ত, মন থেকে কিছু লিখে ফেলার চিন্তা করা তো প্রায় পাগলামির সমতুল্য। কুড়িয়ে পাওয়া কলমটা পকেটে ঢোকানোর আগেই কোথা থেকে একদল শান্তিরক্ষক প্রহরী এসে তাকে ঘিরে ধরে বলেছিল, ‘চলুন আমাদের সঙ্গে।’

হতবাক জয়ন্ত যেই বলেছে, ‘কোথায়?’

অমনি প্রহরীদের উত্তর, ‘মা-য়ের কাছে চলুন। তিনি আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।’

সেই থেকেই তার মনের মধ্যে আশঙ্কার কালো মেঘ। মা এই প্রদেশের সর্বময় কর্ত্রী। তাঁর নির্দেশেই সব কিছু চলে। কিন্তু তাই বলে ফাঁকা রাস্তার মধ্যে থেকে চুপিসাড়ে একটা কলম তুলে নেওয়াও কি তাঁর চোখ এড়ায়নি? এটা অবিশ্বাস্য ঠেকে জয়ন্তর কাছে। তবে এই হঠাৎ তলবের তো কিছু কারণ নিশ্চয়ই আছে! দেখাই যাক না।

বিরাট বড় ফাঁকা হলঘরটায় তাকে ঢুকিয়ে প্রহরীরা      বাইরে থেকে দরজা লক করে দিল। সামনে আলোকোজ্জ্বল কাঁচের দেওয়ালের ওপারে একটা অস্পষ্ট অবয়ব। উনিই সম্ভবত মা। তাঁকে কেউ কোনোদিন চাক্ষুষ দেখেনি। শুধু গলার স্বর শুনেছে আর অমোঘ নির্দেশ পেয়ে এসেছে এতদিন যাবৎ।

গমগমে মহিলা কণ্ঠ বলে ওঠে, ‘তোমার নাম বলো।’

--‘আজ্ঞে, জয়ন্ত… মা!’

--‘বেশ, তা জয়ন্ত, শোনো, তুমি হয়তো জানো এটা হল ‘সত্যকক্ষ’। আমি কাউকে কোনও প্রশ্ন করলে তাকে সত্যি কথাটা বলতে হয় শুধু। এই প্রদেশের যে কোনও নাগরিককে আমি সত্যকক্ষে ডেকে পাঠাতে পারি। তোমাকেও ডেকেছি তেমনই। তোমায় একটা প্রশ্ন করছি জয়ন্ত,  তুমি কি এমন কোনও কাজ করেছ যা এই প্রদেশের আইন অনুসারে অপরাধ?’

জয়ন্ত একেবারে নির্বাক। মা আবার বলে ওঠেন,

 ‘আবার বলছি, যদি তুমি কোনও অন্যায় করে থাকো, অকপটে এখানে স্বীকার করতে পারো। তোমার যাতে ন্যূনতম শাস্তি হয়, সেটা আমি দেখব।’

জয়ন্ত বুঝতে পারে, তার কপাল ঘামছে। সেই ঘামের একটা বিন্দু গড়িয়ে গড়িয়ে তার বাম ভুরুর উপরে চলে এসেছে। অস্বস্তিতে বাঁ চোখটা একটু নড়ে উঠতেই লবণাক্ত তরল বিন্দু সেই চোখে পড়ল। চোখ জ্বালা করে ওঠায় বাধ্য হয়ে তার চোখ পিটপিট করতে থাকে।

মা সহজ গলায় বললেন, ‘জয়ন্ত, তুমি ঘামছ কেন?’

--‘আজ্ঞে মা, এই ঘরটা বেশ গরম, তাই হয়ত… ’

--‘তাই?  আচ্ছা। ঘরের উষ্ণতা এখুনি কমিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু তুমি সত্যি কথা বলছ তো জয়ন্ত?’

--‘আমি আপনার অনুগত নাগরিক, মা। আমি মিথ্যা বলছি না।’

--‘তোমাকে তিরিশ সেকেন্ড সময় দেওয়া হল, জয়ন্ত। এর মধ্যে তোমাকে সত্যি কথাটা স্বীকার করতে হবে।’

ঘরের উষ্ণতা সত্যিই এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যায়। জয়ন্তর রীতিমত ঠাণ্ডা লাগতে থাকে। কিন্তু তার ভিতরের উদ্বেগ আরও বেড়ে চলে। কাচের দেওয়ালে আটকানো বড় ডিজিটাল ঘড়িটার লাল আলো প্রত্যেক সেকেন্ডে সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে দপদপ করতে থাকে। সে বুঝতে পারে বেশিক্ষণ আর জিনিসটা লুকিয়ে রাখতে পারবে না। তখনই মা আবার বলে ওঠেন,

‘আর মাত্র পনেরো সেকেন্ড বাকি। তুমি কিছু বললে না, তবে তোমার মুঠো করে রাখা বাঁ হাতের উষ্ণতা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ডিগ্রি বেশি দেখাচ্ছে। আমার মনে হয় তুমি ওই হাতে কিছু একটা চেপে ধরে রেখেছ। সময় শেষ হওয়ার আগে তুমি কি সেটা আমাকে জানাবে?’

এবার জয়ন্ত ভেঙে পড়ল। তাও নিজেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করে সে বলল, ‘দুঃখিত মা। আসলে রাস্তায় আজ এই কলমটা দেখে তুলে নিয়েছিলাম। …’

‘রাস্তায় পড়ে থাকা মালিকানা হীন জিনিস মানেই রাষ্ট্রের সম্পত্তি। না বলে রাষ্ট্রের সম্পত্তি অধিকার করা গুরুতর অপরাধ। এই প্রদেশের বিচারব্যবস্থা আমার অধীনে। তাই আমিই ঘোষণা করছি এই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তোমার কোনও শেষ ইচ্ছে আছে জয়ন্ত?’

‘মা,  আমি অনুরোধ করছি আমাকে ভুল শোধরানোর একটা সুযোগ দেওয়া হোক। আমি কথা দিচ্ছি ভবিষ্যতে আর কখনও এমন অবিবেচকের মত কাজ করব না। আমাকে ক্ষমা করে দিন, মা।’

‘তোমার শেষ বক্তব্যটি আমাদের কাছে নথিবদ্ধ করা রইল। এবার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও।’

ঘরের আলো নিভে এলো। চেতনা লোপ পাওয়ার আগে জয়ন্ত সারা শরীরে তীব্র দহনের মত যন্ত্রণা অনুভব করল। চেয়ারটা থেকে ওঠার অনেক বৃথা চেষ্টা করল, কিন্তু ওই চেয়ারই যেন তার মৃত্যুদূত হয়ে উঠল শেষমেশ।

***

অয়ন ভাবতে পারেনি এমন একটা খবর ও জেনে ফেলবে। জানাটা নেহাত আকস্মিক এবং ঘটনাচক্রে হলেও ওর এখন মনে হচ্ছে, বোধহয় এটা না জানলেই ভাল হত! বেশ কিছুদিন ধরেই ‘চলো যাই নতুন দেশে’ প্রকল্প নিয়ে সকলের মধ্যে উৎসাহ বেড়ে চলেছে। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে ইচ্ছুক নিম্নবিত্ত নাগরিকদের নতুন গ্রহে পুনর্বাসন প্রকল্প। দলে দলে লোক সেখানে নাম নথিভুক্ত করাচ্ছে আর মহাকাশে যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ শিবিরে চলে যাচ্ছে একে একে, নিয়মমাফিক। আসলে এই গ্রহে নিরন্তর বেড়ে চলা জনসংখ্যার চাপ, প্রাকৃতিক সম্পদের অপ্রতুল হয়ে আসা, অর্থনৈতিক সঙ্কট, পরিবেশের ভারসাম্য হারাতে থাকা সব কিছু মিলিয়ে ক্রমেই এখানে বসবাস করা সাধারণ নাগরিকদের পক্ষে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। তার মধ্যে এমন একটা জনহিতকর প্রকল্পের ঘোষণা হওয়ার পর থেকে মা-এর নামে সবাই ধন্য ধন্য করছিল। অয়নও সেই দলেই ছিল। ছিল, এখন আর নেই। এমন এক জনের কাছ থেকে সে এই প্রকল্পের পিছনের সত্যিটা জেনে ফেলেছে যেটা মিথ্যে হওয়ার কোনও উপায় নেই, সেই লোকটা নিজেই অনেক কসরত করে ওই প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত শিবির থেকে পালিয়ে এসেছে। তবে তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে সরকারি প্রহরীরা। ধরতে পারলে আর রক্ষা নেই। তার আগেই সে সবটা খুলে বলেছে অয়নকে। কথাগুলো শুনে রাগে, ক্ষোভে অয়ন ফেটে পড়ল। কিন্তু শুধু রেগে লাভ নেই। এত শক্তিশালী রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাওয়া মানে নিজের মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করা। তার চেয়ে সঠিক সুযোগের অপেক্ষায় থাকাই বাঞ্ছনীয়।

                সুযোগটা যে এত জলদি আসবে সেটা অয়ন ভাবতে পারেনি। স্বয়ং মা তাকে ডেকেছেন, নিজস্ব ভবনে, বিশেষ সাক্ষাতের জন্য। অয়ন নেহাতই সাধারণএকজন সরকারি বেতনভুক কর্মী, তার সঙ্গে প্রদেশের সর্বময় কর্ত্রীর যে ব্যক্তিগত কোনও প্রয়োজন থাকতে পারে এটা ভাবাই তো অকল্পনীয়!  তবে যা হয়েছে তা তো ভালই, সে নিজেও চাইছিল মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হোক। একটা ক্ষীণ আশা বা বিশ্বাস তার এখনও আছে, যে মা নিজে নিশ্চয়ই ওই ‘চলো যাই নতুন  দেশে’ প্রকল্পের গণ্ডগোলটা জানেন না। জানলে এই জনদরদী নেত্রী ঠিকই ব্যবস্থা নিতেন। আসলে এই প্রকল্পের আধিকারিকদের অনেকেই দুর্নীতিগ্রস্ত। নির্ঘাত তাদেরই কীর্তি এসব।

                যাইহোক, মায়ের ভবনে পৌঁছতেই সজাগ প্রহরীরা তাকে নিয়ে এল কাঁচে মোড়া এক বিরাট কক্ষে, যার একদিকের দেওয়াল থেকে আসা তীব্র আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায়। একটা মাত্র চেয়ার, সেখানে ইতস্তত করে বসেই পড়ল অয়ন। তখনই এক গম্ভীর নারী কন্ঠ ভেসে আসে দেওয়ালের দিক থেকেই-- ‘তোমার নাম বলো।’

--‘আজ্ঞে, অয়ন, মা।’

--‘আচ্ছা অয়ন, তুমি হয়তো জানো এটা হল ‘সত্যকক্ষ’। আমি কাউকে কোনও প্রশ্ন করলে তাকে সত্যি কথাটা বলতে হয় শুধু। এই প্রদেশের যে কোনও নাগরিককে আমি সত্য কক্ষে ডেকে পাঠাতে পারি। তোমাকেও ডেকেছি তেমনই। তোমায় একটা প্রশ্ন করছি, তুমি কি মনে মনে আমাদের সরকারের কোনও কাজের বিরোধিতা করেছ?’

চমকে ওঠে অয়ন। এটা কীভাবে সম্ভব? সে ঘুণাক্ষরেও কাউকে সেই গোপন খবরটা বলেনি। হ্যাঁ, মনের মধ্যে সেকথা ঘুরপাক খেয়েছে স্বাভাবিক ভাবেই, কিন্তু সেটা মা জানলেন কী ভাবে?

তবেকি, তবেকি ……

ইতোমধ্যে মা আবার বলে ওঠেন, --‘তোমাকে তিরিশ সেকেন্ড সময় দেওয়া হল, অয়ন। এর মধ্যে তোমাকে সত্যি কথাটা স্বীকার করতে হবে। আবার বলছি, যদি তুমি কোনও অন্যায় করে থাকো, অকপটে এখানে স্বীকার করতে পারো। তোমার যাতে ন্যূনতম শাস্তি হয়, সেটা আমি দেখব।’

যে ভাবে একঘেয়ে সুরে মা এই কথাগুলো বলছেন, সেটা স্রেফ কোনও যান্ত্রিক গলার সঙ্গে তুলনীয়। নিন্দুকেরা বলে, মা নাকি আসলে কোনও জীবিত মানব সত্তা নন, তিনি স্রেফ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারসাজিতে বানানো এক যন্ত্রবিশেষ। এই চিন্তাজাল বিচ্ছিন্ন হয় মায়ের বলা পরের কথাগুলোয়, ‘আর মাত্র দশ সেকেন্ড বাকি। তুমি কিছু বললে না, তবে আমি বলছি। ‘চলো যাই নতুন দেশে’ প্রকল্প নিয়ে তোমার মনে কিছু সংশয় জন্মেছে। সময় শেষ হওয়ার আগে তুমি কি সেটা আমাকে জানাবে?’

অয়ন আর ভয় পেল না। জোর গলায় বলল, ‘মা, শুনেছি এই প্রকল্পে যারা যাচ্ছেন, তাঁদের সবাইকে আসলে কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। তাঁদের ওই প্রশিক্ষণ শিবিরের নাম করে একটা অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে মেরে ফেলে তারপর সেই দেহাবশেষ দিয়ে খুব দ্রুত জৈবজ্বালানি তৈরি করা হচ্ছে। এই গ্রহের প্রাকৃতিক সম্পদ কমে আসছে বলেই কি নিরীহ মানুষগুলোকে এভাবে শেষ করে দেওয়া হবে? সাধারণ মানুষের জীবনের চেয়েও কি জ্বালানির মূল্য বেশি হয়ে গেল এখন?’

মা একই রকম নিরুত্তাপ গলায় বললেন, ‘সরকারি প্রকল্পের গোপনীয় কথা জানা এবং সেগুলো নিয়ে ভাবনা চিন্তা বা প্রশ্ন করা দুটোই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তোমাকে শাস্তি দিলাম মৃত্যুদণ্ড। এখন বলো তোমার কোনও শেষ ইচ্ছে আছে কিনা…’

অয়ন মেজাজ হারিয়ে চিৎকার করে ওঠে, ‘শাস্তিযোগ্য? অপরাধ? আপনাকে ভরসা করতাম। এখন দেখছি, ছিঃ! আপনি নিজেও তো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একজন ফসল! মানুষকে ভাঁওতা দিয়ে মেকি সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে আমাদের সর্বনাশ করছেন! আর বিরোধিতা করলেই তাকে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছেন! আর কতজনকে এভাবে মেরে মেরে মুখ বন্ধ করবেন? এর ফল ভাল হবে না, বলে দিলাম! এক দিন না একদিন এই নিরীহ অসহায় মানুষগুলোই আপনাকে ওই আসন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে!’

মা-এর গলা এবার আরও কঠিন হয়, আরও গম্ভীর হয়ে তিনি বলেন, ‘প্রদেশের সর্বময় কর্ত্রী অর্থাৎ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা, কটু কথা বলা ইত্যাদি বহুবিধ অপরাধে তোমার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। আসন্ন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও।’

এই কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘরের আলো নিভে গেল। অয়ন একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, নির্জন ঘরে তার আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হয়ে ঘুরতে লাগল, যতক্ষণ না একমাত্র চেয়ারটি তীব্র আঘাতের অনুভূতি দিয়ে তার চেতনা আচ্ছন্ন করে ফেলে। সারা শরীরে অসংখ্য সূচ বেঁধার মত যন্ত্রণা নেমে এল অয়নের। তারপর সব থেমে গেল।

সূচিপত্র

কল্পবিজ্ঞান

গল্পবিজ্ঞান

বিজ্ঞান নিবন্ধ

পোড়োদের পাতা


Copyright © 2011. www.scientiphilia.com emPowered by dweb