সমান্তরাল

লেখক - সাম্য মণ্ডল

প্রভাতে ঠিক ব্রাহ্ম মুহূর্তে ঘুম থেকে উঠে পড়াটা অবিনাশ বাবুর আজন্ম অভ্যাস। বায়োলজিক্যাল ক্লক বরাবর ঠিকঠাক কাজ করে এসেছে, তাই আর অ্যালার্মক্লকের প্রয়োজন পড়েনি কখনও। ছোটবেলায় পিতৃদেবের বকুনির ভয়ে কাকভোরে উঠে পড়ার যে প্রাত্যহিকী নিয়ম তৈরি হয়েছিল, তা এই মধ্যচল্লিশে এসেও নিয়মিত বজায় রেখেছেন। বিছানা ছাড়ার পর ঘণ্টা খানেক প্রাণায়াম ও টুকটাক শরীর চর্চা করেন বলে স্বাস্থ্য বরাবরই বেশ ভালো। ফলস্বরূপ রোগব্যাধিতেও বড় একটা আক্রান্ত হন না অবিনাশ বাবু।

তবে দুর্ভাগ্যবশত নিজের পরিবারের কাউকেই এই সু-অভ্যাসটি ধরিয়ে দিতে পারেন নি। উনিশ বছরের কন্যা অথবা বারোবছরের পুত্র কেউই ওদের বাবার এই গুণাবলীটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নয়। বস্তুত সকাল সাড়ে ছ’টা সাতটার আগে অবিনাশবাবু ব্যতীত ওঁর পরিবারের আর কাউকেই সজাগ দেখতে পাওয়া দুষ্কর।

রোজকার মতো আজও প্রাতঃকৃত্য সেরে একখানি নিমকাঠির দাঁতন নিয়ে একতলার ছাদে চলে এলেন অবিনাশ বাবু। ব্রাশ পেস্টের বদলে নিম দাঁতন ব্যবহারের অভ্যাসটা ওর অনেকদিনের। সূর্য উঠতে এখনও মিনিট কুড়ি বাকি। পূবের আকাশে সবে মাত্র রক্তিম ছোপ লাগতে শুরু করেছে। আবছায়া আলো আঁধারিতে দীর্ঘ দিনের পরিচিত মফঃস্বল শহরের শান্ত কমনীয় রূপ, মনে বেশ গভীর প্রশান্তির সঞ্চার করে। এমনিতে বরাবর প্রফুল্ল চিত্তেই ছাদে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়ের অপেক্ষা করেন অবিনাশবাবু। কিন্তু বিগত কিছু কাল যাবৎ ওঁর মন মেজাজ তেমন ভালো নেই।

মাস খানেক হল রাতে বারংবার কিছু ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুমটা ভেঙ্গে যাচ্ছে। আগে এক ঘুমেই রাত কাবার হয়ে যেত। কিন্তু হঠাৎ করে এই অনিদ্রার উপসর্গ শুরু হয়েছে। শুরুর দিকে বেশ কিছু দিন ব্যাপারটায় তেমন পাত্তা দেননি। কিন্তু ক্রমাগত প্রতিরাতে একই সমস্যা শুরু হওয়ায় বেশ চিন্তায় পড়ে যান অবিনাশ বাবু।

তবে আশ্চর্যের বিষয় ঘুম পাতলা হলেও খুব একটা শরীর স্বাস্থ্য বিগড়ে যায়নি। সারাদিনের কাজে কর্মে অনিদ্রাজনিত লক্ষণের তেমন কোনো প্রভাব নেই। তবুও মানসিক উদ্বেগ তো একটা থাকেই। তাই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন সহ উপযুক্ত ডাক্তার বদ্যি দেখানো কোনোটাই বাদ দেননি অবিনাশবাবু। ঘুমের ওষুধ খেয়েও দেখেছেন, তাতে বরং স্বপ্ন দেখার পরিমাণ অত্যন্ত বেড়ে যায়। চিকিৎসকদের মতে উনি হয়তো কোনো মানসিক অবসাদের শিকার। সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিংএর কথাও তাই অনেকে প্রস্তাব করেছেন।

ধর্মতলার একটি শতাব্দী প্রাচীন অফিসে ছোট খাটো কেরানীর চাকরি করেন অবিনাশ বাবু। সরকারি চাকরি। বেতন মন্দ নয়।  জীবনে বিশাল কিছু প্রাপ্তির অভিলাষ কোনো কালেই ছিল না। উচ্চাকাঙ্খা নেই, তাই চাহিদাও সামান্য। বড় মেয়ে এই বছর উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফল করে সম্প্রতি কলকাতার একটি নামী কলেজে ভর্তি হয়েছে। ছোট ছেলেও পড়াশোনায় মন্দ নয়। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে ছোটোখাটো কলহ বিবাদ ছাড়া আর কোনো অশান্তি ঘটেছে বলে মনে পড়ে না। বাবা মা বহুদিন আগেই পরলোকে প্রস্থান করেছেন। একমাত্র সন্তান হিসেবে পৈত্রিক বাড়িতেই আজন্ম সুখে সংসার করে এসেছেন। আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গেও সম্পর্ক মন্দ নয়।

অনেক ভেবেও তাই ওঁর কোনো মানসিক অবসাদ আছে কিনা তা আর খুঁজে পাননি অবিনাশবাবু। বস্তুত আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত বাঙালির তুলনায় উনি অনেক বেশি নির্ঝঞ্ঝাট নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করেন।

এইতো পাশের বাড়ির দজ্জাল ঘোষাল গিন্নী। আর একটু পরে সকালে পৌরসভার কলগুলিতে জল সাপ্লাই শুরু হলেই পাড়ার কলতলায় একগাদা এঁটো বাসনকোসন আর হাঁড়িকলসি নিয়ে উপস্থিত হবেন। ব্যস। পরবর্তী ঘন্টাখানেক পাড়ার বাকি মহিলা পুরুষদের সাথে ক্যাটর ক্যাটর করে উত্তপ্ত বাদানুবাদের পর্ব চলতেই থাকবে।  না তো উনি নিজের বাড়ির জন্য পৃথক জলের ব্যবস্থা করবেন, আর না ঝগড়াঝাঁটি করার বদভ্যাস ছাড়তে পারবেন। মুখরা গৃহিণীর উপর্যুপরি অত্যাচারে প্রায় শুকিয়ে আমসি হয়ে গিয়েছেন ওঁর স্বামী পরিমল ঘোষাল। অবিনাশবাবুর সাথে পথে ঘাটে দেখা হলে আজকাল কেমন যেন বিষণ্ণ ফ্যাকাশে দৃষ্টিতে তাকান পরিমলদা।

কই ওঁর মতো তো কোনো মানসিক জ্বালা যন্ত্রণা নেই অবিনাশবাবুর। তবে যে কেন ওঁকেই দুঃস্বপ্ন দেখার জটিল রোগ ভর করল, তাই ভেবে ভেবেই আজকাল বেশ চিন্তান্বিত থাকেন। তাছাড়া ওঁর স্বপ্ন দেখার বিষয়গুলিও একটু অন্য ধরণের। যা মোটেও খুব একটা স্বাভাবিক নয়।

সাধারণত প্রতিদিন আমরা যা স্বপ্ন দেখি, তার মাত্র এক দুই শতাংশই কেবল সচেতন মনের স্মৃতিতে রয়ে যেতে পারে। তারপর সারাদিনের কাজে কর্মে সেটুকুও যেন কখন নিঃশব্দে উবে যায়। মোদ্দা কথা, স্বপ্ন তেমন জোরদার না হলে সেগুলো নিয়ে আদৌ মাথা ঘামানোর প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু অবিনাশ বাবু প্রায় প্রতি রাতে যে স্বপ্নগুলো দেখেন, সেগুলো ঘুম ভাঙার পরেও দিব্যি অনুপুঙ্ক্ষ মনে করতে পারেন। তা ছাড়া প্রতিটি ঘটনাই এত রোমাঞ্চকর শিহরণ উদ্রেককারী, যে দিনের আলোতে ভাবতে বসলেও শরীরের প্রতিটি রোমকূপে উত্তেজনা অনুভব করেন।

অবিনাশ বাবুর প্রতিটি স্বপ্নই আসলে মৃত্যুবিষয়ক এবং সেই মৃত্যু কোনো নিকট পরিজনের নয়, কেবলমাত্র ওঁর একার।

এই ধারাবাহিক স্বপ্ন উপাখ্যানের সূচনা হয়েছিল ঠিক আড়াই মাস আগে। অফিস ফেরত ছোট্ট একটি ঘটনা মুহূর্তের জন্য ওঁর জীবনের নিস্তরঙ্গ গতিপথ অকস্মাৎ চিরতরে পাল্টে দিয়েছে।

দিনটা ছিল শুক্রবার। সাড়ে পাঁচটার পর যখন অফিস থেকে বেরোলেন, হঠাৎ মনে পড়ল বাড়ি ফেরার বাস ধরার আগে ওঁর হাতঘড়িটা একটু সারিয়ে নিলে মন্দ হত না। একুশ বছর আগে বিয়েতে উপহার পাওয়া হাতঘড়িটার প্রতি এখনও বেশ মমত্ববোধ রয়েছে। হালফ্যাশনের ব্যাটারিচালিত ঘড়ি কিংবা স্মার্টওয়াচের চেয়ে এই দম দেওয়া ঘড়িগুলোর আলাদাই আভিজাত্য। পুরাতন ভৃত্যের মতো সেই ঘড়িও এতদিন ঠিকঠাক সার্ভিস দিয়ে এসেছে। তবে ইদানীং একটু স্লো হয়ে যাচ্ছিল। অবিনাশ বাবু ভাবলেন একবার অয়েলিং করিয়ে নিলেই পুনরায় সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দিব্যি ছুটতে পারবে।

চাঁদনিতে চেনা একটা ঘড়ির দোকান অফিস থেকে খুব একটা দূর নয়। মাত্র দুটো স্টপেজের জন্য আর বাসের ভরসা না করে হাঁটা পথেই রওনা দিয়েছিলেন সেদিন। চাঁদনিচক মেট্রো স্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর ঠিক রাস্তা পার করার সময় বিপত্তিটা ঘটল।

সিগন্যাল খোলাই ছিল। পদাতিক যাত্রীরা সাধারণত গাড়ি ঘোড়ার দূরত্ব বুঝে হাতটাত দেখিয়ে রাস্তা পেরিয়ে যান। অবিনাশ বাবুও সেটাই করেছিলেন। কিন্তু তীব্র গতিতে বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসা একটা মিনি বাসের গতিবেগ আর দূরত্বের গাণিতিক হিসেব কষতে সামান্য গণ্ডগোল হয়ে গিয়েছিল। সহসা নিজেকে ঠিক সেই দ্রুতগামী যান্ত্রিক দানবের একেবারে মুখোমুখি আবিষ্কার করলেন অবিনাশবাবু। প্রচণ্ড জোরে ব্রেক কষার আওয়াজ আর রাস্তার আসেপাশের লোকজনের হইহই কলরবে কয়েক মুহূর্তের জন্য সম্পূর্ণ সম্বিৎ হারিয়ে ফেলেছিলেন।

“কপাল জোরে আজ বেঁচে গেলেন। ড্রাইভারটার এলেম আছে বলতে হবে। নইলে বাকিরা যা সব ঠুলি পরে গাড়ি চালায়!”

“কালিঘাটে একটা পুজো দিয়ে আসবেন দাদা। জোর ফাঁড়া কেটে গিয়েছে।”

মোটামুটি চেতনা যখন পুনরায় স্বাভাবিক হল তখন এই জাতীয় মন্তব্যগুলিই আগে ভেসে এল কানে। জন্মের পর একবার কুষ্টীবিচার করানো হয়েছিল মনে পড়ল অবিনাশ বাবুর। তাতে অবশ্য আরও তিন দশক দিব্যি বেঁচে বর্তে থাকার ভবিষৎবাণী করা আছে। কাজেই এটাকে একটা স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলেই ধরে নিতেন, যদি না সেদিন রাত্রি থেকেই নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখাটা চালু হত।

ঘর্মাক্তকলেবরে বিছানায় যখন ধড়ফড় করে উঠে বসেছিলেন, ঘড়ির কাঁটা তখন মধ্যরাতের পরিধি অতিক্রম করে ফেলেছে।  বিছানার পাশ থেকে জলের বোতল তুলে নিয়ে পরপর কয়েক ঢোকে প্রায় অর্ধেক খালি করে ফেললেন। স্বপ্নে সেই ভয়ানক লাল মিনিবাসটাই আবার ফেরত এসেছে। এবার আর সেটা নিশানা ভুল করেনি। একেবারে খ্যাপা ষাঁড়ের মতোই তীব্র গতিতে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে অবিনাশ বাবুকে!

পর পর বেশ কয়েক দিন স্বপ্নে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখলেন। এক সময় বাড়ির পরামর্শ মতো ডাক্তার দেখাতেও কসুর করলেন না। ওঁদের মতে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস থেকে হয়তো এমনটা ঘটে থাকবে। কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ চলল বেশ কিছুদিন। কাজের কাজ কিছু হল না। উল্টে স্বপ্ন দেখার পরিমাণ আরও বেড়ে গেল।

কখনও ট্রেনে কাটা পড়ে, কখনও জলে ডুবে, আবার কখনও পাহাড় থেকে গড়িয়ে… প্রতি রাতের প্রতি স্বপ্নে যত রকম ভাবে অপঘাতে মৃত্যু সম্ভব, তার কোনটাই যেন বাকি রইল না। যেন বাস্তব জীবনে ওঁর অবধারিত মৃত্যু কোনভাবে প্রতিহত হয়েছে বলে ক্ষিপ্ত মৃত্যুদেবতা প্রতিরাতের স্বপ্নে অসংখ্য বিভীষিকাময় অন্তিম পরিনতি দেখিয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছেন!

প্রচলিত চিকিৎসা মতে যখন কোনো সুরাহা মিলল না, তখন আত্মীয় পরিজনদের অনেকেই বিকল্প পথের সন্ধান দিলেন। অবিনাশবাবুর স্ত্রী ভারতী দেবী আবার ভীষণ ধর্মভীরু মহিলা। ইতিমধ্যেই ওঁর কিছু পরিচিত বাবাজীদের থেকে এক ঝুড়ি তাবিজ কবচ নিয়ে এসে স্বামীর সর্ব শরীরে বাঁধন দিয়ে ফেলেছেন। আজকাল আবার দু’বেলা পাড়ার বিপত্তারিণী মন্দির থেকে শান্তিজল নিয়ে এসে ঘর দোর শুদ্ধ করেন। নেহাত খুব বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে, নইলে একজন ভালো গুণিন নিয়ে এসে ঝাড়ফুঁক করানোর আন্তরিক ইচ্ছেটুকু কোনো মতে সংবরণ করে রেখেছেন।

স্বপ্ন সংক্রান্ত জটিলতার কথা একবার ভুল করে অফিসের কলিগ নিবারণ চক্রবর্তীকে বলে ফেলেছিলেন অবিনাশবাবু। সেই থেকে সারা অফিসে কথাটা কীভাবে রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছে। নিবারণদা এমনিতে অবশ্য বেশ মাইডিয়ার লোক। সারাক্ষণ ঠাট্টা ইয়ার্কিতে অফিসের সবাইকে মাতিয়ে রাখেন। অবিনাশ বাবুর মতো স্বল্পবাক কাজপাগল মানুষ যখন প্রায়ই আজকাল অন্যমনস্ক থাকতে শুরু করলেন, তখন নিবারণদাই ব্যাপারটা প্রথম খেয়াল করেন।

“ব্যাপার কী বলো তো ভায়া? তোমায় যেন কিছুদিন হল বেশ অন্যরকম দেখাচ্ছে। তা লুকিয়ে চুরিয়ে কারোর সাথে প্রেম ট্রেম করছো নাকি?” বলেই প্রাণ খোলা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন নিবারণ চক্রবর্তী।

ইচ্ছে না থাকলেও স্বপ্নের ব্যাপারটা খোলসা করতেই হল নিবারণদার কাছে। সব শুনে টুনে উনি অবশ্য বেশ গম্ভীর হয়ে গেলেন। ভদ্রলোক জন্মসূত্রে বামুন হলেও চিরকাল বামপন্থী নীতিতে বিশ্বাসী। উপনয়ন আর বিবাহের পর জীবনে আর কখনও উপবীত ছুঁয়ে দেখেন নি। অবিনাশ বাবুর এই জটিল ‘স্বপ্নদোষের’ কথা শুনে উনি অবশ্য পৃথক মতামত দিলেন। স্বপ্নের ফ্রয়েডীয় ব্যাখ্যা থেকে আধুনিক পাশ্চাত্যবিজ্ঞানে স্বপ্ন বিষয়ক যা সব নিত্য নতুন গবেষণালব্ধ ফলাফল রয়েছে, তা নিয়ে একখানা নাতিদীর্ঘ বক্তৃতাই দিয়ে ফেললেন। অফিসের অন্যান্য কলিগদের কেউ কেউ অবশ্য এমন ভবিষ্যৎ বাণীও করলেন যে অবিনাশ বাবুর অবিলম্বে বেশ কিছু ধনসম্পদ প্রাপ্তির যোগাযোগ রয়েছে। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে ব্যাপারটা নাকি শুভ হিসেবেই গণ্য করা হয়।

নানা মুনির নানা মত শুনতে শুনতে অবিনাশ বাবুর কান মাথা ভোঁ ভোঁ করছিল। এরপর থেকে অপরিচিত কারোর কাছে নিজের সমস্যার কথা ভুলেও আলোচনা করেন না। বরং ধীরে ধীরে চেষ্টা করছেন দৈনন্দিন জীবনের সাথে বিষয়টা মানিয়ে নিতে। অবসর সময়ে স্বপ্নে দেখা বিস্তারিত তথ্যগুলো পুনরায় পুঙ্খানুপুঙ্খ স্মৃতিরোমন্থন করার চেষ্টা করেন।

তবে শুধু স্বপ্ন সংক্রান্ত সমস্যা ছাড়াও আরও একটি নতুন বিষয় তাঁর জীবনে সংযোজিত হয়েছে। এটার কথা অবশ্য তিনি কারোর কাছেই প্রকাশ করেন নি। নইলে হয়তো ওঁর মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে নির্ঘাত লোকজন পাগলা গারদের সন্ধান করা শুরু করত। এমনিতেই ভীষণ মিতবাক নির্বিরোধী মানুষ অবিনাশ বাবু। আজকাল আরও কথাবার্তা কমিয়ে দিয়েছেন। চুপচাপ নীরবে ওঁর চার পাশের পরিবর্তনগুলো পর্যবেক্ষণ করেন।

অবিনাশ বাবুর মাঝে মাঝে মনে হয় সেই দুর্ঘটনার পর থেকেই ওঁর চার পাশের চেনা জগতটা হঠাৎ কিছুটা বদলে গিয়েছে!  

তবে ব্যাপারটা এতই সূক্ষ্ম যে চট করে কাউকে বোঝানো বেশ মুশকিল। উনি নিজেই হপ্তাখানেক সময় পরে ধীরে ধীরে অনুধাবন করেছেন। তবে ব্যাপারটা নিয়ে বেশ ধন্দে আছেন বলে কাউকে বলার সাহস পাননি।

আজ সকালেও নিমদাঁতনের সদ্ব্যবহার করতে করতে এই বিষয়টা নিয়েই চিন্তা করছিলেন অবিনাশ বাবু। যে ছোটোখাটো পরিবর্তনগুলি আজকাল ওঁর চোখে ঠেকছে সেগুলি কি চিরকাল থেকেই এমন ধারা ছিল, নাকি সম্প্রতি রদবদল হয়েছে? দু’একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা বোঝাতে সুবিধা হবে।

কলকাতা মহানগরী ক্রমশ তার শাখাপ্রশাখা বিস্তার করতে করতে পুরাতন মফস্বল শহরগুলোকেও একটু একটু করে গ্রাস করে চলেছে। অবিনাশ বাবুর ছোট্ট টাউনটাও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এই শহরেরও নিজস্ব প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। ব্রিটিশ কলোনিয়াল যুগের বেশ কিছু শতাব্দীপ্রাচীন স্থাপত্য এখনও ইতি উতি শহরের বুকে দেখতে পাওয়া যায়।

বাড়ির খুব কাছেই একটা জরাজীর্ণ ক্যাথলিক চার্চ জন্মাবধি দেখে আসছেন অবিনাশ বাবু। জমি সংক্রান্ত কিছু জটিলতার জন্য আজও সেখানে প্রোমোটারদের আগ্রাসী হাত পড়েনি। রোজ সকালে বাড়ির ছাদ থেকে সেটা নজরে পড়ে। সম্প্রতি এমন কিছু পরিবর্তন চোখে পড়েছে, যা ওঁর মনে প্রভূত বিস্ময়ের উদ্রেক করেছে।

প্রকৃত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভগ্নপ্রায় চার্চটার আর বিশেষ কিছুই অবশিষ্ট নেই। যতদূর মনে পড়ে সুদৃশ্য জানালা দরজাগুলিও বহুকাল পূর্বে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবে ক’দিন হল চার্চের চূড়ার দিকে কয়েকটি রঙিন কাঁচের জানালা ভোরের প্রথম আলোয় বেশ ঝিলমিল করছিল। খালি চোখে যদি দেখার ভুল হয়, তাই চুপিচুপি ছেলের বাইনোকুলারটা নিয়ে এসে আজও আরেকবার খুঁটিয়ে দেখলেন অবিনাশ বাবু। নাঃ দৃষ্টিবিভ্রম নয়, কোনো এক অদ্ভুত নিয়মে সময়ের বিপরীত দিকে হেঁটে ভেঙে যাওয়া কাঁচের ফ্রেমগুলি পুনরায় স্বস্থানে ফিরে এসেছে!

অবিনাশ বাবু অবশ্য এরপর খোঁজ খবর করে নিশ্চিত হয়েছেন যে চার্চটিকে নতুন করে মোটেই সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। তাই ভাঙা কাঁচ কীভাবে পুনরায় জোড়া লাগল সেই রহস্য এখনও অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে।

এ ছাড়াও এমন বেশ কিছু কিছু ঘটনা ঘটছে ইদানীং, যার সাথে নিজেকে ঠিকঠাক খাপ খাওয়াতে পারছেন না অবিনাশ বাবু।  গত শুক্রবারের কথা। অফিস শেষ করে বাড়ি ফেরার তোড়জোড় করছেন। মাসের শেষ সপ্তাহ। শনি রবি ছুটি। ব্যাগ গুছিয়ে লিফটের দিকে পা বাড়াতে যাবেন, এমন সময় পেছন থেকে হঠাৎ নিবারণদা বাজখাঁই গলায় হাঁক দিলেন।

“কই হে চললে কোথায়?”

শুধু নিবারণদা একা নন। ওঁর আসে পাশে অন্যান্য কলিগদের ভুরুতেও প্রশ্নবোধক চিহ্ন আঁকা রয়েছে দেখে এবার অবিনাশ বাবুর অবাক হওয়ার পালা।

“কেন বলুনতো দাদা! এই তো এবার বাড়ি ফিরব…।”

অবিনাশ বাবুর সরল স্বীকারোক্তিতে বাকিরা প্রায় হাঁ হাঁ করে উঠলেন। নিবারণ চক্রবর্তী একটু রুষ্ট গলায় বললেন, “আজ মাসের লাস্ট ফ্রাইডে ভুলে গিয়েছে বোধহয়। তোমার জন্য ইতিমধ্যে স্পেশাল মাটন কাবাবের অর্ডার দেওয়া হয়ে গিয়েছে,  আর তুমি আমাদের ফেলে বাড়ির দিকে হাঁটা দিচ্ছ?”

অবিনাশ বাবু সম্পূর্ণ নিরামিষাশী নন। তবে পারতপক্ষে মাংস ডিম ইত্যাদি একটু এড়িয়েই চলেন। মাটন তো গত দশ বছরের মধ্যে ছুঁয়েও দেখেননি। তাই হঠাৎ এই আমন্ত্রণে বেশ ভড়কে গেলেন। ক্রমে ক্রমে বুঝতে পারলেন ওঁদের অফিসে প্রতি মাসের শেষ শুক্রবারে এমন একটু আধটু পানাহার সেরেই অনেকে বাড়ি ফেরেন এবং উনিও নাকি এই আড্ডাচক্রের একজন অন্যতম সদস্য। কাজেই ওঁকে ফেলে আসর জমবে কী করে!

ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গম করতে বেশ সময় লেগেছিল অবিনাশ বাবুর। ওঁর কী তবে স্মৃতিবিভ্রম হল। নইলে এমন সুস্বাদু খাদ্যপানীয়ের একটি জমাটি আড্ডার ঘটনাও মনে পড়ছে না কেন! অফিসের সবাই মিলে আবার ওঁকে বোকা বানাচ্ছে না তো?

কৌশলে এক জনের কাছ থেকে মোবাইল চেয়ে ওঁদের পুরানো আড্ডাচক্রের ছবি দেখে সন্দেহ নিরসন করলেন। গ্যালারি বক্স ঘেঁটে অসংখ্য ছবিতে নির্ভেজাল ফুর্তির মেজাজে যে মানুষটিকে বাকিদের সাথে দেখতে পেয়েছেন, তিনিই যে শ্রীযুক্ত অবিনাশচন্দ্র মজুমদার, সেই বিষয়ে কোনো দ্বিমত থাকার কথা নয়।

খুব স্বাভাবিক ভাবেই সেদিন সকলের কাছে ওঁর এই স্মৃতিবিভ্রান্তির কথা চেপে গিয়েছেন। আড্ডায় উপস্থিত থাকলেও শরীর খারাপের অজুহাত দিয়ে একটি খাবারও দাঁতে কাটেন নি অবিনাশ বাবু।

সমস্যা যে শুধু অফিসেই সীমাবদ্ধ এমনটা নয়। বাড়িতেও নিত্যদিন কিছু না কিছু অসঙ্গতি লেগেই আছে। বিগত সপ্তাহের কথা। ভোর রাত থেকে আচমকা নিম্নচাপ আর একটানা বৃষ্টি। মেঘ বাদলার ঠাণ্ডার দিনে শীতকাতুরে অবিনাশ বাবুর আবার স্নান সারার জন্য একটু গরমজলের প্রয়োজন হয়। গিন্নীকে আলাদা করে মনে করিয়ে দিতে হয় না। বাজার সেরে চানঘরে ঢুকলেই এক বালতি ধূমায়িত গরম জল ওঁরই প্রতীক্ষায় থাকে। …সেদিন কিন্তু  চেনা ছবিটা দেখতে পেলেন না অবিনাশ বাবু। ভাবলেন রান্নার তোড়জোড়ে হয়তো কোনো ভাবে গিন্নীর স্মরণ নেই।

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরেও যখন কাঙ্খিত দ্রব্যটি পেলেন না, তখন ব্যস্ত সমস্ত হয়ে কলতলা থেকে কয়েক বার হাঁক পাড়লেন,  “কইগো, আমার চানের গরম জলটা এখনও দিয়ে গেলে না? এই মেঘলা দিনে কি ঠাণ্ডা জলে চান করব নাকি?  বলি, আর কত দেরি হবে…?”

এইবার এক মজার কাণ্ড ঘটল।

রান্নাঘর থেকে খুন্তি হাতে শুধু যে ভারতী দেবী বেরিয়ে এলেন তাই নয়, পাশাপাশি ওঁর ছেলেমেয়েকেও ভুরু কুঁচকে বিস্মিত দৃষ্টিতে কাছাকাছি হাজির হতে দেখা গেল।

অবিনাশ বাবু একটু থতমত খেয়ে যখন ভাবছেন সাতসকালে অন্যায্য কিছু চেয়ে বসেছেন কিনা, ঠিক তখনই ভারতী দেবী খরখরে গলায় বলে উঠলেন, “এত বছর বিয়ে হয়ে গেল, এমন আবদার কখনও শুনিনি বাপু। যে মানুষ শীতগ্রীষ্মবর্ষা দু’বেলা ঠাণ্ডা জলে চান করে, সে কিনা এই সামান্য মেঘ বাদলার দিনে গরম জল চাইছে!”

অবিনাশ বাবু বুঝলেন ফের কোথাও একটা গোলমাল হয়েছে। তড়িঘড়ি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ‘শরীর একটু ম্যাজম্যাজ করছে’ এই অজুহাত দিয়ে ব্যাপারটা তখনকার মতো চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেন।

এরপর থেকেই ওঁর চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে আরও সজাগ হয়েছেন অবিনাশ বাবু। আজকাল আরও হিসেব কষে মেপে কথা বলেন। স্মৃতির সাথে মিলছে না এমন ঘটনা ঘটলেই যতটা সম্ভব বিস্ময় প্রকাশ না করার চেষ্টা করেন। উনিশ বছরের যে মেয়ে এতকাল বাপের ভয়ে ওঁর চোখের দিকে ঠিক মতো তাকিয়ে কথা কইতে পারত না, সেই মেয়ে যখন লাফাতে লাফাতে বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখতে যাওয়ার জন্য টাকা চাইতে আসে তখন চুপচাপ পার্সের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন অবিনাশ বাবু। শান্তশিষ্ট গোবেচারা ছেলের পিতা হিসেবে যে প্রচ্ছন্ন গর্ব ছিল মনে, চোখের সামনেই তা চুরমার হয়ে যায়, যখন দেখতে পান ফুটবল মাঠে পাড়ার ছেলেদের সাথে ঝামেলা করে ওঁর সুপুত্র জামাকাপড় ছিঁড়ে আহত অবস্থায় সর্দপে বাড়ি ফেরে।

তবে সব পরিস্থিতিই যে এমন অপ্রীতিকর তা নয় মোটেও। হঠাৎ কী মনে হতে ভয়ে ভয়ে অনেকদিন পর ওঁর দু’তিনখানা ব্যাঙ্কের পাসবই আপডেট করাতে গিয়েছিলেন অবিনাশ বাবু। মাস তিনেক আগে গ্রামের কিছু পুরানো জমিজমা বিক্রির লাখ পাঁচেক টাকা যে ইতিমধ্যে ওঁর সেভিংস অ্যাকাউন্টে সযত্নে গচ্ছিত আছে, এই সংবাদ নতুন করে জানার পর মনে যে বেশ পুলক জাগেনি তা অবশ্য অস্বীকার করতে পারবেন না।

তালিকাটা ক্রমশই বাড়ছে। তবে বাড়াবাড়ি কিছু নয়। শুধু অবিনাশ বাবুর সাতচল্লিশ বছরের চেনা দুনিয়াটা একটু আধটু পাল্টে গিয়েছে। বাদবাকি সব একই আছে। সেই পুরানো চাকরি। সাড়ে পাঁচটার ভিড় বাসের হ্যাণ্ডেল ধরে ঘর্মাক্ত শরীরে বাড়ি ফেরা। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে গিন্নীর সাথে নিত্য ঠোকাঠুকি সব আগের মতোই চলছে নিয়ম মেনে। এই চেনা অচেনা পরিবেশের সাথেও একটু একটু করে তাই মানিয়ে নিচ্ছেন অবিনাশ বাবু। স্বপ্ন দেখার পরিমাণ ইদানীং অনেক কমেছে।  রাতেও আর তেমন নিদ্রাভঙ্গ হয় না।

মাস তিনেক পর নৈহাটিতে ওঁর শ্যালকের বিবাহবার্ষিকীর ঘরোয়া অনুষ্ঠান সেরে কর্তাগিন্নী ট্রেনে ফিরছিলেন। দোক্তা দেওয়া একখানা পান খেয়ে মাথাটা একটু ঝিমঝিম করছিল অবিনাশ বাবুর। মুখটা একটু হালকা করার জন্য সিট ছেড়ে উঠে কামরার দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। পিক ফেলার জন্য যেই না একটু বাইরের দিকে মুখ বাড়িয়েছেন, অমনি হঠাৎ মাথাটা ভীষণ টলে উঠল। দরজার হাতল থেকে শিথিল হয়ে গেল হাতের মুঠি।

ব্যাস,  আর কিছু মনে নেই অবিনাশ বাবুর। সব ভোঁ ভোঁ ব্ল্যাক আউট।

***

“কইগো, বেলা যে সাড়ে আটটা বাজতে চলল। বলি আর কতক্ষণ পড়ে পড়ে ঘুমোবে শুনি? …আচ্ছা ঘুমকাতুরে মানুষকে নিয়ে সংসার পেতেছি বটে!”

ভারতী দেবীর ক্রমাগত তর্জন গর্জনে বেশ বিরক্ত হয়ে মশারি থেকে মুখ বাড়ালেন অবিনাশবাবু, “আঃ ছুটির দিনেও একটু শান্তি দিলে না!”

সহধর্মিণী এত সহজে নিরস্ত হলেন না। “ছুটির দিন তো কী! আজ মেয়ে জামাই বাড়ি আসছে সে কথা খেয়াল আছে? বেলা করে বাজারে বেরোলে আজও সেই পচা মাছ সবজিই তোমায় গছাবে শেষ পর্যন্ত।”

অবিনাশ বাবু আর দ্বিরুক্তি না করে ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে ব্যাজার মুখে কলতলায় চলে গেলেন। ওঁর গুণবতী কন্যা আঠেরো বছরেই পালিয়ে গিয়ে এক মোটর মেকানিককে বিয়ে করেছিল। সেই অপছন্দের জামাই বাবাজীবনকেই এখন খাতির করে ইলিশ চিংড়ি খাওয়াতে হচ্ছে! নিজের একটা ছেলে থাকলে ভারী বয়েই যেত ওঁর জামাই আদর করতে।

বাজারের থলে হাতে বাইরে বেরোতেই পরিমল ঘোষালের সাথে দেখা হয়ে গেল। একটা টোটো গাড়িতে একগাদা মালপত্র চাপিয়ে পুনরায় নিশ্চয়ই দেশে বিদেশে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার ফন্দি করে বেরিয়েছেন। বেশ আছেন বটে ভদ্রলোক। সুখ যেন চোখ মুখ দিয়ে উথলে উঠছে। সারা জীবন বিয়ে থা তো করলেন না। তাই সংসারের জ্বালা যন্ত্রণা আর ভোগ করতে হল না কোনদিন।

মোড় ঘুরতেই ক্যাথলিক গির্জা থেকে রবিবার সকালের প্রার্থনার সুমধুর সুর ভেসে এল। ইচ্ছে করেই হাঁটার গতি একটু মন্থর করে দিলেন অবিনাশ বাবু। বড় মন ভালো করে দেওয়া গান। এই নতুন জগতে যখন থেকে পুনরায় হুঁশ ফিরেছে, আসে পাশের পৃথিবীতে আরও নতুন নতুন অনেক পরিবর্তন চোখে এসেছে। তবে এসব নিয়ে আর বিন্দুমাত্র মাথা ঘামান না উনি।

মহাবিশ্বের আর কতটুকু চেনা জগতেরই বা খোঁজ পেয়েছেন ইতিমধ্যে। নশ্বর দেহের খাঁচার বাইরেও এক অবিনাশী অন্তহীন দুনিয়া রয়েছে। পিতৃদত্ত অবিনাশ নামটা যে কত সার্থক তা নিজের জীবনেই ইতিমধ্যে দু’বার অনুভব করা হয়ে গিয়েছে। মরণেও ওঁর বিনাশ নেই।

মৃত্যু  আসলে এক শরীর থেকে আরেক শরীরে স্থানান্তরণের নাম। জীবন চেতনার মূল সূত্রটি ব্রহ্মাণ্ডের কোনো এক অদৃশ্য কোল্ড স্টোরেজে অনন্ত কালের জন্য সুরক্ষিত আছে। গভীর ঘুমের অর্ধচেতন অবস্থায় মাঝে মধ্যেই কিছু কিছু পূর্বজীবনের স্মৃতি, স্বপ্নের মতো ভেসে ওঠে মানস পটে।

অবিনাশ বাবু জানেন এই এক চেনা জগতে হঠাৎ যদি জীবন থমকে যায়,  তাহলেও জীবনের অন্তহীন স্রোত প্রতিহত হবে না। কোনো না কোনো এক সমান্তরাল দুনিয়ায় পুনরায় নব কলেবরে, নতুন পৃথিবীতে পুনর্জীবন ফিরে পাবেন। 

সূচিপত্র

কল্পবিজ্ঞান

গল্পবিজ্ঞান

বিজ্ঞান নিবন্ধ

পোড়োদের পাতা


Copyright © 2011. www.scientiphilia.com emPowered by dweb