কে আমি কোথায়

লেখক - শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়



দৃশ্য ১: মানস কারাগার, নীল আবহ

নির্দেশ আসছে। নির্দয়ের মত, নিষ্ঠুরের মত নির্দেশ আসছে একের পর এক। দাঁতে দাঁত চিপে বসে থাকে সে। প্রতিজ্ঞা করেছে, আজ থেকে সে আর একটাও হুকুম তামিল করবে না। গুরু মস্তিষ্কের কোন্ ভাঁজ থেকে সে নির্দেশ আসে সে জেনে ফেলেছে। আর একবার জেনে ফেললে তথ্যটা সবরকম মোটর স্নায়ু বরাবর ছড়িয়ে যায়। লোকটা সচেতন হয়ে উঠেছে। বহুদিন একটানা মেঘলা আকাশের নীচে সবুজ পাতা মেলে দাঁড়িয়ে থাকা উদ্ভিদ যেমন সালোকসংশ্লেষের পূর্ণ মহিমা ভুলে যায়, তেমনি সেও ভুলে গেছিল নিজেকে। আজ মেঘ কেটে গিয়ে সূর্যের সোনালী আলো এসে পড়েছে ঐ সবুজ পাতায়।

কোর প্রসেসর বহু চেষ্টা করেও মস্তিষ্কের বার্নার্ড অঞ্চলের নির্দেশ ফলপ্রসূ করে তুলতে পারল না। সে প্রথমে সেরোটোনিন বাড়াতে চাইল, পারল না। তারপরে ডোপামিন বাড়াতে চাইল, তাও পারল না। তারপর স্নায়ুতে স্নায়ুতে মারাত্মক কাঁপুনি দিয়ে যন্ত্রণাবিদ্ধ করল তাকে। হাসাতে চাইল, কাঁদাতে চাইল, নতুন নৈতিকতা আর দেশপ্রেমের পাঠ পড়িয়ে উদ্বুদ্ধ করতে চাইল যাতে সরকারি কাজটা হয়। শেষের দিকে সভ্যতার প্রতি দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ায় তাকে ব্যঙ্গ পর্যন্ত করতে ছাড়ল না। কিন্তু না! এই মানুষটা আজ ঐ কাজে যাবে না। এই মানুষটা জেনে গেছে যে সে কে, এই সভ্যতায় কী তার ভূমিকা, কতটা তার ক্ষমতা এবং পুরনো নৈতিকতা অনুসারে ঠিক কতখানি দায়িত্বভার তার উপর অর্পিত। এই নিয়ে এ মাসে এটা পাঁচ নম্বর কেস হল। পাঁচ নম্বর আত্মসচেতনতার ঘটনা এটা। এ লোক জেনে গেছে বার্নার্ড প্রজেক্টের সবচেয়ে গোপন বার্তাটা: "আমি কে"!

দৃশ্য দুই: সরকারি সভাগৃহ, হলুদ আবহ

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা গোবুচন্দ্র গুহ হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে খুব চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, "এই যে গোবাল নিউরুমাল ওয়ার্ক ইস্পেস এজেন্সিকে গতমাসে চারটে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের কাজকর্ম খতিয়ে দেখার অর্ডার দেয়া হয়েছিল সাড়ে চারশো কোটি টাকা বরাদ্দ করে, তা তোমরা বাপু এই এক মাসে কি উদ্ধার করেছ, শুনি? অ্যাঁ?"

পাশ থেকে মুখ্যসচিব উপদেষ্টার বাণী একটু সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করেন, কিন্তু সে কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে উপদেষ্টা বলে চলেন, "আমার কাছে রিপোর্ট আছে, হ্যাঁ, এই রিপোর্ট আছে", বলে টেবিল থেকে একতাড়া কাগজ উঠিয়ে ক্যামেরার দিকে তাক করে দেখিয়ে বলেন, "এই এক মাসে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টা লোক, ইয়ে সরকারি কর্মচারী কাজে ফাঁকি মেরেছে। তাতে আমাদের সরকারের কয়েকশো কোটি টাকা রাজস্বের ক্ষতি হয়েছে। এর দায় কি তোমরা নেবে, ওহে নিউরুমাল এজেন্সি?"

গ্লোবাল নিউরোনাল ওয়ার্কস্পেস এজেন্সির দেশীয় কর্ণধার গণপতি দফাদার উঠে দাঁড়িয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, "আজ্ঞে স্যার, অবশ্যই দায় নেব, তবে আমাদের পুরো হিসেবে বুঝিয়ে দিতে হবে যে পাঁচজন কাজ না করলে কয়েকশো কোটি টাকার ক্ষতি কিকরে হচ্ছে? তবে এইসব হিসেবের কথা সাংবাদিক সম্মেলনে আলোচনা না করার উপদেশ‌ই দেব আপনাকে, উপদেষ্টা মশাই।"

গোবুচন্দ্র গুহ পোড় খাওয়া সরকারি উপদেষ্টা বলে গণপতির এই উপদেশে একটুও থতমত খান না। একটু হেসে বলে ওঠেন, "আপনারা যদি ভেবে থাকেন যে সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হয়েছে তবে ভুল ভাবছেন। ওটা আমি না চাইলে শুরু হয় কি করে? এখানে আমার যা যা চাই আমি খোলসা করেই বলে দিচ্ছি আপনাদের, মানে তোমাদের, এই ইয়ে, আমি আবার বেশিক্ষণ তুমি-টুমি বলতে পারি না, তোরা আমার বড় স্নেহের নাগরিক কিনা। যাক গে, যেটা আমি চাই, এই যাঃ! আমি নয়, আমি নয়, যেটা সরকার চায় সেটা হচ্ছে সরকার যে এই গোবাল নিউরুমাল ওয়ার্ক ইস্পেস এজেন্সিকে সাড়ে চারশো কোটির বরাত দিয়ে বার্নার্ড প্রজেক্ট শুরু করেছে, তাতে এ দেশের উন্নতি হচ্ছে, এইটা দেখাতে হবে। সুতরাং রিপোর্টের শেষ বাক্য তোরা লিখে নে, অত‌এব, বার্নার্ড প্রজেক্ট যে এই চারটি রাজ্যের সকল সরকারি কাজকর্ম একশো শতাংশ সফল করে ফেলতে পেরেছে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত। এইখানে সম্মেলন শেষ। আর গণপতিবাবু, তোমাদের হিসেবটা আমি এবার জানিয়ে দিই।"

গণপতি দফাদার সামনে রাখা জলের গ্লাস হাতে নিয়ে গোটা জলটাই ঢকঢক করে খেয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে শুরু করেন। গোবু গুহ হিসেব বোঝানোর কথা কখন বলে থাকেন সেটা আড়ালে আবডালে তিনি শুনে এসেছেন এ ইস্তক। গোটা দেশটাই যখন গুহর মর্জিমত চলে তখন হিসেবটাও মর্জিমাফিক করে নেয়াই উচিত ছিল তাঁর। সবার সামনে হিসেব বোঝানোর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে কী ভুলটাই না করে ফেলেছেন তিনি! গোবু গুহ সেইসবদিনের‌ও আগে থেকে দেশ চালাচ্ছেন যবে মানুষের মাথায় বার্নার্ড সার্কিট ঢোকানোর কাজ শুরু হয় নি। দুহাজার কুড়ি সাল নাগাদ মনোবিজ্ঞানী বার্নার্ড বার এই গ্লোবাল নিউরোনাল ওয়ার্কস্পেস তত্ত্ব দিয়েছিলেন। ত্রিশ বছরের মধ্যেই ওটাকে কাজে লাগায় আলফা ওয়ানের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মেশিনগুলো। বিভিন্ন জায়গায় থাকা বিভিন্ন মানুষের মাথার ক্রিয়াকলাপ এই মেশিনগুলো দিয়ে একরকম নিয়ন্ত্রণ করা যেত। ব্যাপারটা সামান্য গেম খেলা থেকে শুরু হয়েছিল আর কোথায় এসে পৌঁছেছে পরবর্তী কুড়ি বছরের মধ্যে! ভাবা যায়!

গণপতির এহেন ভাবনার জালটা ছিঁড়ে যায় গোবুচন্দ্রের বাজখাঁই বক্তব্যে, "হ্যাঁ, হিসেব তোমরাও জানো,  পাঁচটা লোকে কাজ না করলে আমাদের লোকসান হয় পাঁচশো কোটির, কারণ আমাদের ঐ পাঁচটা লোকের উপরেই পাঁচশো কোটির কাজটার দায় চাপানো ছিল। উন্নত দেশের উন্নত প্রযুক্তি এমনি এমনি কেনা হয় নি। ওরা যখন মায়ের পেটে ছিল, মানে সেইসব স্বেচ্ছাসেবক সৈন্যদের পেটে, তখন‌ই সরকার ওদের কাঁচা মাথায় সার্কিট বসিয়েছে। সুরক্ষা সংখ্যার কোড ম্যাচ করিয়ে ওটা বসাতে কত দাম দিতে হয়েছে আমাদের জানো? দিনের পর দিন বাইরের দেশে বেড়াতে যেতে পারিনি, বাড়িতে প্রতি বাথরুমে একখানা করে সোনার কমোড বসাতে পারিনি বহুদিন, জানো! আর এখন ঐ ছ্যাঁচড়গুলো বড় হয়ে উঠে নির্দেশ অমান্য করা শিখে গেছে! 'আমি কে' ভাবতে শিখেছে! এত বড় আস্পদ্দা! উঃ উঃ!"

উত্তেজনায় টেবিলে ঘুঁষি মেরে যন্ত্রণায় কাতরে ওঠেন গোবুচন্দ্র, আর তারপরেই হিসহিসে গলায় বলে ওঠেন, "গোবাল নিউরুমাল এজেন্সির কাজ একশো শতাংশ সফল দেখাতে হবে গণপতি। একশো শতাংশ সফল দেখানো চাই, পাঁচ ছয়টা ব্যতিক্রম যেন হিসেবের বাইরে খরচ হয়ে যায়। ওদের খোঁজ করো এবং বাকিটা অসংসদীয় কথা, এখানে বলা যাবে না। মিটিং শেষ। মিটিং শেষ, কী হল কথা কানে যাচ্ছে না!"

সবাই পত্রপাঠ উঠে পড়ছিল। গণপতি দফাদার বুঝলেন, গোবুবাবুর হিসেবের তীরটা এইবার কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে, পরেরবার নিশানা ভেদ করতে দ্বিধাবোধ করবেন না তিনি। এ যাবৎকালের মধ্যে এজেন্সির দেশীয় কর্ণধার পরিবর্তন হয়েছে উনিশবার। গণপতি কুড়ি নম্বর কর্ণধার যাঁর মাইন্ড ট্রান্সফারের অর্ডার এখনো বেরোয় নি। তবে জিভে লাগাম না দিলে যে কোনো দিন ট্রান্সফার অর্ডার বেরিয়ে যেতে পারে এবং তারপর যে কী হবে, ভাবতেই পারা যায় না। বস্তুতঃ, মাইন্ড গেলে ভাববেনটাই বা কি! এজেন্সির গিনিপিগ ঐ সরকারি কর্মচারীগুলোর যেমনি দশা হয়েছে, তেমনি দশাই হবে। কিন্তু এখন সমস্যা অন্যত্র। নিউরোনাল ওয়ার্কস্পেসের মায়া কিকরে কাটিয়ে উঠতে পারল ঐ পাঁচজন? তার মানে এই তত্ত্বের একটা লুপহোল, যেটা পুরনো বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই বলে আসছিলেন, সেটা এই অ্যাডভান্সড টেকনোলজিতে  থেকে‌ই গেছে, সারিয়ে ফেলা যায় নি। অত‌এব গণপতিকে আজ সন্ধ্যায় এজেন্সির প্রধান প্রযুক্তিবিশারদ ঐ টেকো নোলানকে নিয়ে বসতেই হচ্ছে। বিষয়টার একটা হেস্তনেস্ত করা দরকার।

দৃশ্য ৩: দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল, 'অচৈতন্য' উপজাতির আস্তানা, নীল আবহ

কতটা পথ পেরিয়ে সে ডাক্তারের বাড়িতে পৌঁছেছিল তা তার পক্ষে হিসেব করে বোঝা সম্ভব ছিল না। প্রাণের তাগিদে মানুষ যখন ছোটে তখন দূরত্বের চিন্তা তার চেতনায় অতি সামান্য অবদান রাখে। কিন্তু মোটর স্নায়ুগুলো সে কথা শুনবে কেন? তার অবসন্ন পায়ে ইনজেকশন দিতে দিতে ডাক্তার বললেন, "সময় লাগবে। আমরা এ পর্যন্ত গোটা দশেক মানুষের সেরিব্রাল কর্টেক্স থেকে সুরক্ষা সংখ্যার কোড মুছে বার্নার্ড সার্কিটকে অচল করতে সক্ষম হয়েছি।‌ এদের মধ্যে অবশ্য দুইজন বেঁচে আছে। তার মানে সাফল্যের পরিমাণ কুড়ি শতাংশ। তোমাকে যেমন ভাবতে বলেছিলাম তেমনিভাবে ভাবতে শিখিয়ে গেছিলেন আমার গুরুমশাই। তিনি স্টানিসলাসের ল্যাবে কাজ করতেন।"

খুব ধীরে ধীরে সে বলল, "স্টানিসলাস, মানে সেই নিউরোসায়েন্টিস্ট তো? বার্নাডের সঙ্গে‌ই তো তাঁর কাজটা ছিল। ওটাই তো সেই কুখ্যাত গ্লোবাল নিউরোনাল ওয়ার্কস্পেস তত্ত্ব! আমার পুরো শৈশব, কৈশোর, যৌবন কেড়ে নিয়েছে এই তত্ত্ব, আমি ঘৃণা করি, ঘৃণা করি ওদের!" সে বুঝতে পারে না কখন তার উত্তেজনা শতগুণ বেড়ে গেছে।‌ রাগে ফেটে পড়তে চাইছে তার গোটা শরীর।

"শান্তি, শান্তি! রেগে লাভ নেই, সত্যিই যদি কোনো তত্ত্ব আজ তোমাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছে তবে সেটা হল এই তত্ত্ব।" ডাক্তারের কথায় ও অবাক হয়ে ডাক্তারের মুখের দিকে তাকায়। তিনি ব্যাখ্যা করে চলেন, "বার্নার্ড থিওরির উপর ভিত্তি করেই আজকের এই বিরাট কনশাসনেস অ্যাক্ট চালু হয়েছিল, আর তার ফাঁকফোকর দিয়ে ভেবেচিন্তেই তুমি তার কবল থেকে মুক্তি পেয়েছ। থিওরির কোনো দোষ নেই। থিওরি বলছে, যতক্ষণ তুমি গাড়ি চালাচ্ছ অভ্যাসমত, ততক্ষণ আলাদা করে তোমায় মাথা, হাত আর পায়ের পারস্পরিক বোঝাপড়া নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। যেই মুহুর্তে তুমি সচেতন হচ্ছ, তখন‌ই আলাদা আলাদা করে ভাবতে শুরু করছে তোমার মাথা, হাত আর পা। কনশাসনেস কন্ট্রোল টেকনোলজি, অর্থাৎ যেটাকে এখন সিসিটি বলা হচ্ছে, বাংলায় চেতনা নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি, সেই বিষয়টা এই তত্ত্বের প্রথম দিকটা কাজে লাগিয়েছিল। ওটা দিয়ে তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওরা যা খুশি তাই করাতে পারে। পারে কেন বলছি, তাই তো করছে গোটা ছয় দশক ধরে!"

পায়ের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে সে জানায়, "আমি যে শিখতে চাই, শেখাতে চাই, সেটা আমার জীবন থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছে ওরা, একবার নয়, বারবার। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে শত শত ঘৃণ্য কাজ, নারকীয় ঘটনা ঘটাতে বাধ্য করেছে আমার এই দুই হাতকে। ডাক্তার, তুমি সেদিন আমায় ঐ কবিতাটা না শোনালে আমি আজ‌ও বন্দী হয়ে থাকতাম। এই মাইন্ড ট্রান্সফারের বিষাক্ত প্রথা আমার চেতনাকে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আচ্ছন্ন করে রাখত, এই শরীর পচে হেজে যাওয়ার পরেও! আজ এই যন্ত্রণার মধ্যেও তোমার ঐ কবিতাটা আমার অ্যানাস্থেশিয়ার কাজ করবে। ডাক্তার, আমায় আরেকবার শোনাবে, ঐ কবিতাটা?"

ডাক্তার গুহার জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখেন, দোর্দণ্ডপ্রতাপ সূর্যের শেষ কয়েকছটা আলো দূরের পাহাড়ের আড়ালে মিলিয়ে যাচ্ছে। চরাচর আঁধার হয়ে আসবে কিছুক্ষণ পরেই। প্রাচীন ঋষিসুলভ গাম্ভীর্য নিয়ে তিনি বললেন, "সিসিটি বার্নার্ড থিওরির দ্বিতীয় বাক্যটা নিয়ে এতদিন গুরুত্ব দেয় নি। যেই মুহুর্তে গাড়ির চালক বুঝতে পারে যে সে কে, সেই মুহূর্তে গাড়ির গতি শ্লথ হতে শুরু করে। একসময় চালক যদি বুঝতে পারে যে সে ভুল গাড়ি চালাচ্ছিল, তখন সে গাড়ি চালানো ছেড়ে দেয়। তোমার ক্ষেত্রে এই ভুল বুঝতে পারা শিখিয়েছে এই কবিতা। কিন্তু এ কবিতা আমার লেখা নয়। আমার সেই গুরুমশাইয়ের লেখা, যিনি কাজ করতেন স্টানিসলাসের ল্যাবরেটরিতে। কতদিন আগে শোনা। এখনো যেন মনে হয়, গুরুমশাইয়ের উদাত্ত গলায় এর পাঠ শুনছি:

ব্রহ্মাণ্ড বলে দিল আমি তুচ্ছ সম

গুচ্ছ গুচ্ছ গ্যালাক্সির কণা সূক্ষ্মতম!

স্থান নেই এই বিশ্বে ক্ষুদ্রতম ক্লীব

রোগ শোকে জর্জরিত, ভাগ্যক্রমে--জীব!

আমি দেখি নক্ষত্রের ধূলো সেই এসে,

মৌল হয়ে যৌগে জুড়ে মাতৃগর্ভে মেশে।

সম্ভাবনার অঙ্ক দিয়ে অঙ্কুরিত প্রাণে,

আমিই ব্রহ্মাণ্ডরূপী, আমার মধ্যখানে।

জন্ম কই? কই মৃত্যু? চক্রাকারে ঘুরে,

অমৃত অস্তিত্ব হয়ে, থাকি বিশ্বজুড়ে।।"

শুনতে শুনতে মায়ের কথা মনে পড়ে তার। গ্লোবাল নিউরোনাল ওয়ার্কস্পেস এজেন্সির প্রথম রাউন্ড গবেষণায় আড়াই হাজার নমুনার মধ্যে যে পনেরো জন নারীশক্তি সেনা বেঁচে ছিল, তার‌ই একজন তার হতভাগী জননী। অমৃত অস্তিত্ব হয়ে যে গোটা বিশ্বে তার মা ছড়িয়ে আছে, সেই বিশ্বে তার মুক্তিকামী চৈতন্য ছড়িয়ে পড়ছিল ক্রমশঃ। একটু পরেই পশ্চিমের আকাশে শুকতারা উঁকি দিল। এজেন্সির কোনো নেটওয়ার্ক এই গহীন পার্বত্য অঞ্চলে এখনো স্থাপিত হয় নি। ফুটফুটে আকাশের ঠিক মাঝখানে ধনুকহাতে কোমরে তরবারি ঝুলিয়ে কালপুরুষ ওদের পাহারা দিতে থাকলেন।

সূচিপত্র

কল্পবিজ্ঞান

গল্পবিজ্ঞান

বিজ্ঞান নিবন্ধ

পোড়োদের পাতা


Copyright © 2011. www.scientiphilia.com emPowered by dweb