রহস্যময় পালসার

লেখক - ইন্দ্রনীল মজুমদার

আমরা এই প্রবন্ধে এক রহস্যময় মহাজাগতিক বস্তু ‘পালসার’ নিয়ে আলোচনা করব। এ কিন্তু ‘বাজাজ পালসার’ নয় বরং এক ধরনের তারা যা কি না খুবই রহস্যময় এবং বিজ্ঞানীদের বড়োই ভাবায়। বলতে গেলে, পালসার হল ক্ষুদ্র নিউট্রন তারা যারা নিয়মিত সময় অন্তর ক্ষণস্থায়ী বেতার-তরঙ্গ পাঠিয়ে চলেছে। তাই, এদের বিকিরণ সাধারণ দূরবীনে নয় বরং বেতার দূরবীনে ধরা পড়ে। এদের সম্পর্কে মনে করা হয় যে, এরা এক ধরনের নিউট্রন তারা যারা ঘূর্ণনকাল বেতার-তরঙ্গ ছড়ায়।

আচ্ছা, কেমন আলোক-রশ্মি বিকিরণ করে থাকে পালসার? বলা যায় যে, পঞ্চাশটি সূর্য একসাথে মিলে যে আলোক-রশ্মির বিকিরণ ঘটাবে তা একটা পালসারের আলোক-রশ্মির বিকিরণের সমান। এর সাথে সবচেয়ে মজাদার ঘটনা এই যে, নির্ভুলভাবে  সময় মাপার বিশেষভাবে তৈরি ঘড়ি ক্রোনোমিটারকেও  হার মানিয়ে প্রতি সেকেন্ডে তিরিশ বার করে ঝলকে ঝলকে আলোর বিকিরণ ঘটাচ্ছে এমন পালসারও পাওয়া গেছে। এদের আয়তন কিন্তু বড়োই ক্ষুদ্র। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, একটি পালসারে মাত্র 5120 কিলোমিটার যা আমাদের পৃথিবীর থেকেও কম (পৃথিবীর ব্যাস 12,742 কিলোমিটার। এই ক্ষুদ্র আয়তনের জ্যোতিষ্ককে  যদি কারুর গ্রহ মনে হয়, তবে সেটা নিতান্তই ভুল হবে কেননা কোনো গ্রহেরই  ক্ষমতা নেই অমন নিয়মিত হারে শক্তিশালী বেতার-তরঙ্গ তৈরি করে পাঠাবার।

চন্দ্র এক্স-রশ্মি মানমন্দির থেকে তোলা PSR B1509−58 পালসারের ছবি

1967 সালের 28শে নভেম্বর উত্তর আইরিশ জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী জোসেলিন বেল বার্নেল ও ইংরেজ বেতার জ্যোতির্বিদ অ্যান্টনি হিউইশ প্রথম পালসার আবিস্কার করেন।এবার আমরা জানব কিভাবে পালসার নক্ষত্র তৈরি হয়। আমরা জানি যে, প্রতিটা নক্ষত্রই সৃষ্টিপর্ব থেকে ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত জীবনের নানা পর্যায়কালের মধ্যে দিয়ে যায় অনেকটা মানব জীবনেরই মতো। যাইহোক, শ্বেতবামন (White dwarf) হল সূর্যের থেকে বৃহদাকার নক্ষত্রের জীবনের সেই পর্যায় যখন সেটি নিজের প্রতি প্রবল অভিকর্ষের দরুন  সংকুচিত হতে হতে পৃথিবীর মতো বা তার থেকেও ছোট এমন কোনো বস্তুর সমান আয়তনে চলে আসে। তখন নক্ষত্রটির মধ্যে থাকা সমস্ত বস্তু বা কণাই এক অকল্পনীয় ঠাসাঠাসি অবস্থায় থাকে। এই পরম ঘন সন্ধিবদ্ধ অবস্থায় দেখা যাবে যে এক চামচ বস্তুর ভর এক টনের কাছাকাছিও হতে পারে। এতটাই তার ওজনের বৃদ্ধি ঘটে! আবার, প্রবল আকর্ষণের দরুন ওই মৃত্যুপথযাত্রী তারাটি আরও সংকুচিত হতে হতে মাত্র কয়েক কিলোমিটারের ব্যাস বিশিষ্ট জ্যোতিষ্কের আকার নিতে পারে। আর, এমনটা তখনই সম্ভব হবে যখন পরমাণুর মধ্যে থাকা বিভিন্ন কক্ষে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রনরা ওই বিপুল ঠাসাঠাসি বা প্রবল চাপের ফলে পরমাণু কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটনদের সাথে যুক্ত হয়ে নিউট্রনদের তৈরি করবে। আমরা জানি যে, প্রোটনের আধান ধনাত্মক ও ইলেকট্রনদের আধান ঋণাত্মক, তাই আকর্ষণের দরুন ওরা মিলিত হলে আধানহীন নিউট্রনদেরই তৈরি করবে।আর,নিউক্লিয়াসে প্রোটনদের পাশাপাশি নিউট্রনরাও তো এমনিতেই থাকে।তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, সেই নক্ষত্রটিতে নিউট্রনে ভরে উঠবে ও নক্ষত্রটি ক্রমশ সংকুচিত হতে হতে এক নিউট্রন নক্ষত্রে পরিণত হবে। বিজ্ঞানীদের মতে, পালসাররা নিউট্রন নক্ষত্রদের মতো ক্ষুদ্র আকৃতিরও হতে পারে। যদিও, বিজ্ঞানীদের অনেকেরই মত যে, পালসাররা নিউট্রন নক্ষত্র যারা ঘূর্ণনকালে নিয়মিত সময়ের অন্তর প্রসারিত ও সংকুচিত হয়ে শক্তিশালী বেতার ও আলোক তরঙ্গ পাঠিয়ে থাকে এবং এরা কিভাবে নিয়মিতভাবে প্রচারিত ও সংকুচিত হয়ে  উক্ত বেতার ও আলোক তরঙ্গ তৈরি করে থাকে তারও তাত্ত্বিকভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা বিজ্ঞানীরা করেছেন। পালসার সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে ভবিষ্যতে আরও গবেষণার ফলাফলের জন্য আমাদের মুখিয়ে থাকতেই হবে।

সূচিপত্র

কল্পবিজ্ঞান

গল্পবিজ্ঞান

বিজ্ঞান নিবন্ধ

পোড়োদের পাতা


Copyright © 2011. www.scientiphilia.com emPowered by dweb