বারবারা ম্যাক্ ক্লিন্টক : এক নোবেলজয়ী মহিলা বিজ্ঞানী

লেখক - ড. শতাব্দী দাশ


 

বারবারা ম্যাক্ ক্লিনটক একজন নোবেলজয়ী আমেরিকান বিজ্ঞানী।তাঁর জন্ম ১৯০২ সালের ১৬ জুন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের  কানেক্টিকাটের হাটফোর্ডে।তাঁর স্কুলজীবন কাটে ইরামাস হল হাই স্কুলে। পরে তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৩ সালে বি.এ., ১৯২৫ এ এম.এ. এবং ১৯২৭ সালে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি পান। 

বারবারা যখন ১৯২১ সালে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, তখন বংশগতি (Genetics) বিষয়ে একটিমাত্র কোর্স পড়ানো হত। পড়াতেন অধ্যাপক সি.বি. হাচিনসন্ (C.B.Hutchinson)। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পেয়ে চলে যান। ১৯২২ সালে বারবারা বংশগতির কোর্স পড়া শেষ করলেন। ঐ সময় অধ্যাপক হাচিনসন্ তাঁকে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হওয়া বংশগতির অপর একটি কোর্সে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানান। অধ্যাপকের আমন্ত্রণেই বারবারা 'বংশগতি' বিষয়টির প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হন এবং নিজেকে একজন বংশগতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে উৎসাহিত হন।

গবেষক জীবনে তিনি ভুট্টার দানার ওপরের বিভিন্ন রঙের দাগ ও ফোঁটার বংশগতিজনিত কারণ আবিষ্কার করেন । এই রঙের তারতম্যের জন্য তিনি একধরণের ক্রোমোজোমের অংশকে চিহ্নিত করেন , যা বিভিন্ন ক্রোমোজোমের মধ্যে স্থানান্তরিত হতে পারে। এর নাম বারবারা দিলেন 'ট্রান্সপোসেবল্ জেনেটিক এলিমেন্ট' (Transposable Genetic Element) । প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় ১৯8৮ সালে। পরে আরও বিভিন্ন গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। ১৯৫১ সালে প্রকাশিত Cold Spring Harbor Symposium on Quantitative Biology র গবেষণাপত্রটি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে তাঁর প্রকাশিত গবেষণাতথ্য জটিল হওয়ায় বিজ্ঞানীরা ঠিক বুঝতে পারেন  নি। এছাড়াও, তিনি শুধুমাত্র ভুট্টাকেই তাঁর গবেষণার উপাদান হিসেবে নিয়েছিলেন এবং ক্রোমোজোমের স্থান পরিবর্তন ভুট্টা ছাড়া অন্য কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণীতে দেখা যায় নি। ফলে এই ঘটনা বিজ্ঞানের জগতে সেরকম গুরুত্ব পেল না। 

ষাট ও সত্তরের দশকে অবস্থার পরিবর্তন হয় এবং তখন ব্যাক্টেরিয়া  ও ড্রসোফিলায় Transposable Genetic Element আবিষ্কৃত হয়। এরপরেই বিজ্ঞানীরা বারবারা ম্যাক ক্লিনটকের আবিষ্কারের গুরুত্ব বুঝতে পারেন। জিনগত বৈশিষ্টগুলো কীভাবে এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে বাহিত হয় , সেবিষয়েও গবেষণা  করেন  তিনি। 

কর্মজীবনে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। প্রথমে কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ইন্সট্রাক্টর ছিলেন। ন্যাশনাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট ও গুগেনহেইম ফাউন্ডেশনের ফেলো ছিলেন। আবার কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহকারী হন এবং মিসৌরি  বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। ওয়াশিংটনের কার্ণেগী ইন্সটিটিউটের স্টাফ সদস্য ছিলেন তিনি।

বিভিন্ন পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। ১৯৭২ সালে পেয়েছিলেন 'ন্যাশনাল মেডেল অফ সায়েন্স। ' ১৯৮১ তে পান মেডিসিনে 'উল্ফ্ প্রাইজ।' ১৯৮৩ সালে তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য তিনি  নোবেল প্রাইজ পান । শারীরতত্ত্বে নোবেল প্রাইজ পাওয়া মহিলা বিজ্ঞানীদের মধ্যে তিনি হলেন অন্যতম। ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনিই একমাত্র মহিলা বিজ্ঞানী, যিনি এককভাবে ওই বিভাগে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। জেনেটিক তথ্য রক্ষায় 'টেলোমিয়ার' ও 'সেন্ট্রোমিয়ার' -এর গুরুত্বপূ্র্ণ ভূমিকা আবিষ্কার করেন তিনি। ভুট্টার 'জেনেটিক ম্যাপ'ও তৈরি করেন তিনি। সাইটোজেনেটিক্স ও এথ্নোবটানির ওপরেও প্রচুর গবেষণা করেন তিনি। 

১৯88 সালে তিনি ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ তে হন National Women's Hall of Fame।  ১৯৮৯ সালে হন রয়্যাল সোসাইটির 'ফরেন মেম্বার'। ১৯৯৩ সালে 'আমেরিকান ফিলোসফিক্যাল সোসাইটি ' থেকে পান 'বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন মেডেল'। 

এর কিছুদিন  আগে ১৯৯২ সালের ২ সেপ্টেম্বর  ৯০ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।

সূচিপত্র

কল্পবিজ্ঞান

গল্পবিজ্ঞান

বিজ্ঞান নিবন্ধ

পোড়োদের পাতা


Copyright © 2011. www.scientiphilia.com emPowered by dweb