উদ্ভিদবিজ্ঞানী অধ্যাপিকা (ড.) অর্চনা শর্মা

লেখক - ডঃ শতাব্দী দাশ

                                                                          চিত্রসূত্র – অন্তর্জাল         

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.এস.সি ডিগ্রি প্রাপ্ত দ্বিতীয় মহিলা হলেন অধ্যাপিকা অর্চনা শর্মা। ১৯৬৭ সালে তিনি কলিকাতা  বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে অধ্যাপিকা হিসেবে যোগ  দেন। তিনি  ও তাঁর স্বামী অধ্যাপক অরুণ শর্মা বালিগঞ্জ বিজ্ঞান কলেজে (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) র উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে 'স্কুল অফ সাইটোজেনেটিক্স' প্রতিষ্ঠা করেন। কোশ ও ক্রোমোজোম সংক্রান্ত গবেষণার জন্য গড়ে তোলেন 'সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ' । 

          আসি অর্চনা শর্মার ছোটোবেলার কথায়। তাঁর  জন্ম ১৯২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মহারাষ্ট্রের পুণা শহরে। তাঁর বাবা অধ্যাপক এস.পি. মুখার্জি ছিলেন রাজস্থানের বিকানিরে কলেজের অধ্যাপক। অর্চনার পড়াশোনা  শুরু হয় বিকানিরে। সেখান থেকেই তিনি উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক হন প্রথম বিভাগে। এরপর তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি হন  এবং ১৯৫১ সালে প্রথম বিভাগে এম.এস.সি পাশ করেন। 

          অধ্যাপক অরুণ শর্মার অধীনে গবেষণা করে ১৯৫৫ সালে পি.এইচ. ডি ও ১৯৬০ সালে ডি.এস.সি ডিগ্রি লাভ করেন।

          ১৯৭২ সালে বালিগঞ্জ বিজ্ঞান কলেজে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে 'জেনেটিক্স' বিষয়ে অধ্যাপিকা হলেন এবং ১৯৮০ সালে ওই বিভাগের প্রধান হলেন। তাঁর অধীনে ৭০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী গবেষণা করে পি.এইচ. ডি ডিগ্রি পেয়েছেন। অধ্যাপক অরুণ শর্মা ও অধ্যাপিকা অর্চনা শর্মা কোশের মধ্যে ক্রোমোজোমের গঠন দেখার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন। সেই পদ্ধতিগুলি সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে।  ১৯৬৫ সালে এই বিষয়ে তাঁরা একটি বই প্রকাশ করেন যে বইটি 'উদ্ভিদ ক্রোমোজোম' নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতেই পাঠ্য বই হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৭২ ও ১৯৮৩ সালে যথাক্রমে বইটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। 

          সাইটোট্যাক্সোনমি ও হিউম্যান জেনেটিক্স বিষয়েও তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা রয়েছে। পূর্ব ভারতের মানুষের মধ্যে 'জেনেটিক্স পলিমর্ফিসম'  বিষয়ে কাজ করেন তিনি। বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক,  পরিবেশে তার প্রভাব এবং বিভিন্ন বায়োলজিক্যাল সিস্টেমে তার প্রভাব নিয়েও গবেষণা করেন তিনি। জলে আর্সেনিক দূষণ নিয়ে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা কাজ করেছেন। উদ্ভিদের ওপর বিভিন্ন দূষণকারী পদার্থের প্রভাব নিয়েও গবেষণা করেছেন তিনি। তাঁর প্রকাশিত গবেষণাপত্রের সংখ্যা 8০০ র বেশি। তিনি 'নিউক্লিয়াস' নামে একটি  আন্তর্জাতিক জার্নাল প্রকাশ করতেন , যেটি সম্পাদনাও করেছেন ২০০৭ সাল পর্যন্ত। তাঁর লেখা দশটি বই আছে। এছাড়া তিনি ১৫ টি Proceedings ও Volume সম্পাদনা করেছেন। ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করেছেন  তিনি। 

          বিভিন্ন উচ্চপদ অলঙ্কৃত  করেছেন অধ্যাপিকা অর্চনা শর্মা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে তিনি দুবার সদস্য ছিলেন। সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ কাউন্সিলের তিনি তিনবারের সদস্য ছিলেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ, পরিবেশ বিভাগ ইত্যাদির সাথেও যুক্ত ছিলেন। অনেক নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন তিনি। ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিজ্ঞান গবেষণা ও পড়াশোনার  পরিকাঠামোর উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন তিনি সবসময়। Population,Environment and Development of the American Association for the Advancement of Sciences , Washington এর কমিটি সদস্য এবং Capacity Building in Science (Paris) এর কমিটি সদস্য ছিলেন তিনি। 

          বহু পুরস্কারে ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন অধ্যাপিকা অর্চনা শর্মা। ১৯৭৬ সালে তিনি পেয়েছিলেন ' শান্তিস্বরূপ ভাটনগর' পুরস্কার, জীববিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণার জন্য। এর আগে তিনি পেয়েছেন 'জে. সি. বোস পুরস্কার' । ১৯৮৩ সালে তিনি পান FICCI পুরস্কার। ১৯৮8 সালে ইন্ডিয়ান বোটানিক্যাল সোসাইটি থেকে পান 'বীরবল সাহনি মেডেল'। 

          ১৯৮8 সালে তিনি 'পদ্মভূষণ' উপাধি পান।১৯৮৯ সালে তিনি ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস অ্যাসোসিয়েশনে 'প্ল্যাটিনাম জুবিলি' বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রিত হন এবং ১৯৯8 সালে ওই সংস্থা থেকে 'পঞ্চদশ জি.পি. চ্যাটার্জি স্মারক পুরস্কার' পান। ১৯৯৫ সালে পান এলাহাবাদের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সের পক্ষ  থেকে 'এস.জি. সিনহা  মেমোরিয়াল লেকচার পুরস্কার '। আশুতোষ মুখার্জি  মেডেল' পান ১৯৯৯ সালে। ২০০৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে "Eminent Teacher of Distinction" পুরস্কারে ভূষিত  করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে। 

          অধ্যাপিকা অর্চনা শর্মা ভারতের বহু বিজ্ঞান সংস্থার ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন,  যেমন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমি, নিউ  দিল্লি; ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস,  ব্যাঙ্গালোর; ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস, এলাহাবাদ। ১৯৮২ থেকে ১৯৮8 সাল পর্যন্ত তিনি ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সমিতির সদস্য, কোষাধ্যক্ষ  ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৬-৮৭ সালে ওই সংস্থার সভাপতি হন। তিনি 'বোটানিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া'  এবং 'সোসাইটি অফ সাইটোলজিস্টস অ্যান্ড জেনেটিসিস্টস'এও যুক্ত ছিলেন। 

          তাঁর লেখা বই "Chromosome Techniques, Theory and Practice" একটি  আকর গ্রন্থ। তিনি ছাত্রছাত্রীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন  এবং প্রত্যেকের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত  ভালো ছিল।

          জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সক্রিয়ভাবে গবেষণা ও অন্যান্য কাজে যুক্ত ছিলেন। 

          ২০০৮ সালের ১8 জানুয়ারি তাঁর জীবনাবসান হয়।

        

 

 

সূচিপত্র

কল্পবিজ্ঞান

গল্পবিজ্ঞান

বিজ্ঞান নিবন্ধ

পোড়োদের পাতা


Copyright © 2011. www.scientiphilia.com emPowered by dweb