সূচিতে ফিরুন

পদার্থবিদ্যার একটি কৌতুক কাহিনী

লেখক - পিনাকীশঙ্কর চৌধুরী
img

রয়াল অ্যাকাডেমির প্রেসিডেন্ট নোবেল লরিয়েট স্যার আর্নস্ট রাদারফোর্ড এই ঘটনার কথাটা বলেছেন। তাঁর ভাষায় ঘটনাটা এই রকম।

কিছুদিন আগে আমি আমার এক সহকর্মীর কাছ থেকে একটা কল পেলাম। তিনি তাঁর এক ছাত্রকে ফিজিক্সের একটা প্রশ্নের উত্তরের জন্য শূন্য দিতে চান। কিন্ত ছাত্রটি পুরো নম্বর দাবি করছে। উনি এবং ছাত্রটি এ ব্যাপারে একজন নিরপেক্ষ বিচারক চাইছে। আমাকে সেই বিচারক পদে নির্বাচিত করা হয়েছে।

আমি পরীক্ষার প্রশ্নটা পড়লাম। প্রশ্নটা এই রকম – কীভাবে একটা ব্যারোমীটারের সাহায্যে একটা উঁচু বাড়ির উচ্চতা মাপা যেতে পারে সেটা দেখাও। ছাত্রটি এই রকম উত্তর করেছে – ব্যারোমিটারটিকে বাড়িটার ছাদে নিয়ে যাও। একটা লম্বা দড়ি দিয়ে বেঁধে  সেটাকে নিচে পর্যন্ত নামিয়ে দাও। তারপর সেটাকে তুলে নাও। দড়িটার দৈর্ঘ্যটা মাপ। দড়ির দৈর্ঘ্যই বাড়ির উচ্চতা। 

পুরো নম্বর পাবার পক্ষে ছাত্রটির যুক্তি খুবই জোরালো। কারণ সে পুরো উত্তর দিয়েছে এবং সঠিক উত্তর দিয়েছে। কিন্তু অপর দিকে তাকে যদি পুরো নম্বর দেওয়া হয় তবে সে ফিজিক্সে হাই গ্রেড পাবে এবং সেটা ফিজিক্সে তার জ্ঞান থাকা প্রতিপন্ন করবে। কিন্তু এই রকম উত্তরে সেটা হয় না। আমি প্রস্তাব করলাম – ছেলেটিকে আর একটা সুযোগ দেওয়া হোক। আমি ছেলেটিকে ছয় মিনিট সময় দিলাম এবং তাকে সাবধান করে দিলাম যে তাকে ফিজিক্সের কিছু জ্ঞানের পরিচয় রাখতে হবে।

দেখলাম পাঁচ মিনিট সে কিছুই লিখল না। আমি প্রশ্ন করলাম – তুমি কি হাল ছেড়ে দিচ্ছ? সে বলল যে তার কাছে  অনেকগুলো উত্তর আছে। কোন্‌টা সব চেয়ে ভালো হবে সেটাই সে ভাবছে। আমি তাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলাম আর তার নিজের কাজ করে যেতে বললাম। পরের এক মিনিটে সে তাড়াতাড়ি করে লিখে দিল – ব্যারোমিটারটাকে ছাদে নিয়ে যাও। কার্নিশ ধরে ঝুঁকে পড়। ব্যারোমিটারটাকে ওখান থেকে ফেলে দাও। তারপর স্টপ ওয়াচ দিয়ে পড়ার সময়টা মেপে নাও। তারপর d = 0.5 gt2 এই সূত্রটা ব্যবহার করে বাড়ির উচ্চতাটা মেপে নাও। 

 আমি আমার সহকর্মীকে প্রশ্ন করলাম – আপনি কি এবার মেনে নেবেন? উনি মেনে নিলেন। এবং তাকে প্রায় পুরো নম্বর দিলেন। আমার সহকর্মীর অফিস ছেড়ে যাবার সময় আমার মনে পড়ে গেল যে সেই ছেলেটি বলেছিল যে এই প্রশ্নের আরো কয়েকটা সমাধান তার কাছে আছে। আমি ছেলেটিকে প্রশ্ন করলাম সেই সমাধান গুলি কী?

ছেলেটি বলল – দেখুন ব্যারোমিটারের সাহয্যে একটা উঁচু বাড়ির উচ্চতা মাপার আরো কয়েকটা পথ আছে। উদাহরণ হিসাবে বলি এক রৌদ্রজ্জ্বল দিনে আপনি ব্যারোমীটারের উচ্চতা মাপুন, তার ছায়াটা মাপুন, বিল্ডিংএর ছায়াটা মাপুন। তারপর ঐকিক নিয়মের সূত্র ব্যবহার ক’রে বাড়ির উচ্চতাটা নির্ণয় করে নিন।
–  বাঃ, বেশ। আর অন্য পথ গুলো কী?

ছেলেটি বলল – হ্যাঁ। ব্যারোমিটার দিয়ে বাড়ির উচ্চতা মাপার আর একটা মৌলিক পদ্ধতি আছে। সেটা আপনার পছন্দ হতে পারে। আপনি ব্যারোমিটারটা হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকুন। আর ব্যারোমিটারের সমান মাপটা চিহ্ন দিতে থাকুন। কতগুলো চিহ্ন হল গুনুন। বাড়ির মাপটা ব্যারোমিটারের ইউনিটে পেয়ে যাবেন।

বললাম – বাঃ। বেশ সোজাসুজি পদ্ধতি।

ছেলেটি বলল – অবশ্য আপনি যদি আরো সফিস্টিকেটেড পদ্ধতি চান তবে আপনি ওই ব্যারোমিটারটাকে একটা দড়িতে বেঁধে ঝুলিয়ে দিন। সেটাকে পেণ্ডুলামের মতো করে দুলিয়ে দিন। একবার রাস্তায় আর একবার বাড়ির ছাদে g এর মান নির্ণয় করুন। g এর মানের পার্থক্য দিয়ে আপনি বাড়ির উচ্চতাটা বার করতে পারবেন।

এই একই পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি ব্যারোমিটারটাকে ছাদে নিয়ে যান। একটা লম্বা দড়ি দিয়ে সেটাকে রাস্তা পর্যন্ত নামিয়ে দিন এবং এটাকে পেণ্ডুলামের মতো দোলান। তারপর ওই পেণ্ডুলামের টাইম পিরিয়ড দিয়ে বাড়ির উচ্চতাটা গননা করে নিন।

সব শেষে বলি, এই অঙ্কটা সমাধানের আরো অনেক পদ্ধতি আছে। তবে মনে হয় সব চেয়ে ভালো পদ্ধতিটা –  এবং সেটাই মনে হয় সর্বোৎকৃষ্ট – যে ব্যারোমিটারটা হাতে নিয়ে আপনি বেসমেন্টে সুপারিন্টেণ্ডেন্টের ঘরে যান তার ঘরের কড়া নাড়ুন। উনি যখন সাড়া দেবেন তখন বলুন – মিস্টার সুপারিন্টেণ্ডেন্ট, আমার হাতে একটা সুন্দর ব্যারোমিটার আছে। আপনি যদি এই বাড়ির উচ্চতাটা বলতে পারেন তবে আমি আপনাকে এই ব্যারোমিটারটা দিয়ে দেব।

এবার আমি জানতে চাইলাম, তুমি কি এই প্রশ্নের প্রথাগত উত্তরটা জান না? সে স্বীকার করল সে জানে। কিন্তু হাই স্কুল আর কলেজ ইন্সট্রাক্টারদের কাছে কিভাবে চিন্তা করতে হয় সেই উপদেশ শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গেছে।

 স্যার রাদারফোর্ডের বর্ণনাটা এখানেই শেষ। শ্রোতাদের অনুসন্ধিৎসা মেটাবার জন্য বলি এই ছাত্রটির নাম নীল বোর (Neils Bohr) যিনি ১৯২২ সালে ফিজিক্সে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।

 

 

 ** গল্পটি সংগৃহীত ইংরেজি গল্পের বাংলা অনুবাদ    

চিত্রসূত্র – ইন্টারনেট এবং তার সহায়তায় তৈরি চিত্র