“দুধটা খেয়ে নাও দাদু” ছয় বছরের নাতনি দ্যুতির ডাকে নির্মাল্যবাবু একঝটকায় পৃথিবীতে নেমে এলেন নিজের ভাবনার জগৎ ছেড়ে। দুটো লম্বা বিনুনী দুলিয়ে টলমল হাতে এত্তবড় গ্লাস ধরে এগিয়ে আসা দ্যুতিকে দেখে তাড়াতাড়ি ওর হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে টেবিলের উপর রাখলেন। তারপর দ্যুতিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “রাত এগারোটা পেরিয়েছে, দিদিভাই না ঘুমিয়ে এখনও এই বুড়ো খোকার যত্নআত্তি করতে এসেছো কেন?”
দ্যুতি ঠোঁট উল্টে বলল,
“দাদুর কাছে আবার সময় ধরে আসতে হবে না কি?”
“আহা দিদিভাই, আমার প্রশ্ন হলো তুমি এত রাতে জেগে আছো কেন? তোমার তো নটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়া অভ্যাস”
দুদিন বয়স থেকে নিজের কোলে আঁকড়ে বড় করা এই মেয়েটির মুখের দিকে প্রথমবার তাকিয়েই নির্মাল্যবাবু বুঝেছিলেন, এ সাক্ষাৎ জগজ্জননী। সেই জন্মকাল থেকেই দ্যুতি থাকে ওর দাদুর ছায়ায় ছায়ায়। ব্যস্ত কর্মরত বাবা মা'কে দ্যুতি কাছে পায় কয়েকঘন্টার জন্য মাত্র। মা রাতে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। ঘুম থেকে উঠে কোনদিনই বাবা-মাকে দেখতে পায় না দ্যুতি। তাই রাতের ওইটুকু সময় বাদে দাদুই ওর সর্বেসর্বা। যতটা যত্ন পায়, এত্ত বড়ো আলোর মন দিয়ে বহুগুণ বেশী ফিরিয়ে দেয়, বেশ উপলব্ধি করতে পারেন নির্মাল্যবাবু। তবে স্নেহের কাঙাল এই একরত্তিটি আজ পর্যন্ত কোনদিন তো রাত জাগেনি? এই সময়ে মায়ের কোলও ছাড়েনি। তাহলে কি দ্যুতি তার বাবা-মায়ের কথা শুনে জেগে গেল? তারপর চলে এলো দাদুর কাছে এই জেনে যে দাদু-নাতনির বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে?
একটা বহুজাতিক বায়োটেকনোলজি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সংস্থায় কর্মরত আয়ুষ্মান আর সাহানা, নির্মাল্যবাবুর ছেলে আর বৌমা। কাজের চাপে বোঝা দায়, তারা আদৌ একই পরিবারে থাকে নাকি ভিন্ন দেশের নাগরিক। মাসে অন্তত তিনবার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছোটাছুটি করতে হয় এই জুটিকে। গত দুবছরে ওদের ব্যস্ততা এতটাই বেড়েছে যে হাতে গুনে বলে দেওয়া যায় নির্মাল্যবাবুর সাথে কতবার কথা বলেছে ওরা। নির্মাল্যবাবু সবটাই বোঝেন। একসময়ে একটি নামী কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হওয়ার দরুন তিনি জানেন পরিশ্রম আর শ্রান্তি কাকে বলে।
তাই সন্তানের সাফল্যের খবর যখন তার মুখে না শুনে খবরের চ্যানেলে শোনেন, তখন অবাক হওয়ার কিছুই থাকে না। তবুও তাঁর অপলক দৃষ্টি অনুসরণ করে দ্যুতি আরেকটু বেশী কোলের মধ্যে চেপে জড়িয়ে ধরে দাদুকে, এক অদৃশ্য শূন্যতা পূরণ করতে চায়। বকবক করে তার হাজারো প্রশ্নে এমন জেরবার করতে থাকে যে সেই মুহূর্তে তিনি জগৎসংসারের সমস্ত কষ্ট বেমালুম ভুলে যান!
দ্যুতি তার দাদুর কোলে বসে শুনেছে, কিভাবে ওর বৈজ্ঞানিক বাবা মা এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছে। এই আবিষ্কার হয়তো মানবসভ্যতার অগ্রগতি সম্পূর্ণ পাল্টে দেবে। খবরের সিংহভাগ সে বোঝেনি, অবশ্য দাদু তাকে এইটুকু বুঝিয়ে দিয়েছে যে একটা প্রতিষেধক তৈরি করা হয়েছে, যা মানুষের শরীরে প্রেরণ করলে সেটা বার্ধক্যের গতি হ্রাস করবে। তার মানে, কোনও মানুষের বয়স খুব ধীরে বাড়বে। হিসেব মতো কাজ করলে, মানুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়ানোর কথা অন্তত সাড়ে-তিনশো বছর। এই প্রতিষেধকের নামকরণ করা হয়েছে গড'স ব্রেথ, অর্থাৎ, ঈশ্বরের নিঃশ্বাস। সেই নিঃশ্বাস যা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখলেও বুড়িয়ে তুলবে না।
নির্মাল্যবাবু জেনেছেন, বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মাসকয়েক আগে বাণিজ্যিক বাজারে এসেছে এই জারণ প্রতিষেধক। এর বিশেষত্ব হলো জারণের প্রতিক্রিয়ায় বয়স বৃদ্ধি আটকানো। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেন যে কোন প্রাণীর নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকার একটা মূল উপকরণ। কিন্তু সেই একই অক্সিজেনের কারণে শরীরে একটা নিরন্তর প্রতিক্রিয়া ঘটে যাকে বলা হয় 'অক্সিডেটিভ স্ট্রেস'। একটা মানুষের নিজস্বতা তার ডি.এন.এ.। বাতাস থেকে অক্সিজেন নেওয়ার ফলে, শরীরের ভিতরে প্রতিক্রিয়া হয়ে সেখান থেকে অনেক ফ্রী রেডিক্যাল উৎপন্ন হয়। তারা কোষের মধ্যে থাকা মাইটোকন্ড্রিয়া আর মাইটোকন্ড্রিয়াল ডি.এন.এ. (mtDNA)-এর ওপর হামলা করে তাদের নষ্ট করতে থাকে। ক্রমে বয়স বৃদ্ধি হয়।
সমস্ত শরীর শিকার হয় নানান অসুখ-বিসুখে। কিছু ক্ষেত্রে মারণ-রোগ ক্যান্সারও হয় এর কারণে। নতুন আবিষ্কৃত প্রতিষেধক এসবের মূলে থাকা অত্যধিক ফ্রী রেডিক্যাল শুষে নিয়ে তাদের শরীর থেকে বর্জন করে। গবেষণামূলক পরীক্ষা অনুযায়ী প্রতিষেধকের কার্যকারিতা সাতানব্বই শতাংশ। কিন্তু এই প্রতিষেধক তৈরি করা আর স্থিতিশীল রাখা খরচসাপেক্ষ। এটি জনসাধারণের কাছে উপলব্ধ হলেও আকাশচড়া দাম তার। বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে অনেক দেশে সরকার থেকে অনুমোদিত নয় এখনও। যেমন ভারতবর্ষে, এটি ব্যবহারের জন্য আলাদা অনুমতি নিতে হচ্ছে। মোটের ওপর, চমকপ্রদ আবিষ্কার হলেও সারা বিশ্ব এখনও একে সাদরে মেনে নিতে পারেনি।
নির্মাল্যবাবু নিজে মনে মনে এই চিন্তাধারা পোষণ করেন যে একটি সম্পূর্ণ জীবনযাপনের জন্য ঈশ্বরপ্রদত্ত আয়ু যথেষ্ট। যা সুখ-দুঃখ পেয়েছেন, তার জন্য একটা জীবনই ঢের। যদি কারুর প্রতি মায়া জড়িয়ে থাকে, তাহলে সে হলো কোল জুড়ে থাকা নাতনি। তার একাকীত্ব যেন তাঁর থেকেও বেশী। উনি তো একটা গোটা জীবন উপভোগ করেছেন স্কুল-কলেজে, কর্মক্ষেত্রে, দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়িয়ে। এই ছোট্টটি তো সবে জীবন শুরু করেছে, কিন্তু জন্ম থেকেই বাবা-মায়ের ভালোবাসা থেকে প্রায় বঞ্চিত। উনিই বুঝি দ্যুতির প্রকৃত দাদু, বাবা, মা, সারা পৃথিবীই বটে! এই একটি নরম কেন্দ্রবিন্দুকে ঘিরে তিনি আরও হাজারো বছরের ক্লিষ্ট জীবনযাপন মেনে নিতে পারেন অনায়াসে।
একটু আগে যখন ছেলে বৌমার তর্কের আওয়াজ ভেসে আসছিল ওদের ঘর থেকে, তখন তিনি ভারাক্রান্ত মন নিয়ে জানালার পাশে আরমকেদারায় বসে উন্মুক্ত কালো আকাশ দেখছিলেন। এত বড় আকাশ, শুধু সূর্যের আলোয় তার রঙ-রূপ পরিবর্তিত হয়, নাহলে সে তো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে অনন্ত কালো মহাশূন্য! ঠিক যেমন দ্যুতির আলোতে এখন তাঁর দিনগুলি আলোকিত, সে বাদে আর সবকিছু এক বিরাট অন্ধকার।
বেশ কয়েকদিন যাবৎ আয়ুষ্মান আর সাহানার মধ্যে বাকবিতন্ডা চলছিল। দ্যুতি নিশ্চয়ই ওদের কঠিন সিদ্ধান্ত শুনে ছুটে এসেছে তাঁর কাছে। নিজের শক্ত অবলম্বন, দাদুকে যদি সর্বক্ষণ অনুপস্থিত থাকা বাবা আর মা অন্য দেশে পাঠিয়ে দিতে চায়, যা শুধুমাত্র আশি বছর সম্পন্ন বৃদ্ধদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি অবসর-অঞ্চল, তাহলে মনখারাপ হবে না? সর্বোপরি, একটা প্রতিষেধক থাকা সত্ত্বেও ওরা দাদুর জন্য সেটা ব্যবহার করতে নারাজ। নিজেরা তো কর্মক্ষেত্রে সেটি পেয়েছে, উপরন্তু একটা বাড়তি ওষুধ তাদের বাড়ির সদস্যের জন্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা তারা নির্মাল্যবাবুকে না দিয়ে দ্যুতির জন্য সংরক্ষিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে নিতেই পারে, বাবা-মা হয়ে সন্তানের মঙ্গলকামনা করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ওষুধ পনেরো বছরের নীচে কোনো বাচ্চাকে দেওয়া যায়না। দ্যুতির পনেরো বছর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা মানে তার সংরক্ষণের জন্য কয়েক লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করার সামিল। তাছাড়া, ততদিনে হয়তো আরো উন্নতমানের ওষুধ চলে আসবে বাজারে। কিন্তু না, এসব যুক্তি আয়ুষ্মানের কাছে অর্থহীন। তার মতে, দ্যুতিকে খুব তাড়াতাড়ি তার ঘরোয়া কূপমন্ডুকের থেকে বার করে যথার্থ বিশ্বনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। তার পুরোনো-পন্থা অবলম্বনকারী দাদুর সান্নিধ্যে থাকলে সেটা হওয়া অসম্ভব, এটাই আয়ুষ্মানের বদ্ধমূল ধারণা। তাঁকে ছিন্ন হতে হবে দ্যুতির থেকে, ভেবেই বুকটা টনটন করে ওঠে নির্মাল্যবাবুর। আয়ুষ্মান - সন্তানের দীর্ঘ আয়ু কামনা করেই এই নামকরণ করেছিলেন তিনি নিজে। জন্মলগ্নে ক্ষুদ্র নশ্বর সন্তানকে নিজের হাতে নেওয়ার কথাটা স্মরণে এলো। সেদিন নিষ্পাপ সরল নবজন্মাকে পেয়ে মনটা কানায়-কানায় আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। আর আজ, বড় অচেনা লাগছে সবকিছু। এই কি সেই আয়ুষ্মান?
“কী হলো দাদু, দুধটা খাও, ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে যে” দ্যুতির কণ্ঠস্বরে সম্বিৎ ফিরল নির্মাল্যবাবুর। দ্যুতি মাঝেমধ্যেই ওর খাবারের ভাগ থেকে এটা-সেটা জোর করে ওর দাদুর মুখে পুরে দেয়। মানে দাদু নাতনিকে খাওয়ানোর সময় নিজেও প্রসাদ পেয়ে যান কখনও-সখনও। সে অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু ছয় বছরের শিশু নিজে থেকে দুধ এনে দাদুকে দিচ্ছে - এ তো ভাবতেই পারছেন না তিনি! তাহলে কি দ্যুতি রাতের দুধটুকু খেয়ে শুতে যায়নি? রাতে শোয়ার আগে নিয়মিত এক গ্লাস দুধ দ্যুতিকে সাহানা খাইয়ে দেয়। আজ হয়তো আয়ুষ্মান আর সাহানার মধ্যে আলোচনার বেগ এতই বেড়েছে যে মেয়ের দিকে খেয়াল করার অবসর পর্যন্ত ওরা পায়নি। প্রতিষেধক না দেওয়া নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই সাহানার, কিন্তু দেশান্তরে বৃদ্ধাশ্রমে শ্বশুরমশাইকে এরকম নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া নিয়ে সে যারপরনাই ক্রুদ্ধ। ছোট্ট দ্যুতির কী হবে তাহলে? এই নিয়েই চলছে তাদের মধ্যে মতভেদ।
“তুমি খাও দিদিভাই” স্নেহভরে দ্যুতির মাথায় হাত রাখলেন নির্মাল্যবাবু। আর হয়তো কয়েক ঘন্টা, তারপরেই তাঁকে চলে যেতে হবে সবকিছু ছেড়ে, দ্যুতিকে ছেড়ে।
“না, তুমি খাও, খাও বলছি!” দ্যুতি গ্লাস তুলে ধরে নির্মাল্যবাবুর মুখের সামনে। তার এই ছেলেমানুষী পীড়াপীড়িতে আহ্লাদিত হয়ে তিনি খেয়েই নেন দুধটা। কে জানে, মেয়েটা এই হয়তো তাঁকে শেষ খাওয়ালো তার কচি হাতের সস্নেহ আলিঙ্গনে? তাই আর বাধা দিলেন না তিনি। গুটিসুটি হয়ে তাঁর কোলের ওপর উঠে বসলো দ্যুতি।
“দাদু, তুমি কোথাও যাবে না আমাকে ছেড়ে”
“একদিন না একদিন সবাইকে চলে যেতে হয় দিদিভাই। জানবে, তার অস্তিত্ব কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। সে তার প্রিয়জনদের হৃদয়ে বেঁচে থাকে তার কথায়, কাজে, স্মৃতিতে”
“আমি স্মৃতি না, তোমাকেই চাই দাদু!”
দ্যুতির এই আকুল প্রার্থনা শেষ হতে না হতেই ঝড়ের বেগে ঘরে প্রবেশ করলো আয়ুষ্মান আর সাহানা।
“দ্যুতি, এত রাতে তুমি এখানে কি করছ?” চিৎকার করে ওঠে সাহানা। “তোমাকে তো দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে বলেছিলাম? জানো, সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়িয়েছি, কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম তোমার জন্য?”
“আমার জন্য ভয় পাচ্ছ তাহলে আমাকে একা কেন করে দিতে চাইছ মা?”
চোখ চাওয়াচাওয়ি করে আয়ুষ্মান আর সাহানা।
“ঘরে চল দ্যুতি। বাবা এখন দাদুর কাছে থাকবে। তুমি চলো” আদরের স্বরে ডেকে ওর দিকে এগিয়ে আসে সাহানা।
“একদম নয়!” এক ঝটকায় দাদুর আড়ালে লুকিয়ে পড়ে দ্যুতি। তারপর আস্তে আস্তে বলে,
“কোনও লাভ নেই। দাদু কোথাও যাবে না বাবা”
“দাদু তো কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে যাচ্ছে সোনা”
“ভুল! তোমরা দাদুকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিতে চাও, যেখানে দাদুর অমর হয়ে থাকার কোনো সম্ভাবনাই নেই। যেখানে কখনো আমার সাথে দেখা হবে না। আমি সেটা হতে দেব না। দাদু আজ রাত বারোটার পরেই আশি বছর হয়ে যাবে, তারপর তোমাদের তৈরি ওষুধ কাজ করবে না, তোমরা বলেছিলে। আমি শুনেছি। তাই আমি আমার ওষুধ দাদুকে খাইয়ে দিয়েছি। দাদু এখন অমর। দাদুকে আর কোথাও যেতে হবে না। আমরা সবসময় একসাথে থাকবো”
“কী?” সমস্বরে ঘরে উপস্থিত বাকি তিনজনেই আর্তনাদ করে ওঠে।
“আমি জোর করে দাদুকে আমার দুধ খাইয়েছি, তাতে দাদুর জন্য পাওয়া ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলাম, যেটা আমার জন্য তোমরা রাখতে চেয়েছিলে। ওষুধটা আজ এনেও শেষ পর্যন্ত তোমরা দিলে না। তোমার ব্যাগের ভেতর রেখেছিলে মা, আমি তোমাদের কথা শুনে বুঝে গেছিলাম”
বাকরুদ্ধ হলেন নির্মাল্যবাবু। তখনও ঘরের মধ্যে অনর্গল কথার স্রোত চলছে, তাঁকে দোষারোপ করা হচ্ছে। কিন্তু তিনি পলকহীন তাকিয়ে আছেন দ্যুতির দিকে, ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে একটা অদৃশ্য তৃতীয়-নয়ন মেলে সে তাঁকেই দেখছে। ছোট্ট মাথার পিছনে আলোর বলয়। আশ্বাস দিচ্ছে অস্তগামী দিনের শেষে এক নতুন ভোরের, ভেজা সমুদ্রতটে নতুনভাবে বারবার ফিরে আসা বন্ধনহীন লহরীর মতো নবজীবনের, বালুতটে অশেষ বালুকণার মতো আয়ু আর আনন্দ ভরে বেঁচে থাকা এক পবিত্রতর পৃথিবীর! এই ছোট্ট মেয়ে অনেক বড় মনের মানুষ। তার পাশে থাকবেন তিনি সবসময়, তাকে স্নেহে যত্নে আরও উন্নত করে তুলবেন, যার দ্যুতিতে সমস্ত আকাশ ভরে থাকবে স্নিগ্ধ আলোয়। একদিন সবাই দ্যুতির দিকে তাকিয়ে তখন বলবে, মানুষের মতো মানুষ বটে মেয়েটি, ঈশ্বরীও হতে পারে!
(এই গল্পের সমস্ত চিত্র সূত্র অন্তরজাল)