সূচিতে ফিরুন

জ্বলছে ওটা কী?

লেখক - ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়
img

-ওরে বাবা কটাস চোখো ও ও-

নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না সঙ্গীতা। একেবারে এলিয়ে পড়ল প্রভাতের কাঁধে। প্রভাত বেচারি তো পড়ল মহা বিপদে। কী দেখে হঠাৎ ভয় পেল তার বৌ সেটা না বুঝলেও সে যে খুব ভয় পেয়েছে এটা ঠিক। নাহলে আর অজ্ঞান হয়ে যাবে কেন।

কিন্তু এই বন পথে এখন তো কারোর সাহায্য পাওয়া খুব মুশকিল। বিয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে একটু দেরি হল। সামনে নেই কোনও গাড়িঘোড়া যে বড় রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরবে। অগত্যা এই শর্ট কাট। একটা দুটো ঝোপ পড়ে বটে তবে এই ক্লান্ত শরীরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা যাবে।

তখনকার মত চোখেমুখে বোতলের জল দিয়ে চাঙ্গা করে বাড়িতে এনে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া গেল। ছোটবেলায় রাতে যখন কিছুতেই ঘুমুতে চাইত না সঙ্গীতা তখন তার দিদি তাকে 'ওই কটাস চোখো আসছে' বলে ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়াতো। তার শিশুমন কল্পনা করে নিয়েছিল এমন একটা ভয়ংকর জন্তুকে অন্ধকারে তার চোখ জ্বলে।

-কটাস চোখো না ঘোড়ার ডিম। ও তো একটা খট্টাস মানে বনবেড়াল। আমি হুস হুস করতেই খোপ থেকে বেরিয়ে অন্যদিকে চলে গেল।

প্রভাতের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে বলল, কী বললে তুমি? খট্টাস?

-আরে ওই বনবেড়াল, ভাম এইসব জাতীয়। তা ওদের দেখে এত ভয়ের কী আছে?

-ভয় পাব না বল কী? দেখলে না চোখগুলো কেমন জ্বলছিল?

প্রভাত হেসে বলল, আরে দূর। ওরা তো অমনিই হয়। রাতে ওদের চোখ আগুনের মত জ্বলে।

একটু সাহস যেন ফিরে পেয়েছে সঙ্গীতা বলে। মনে হল। কিন্তু তার বদলে এল তীব্র কৌতূহল। প্রশ্ন করল, কেন?

- প্রশ্নটা বেশ ভালো। আর উত্তরটা আরও ভাল।

কিন্তু বলতে বেশ সময় লাগবে।

-লাগে লাগুক। আমি শুনব।

-কাল নাহয়-

-না আজকেই শুনব।

প্রভাত একটু গুছিয়ে বসে বলল, বেশ শোন। কিন্তু বিয়েবাড়ির পোশাকটা-

-ছাড়ব ছাড়ব। তবে তোমার জবাব শুনে তবে ছাড়ব।

-বেশ শোনো তবে। এটার কারণ হল এই সমস্ত প্রাণীদের চক্ষুগোলকের পেছনে ট্যাপেটাম লুসিডাম বলে একটা স্তরের অবস্থান। ল্যাটিন ভাষার এই শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল shining layer বাংলায় যাকে অনায়াসে বলা চলে চকচকে স্তর। এই স্তরের কাজ হল রেটিনায় পড়া আলোকে বাইরের দিকে প্রতিফলিত করা। বেশ কিছুটা আলো সে শোষণ করে তার কিছুটা বাইরে বার করে দেয় আর তাই সেই আলোতেই চোখটা তাদের চকচক বা জ্বলজ্বল করে।

সঙ্গীতা প্রশ্ন করল, এই ক্ষমতা সব প্রাণীদেরই আছে নাকি?

-না না। কিছু কিছু মেরুদন্ডী প্রাণী যেমন কুকুর, বেড়াল, বনবেড়াল, ভাম, শেয়াল, এমন কি বাঘ ভালুক পর্যন্ত।

-প্যাঁচা তবে দেখতে পায় রাতে এইজন্যে?

-সেটা তার অন্য বৈশিষ্ট্যের জন্যে। তবে তার চোখ অন্ধকারে জ্বলে। আবার কিছু অমেরুদন্ডী প্রাণীরও চোখ জ্বলে রাত্রে।

ঝট করে সঙ্গীতা বলে উঠল, আমি স্পষ্ট দেখেছি তার শুধু চোখ দুটোই দেখা যাচ্ছে। আর কিছু মানে শরীরের আর কিছুই দেখি নি। এটা জানোয়ার হতে পারেই না।

ভয়ে সে এখনও কাঁপছে। হাসল প্রভাত। বলল, আচ্ছা ধর একেবারে আলকাতরার মত ঘন অন্ধকারে একটা লোহার চিমটে দিয়ে কেউ একটা গরম কয়লা আনছে। তুমি কি চিমটেটা দেখতে পারবে সঙ্গীতা?

সঙ্গীতা ভেবে বলল, তা চিমটে দেখা যাবে না। শুধুই গরম কয়লাটা জ্বলজ্বল করবে।

-ঠিক একেবারে ঠিক। সেই জন্যেই অন্ধকারে পশুর দেহটা একেবারেই দেখা যায় না। দেখা যায় শুধু চোখ দুটো। আর তাও চোখের সবটা নয়। যেটুকু জ্বলজ্বল করে শুধু এটুকুইও। আর তোমাকে সেই কথা বলেই ভয় দেখিয়েছিল তোমার দিদি। তুমিও একটা কাল্পনিক ভয়ে ভীত হয়ে থাকতে। আর আশ্চর্য এই বড়বেলা অবধি তোমার সেই ভয় যায় নি।

বুঝেছে এমনি ভাব করে লজ্জার মৃদু ঘাড় নাড়ল সঙ্গীতা।

-আমি জানি তুমি হিস্ট্রি নিয়ে পড়েছ। কিন্তু মাধ্যমিক পর্যন্ত লাইফ সায়েন্সে যা পড়েছ তাতে আমাদের চোখ কীভাবে কাজ করে সেটা নিশ্চয় জানো। বিস্তারিত না হলেও কিছুটা হলেও চলবে।

-জানি। কিছুটা বলি?

-হ্যাঁ বল। বায়োলজিক্যাল ডিটেলস না বললেও চলবে। লাইটের ব্যাপারটা যা জানো তাই বল। চোখ মানে সেই লাইটের ব্যাপার তো আসবেই।

সঙ্গীতা বলল, এই তো। চোখের লেন্সের মধ্যে দিয়ে এদিক ওদিক থেকে সব আলো কেন্দ্রীভূত হয়ে অক্ষিগোলকের পেছনের পর্দা যাকে রেটিনা বলে সেখানে পড়ে আর সেখান থেকে তার পেছনে থাকা সেনসরি নার্ভ গুচ্ছ মস্তিষ্কে দূরে থাকা বস্তুটার সম্পর্কে ধারণা দেয়। ধারণা বলতে তার আকার উচ্চতা, রঙ বা আনুমানিক কত দূরত্বে আছে এইসব। আনুমানিক এইজন্যে বলছি দূরত্বের আন্দাজ হয়ত আমাদের মস্তিষ্ক করতে পারে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কত সেটা বাস্তব সম্মত ভাবে না মাপলে বলা যায় না।

প্রভাত তো দারুন খুশি সঙ্গীতার ব্যাখায়।

-ও হাউ এক্সেলেন্ট সঙ্গীতা। আমি ভাবতে পারি না। আমার মত বায়োলজির টিচার রীতিমত ঘোল খেয়ে যায় ক্লাসে পড়াতে আর তুমি কত সহজে বুঝিয়ে দিলে।

-কিন্তু সে তো হল সাধারণ দৃষ্টির ব্যাপার। এই জ্বলজ্বলে চোখের ব্যাপারটা-

-এক্ষেত্রে অবদান এই ট্যাপেটাম লুসিডামের যা এই সমস্ত প্রাণীর রেটিনার পেছনে একটা বিশেষ স্তর হিসেবে থাকে। এই স্তরের বিশেষত্ব হল এই যে, এই স্তরে যে কোষগুলি থাকে তারা কিছু আলো শোষণ করে রেখে দিতে পারে। পরে এগুলি বিশেষত অন্ধকারের সময় প্রতিফলিতে করে। যার ফলে চোখের এই অংশ বিশেষ ভাবে চোখের তারা জলজ্বল করতে থাকে। এই আলো ঊজ্জ্বল সাদা রঙের হলেও কিছু কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে লাল হতেও পারে আর সেক্ষেত্রে তার চোখ আগুনের ভাঁটার মত টক টকে লাল হয়ে দেখা দেয়। একেবারে অন্ধকারে এমন দৃশ্য সত্যি সত্যি ভয় ধরিয়ে দিতে পারে যে কাউকে।

কৌতূহলে নিজের চোখের তারাও ঊজ্জ্বল হয়ে উঠল সঙ্গীতার। ধড়মড় করে উঠে বসে বলল, বলছ কী? এরা তাহলে এইজন্যেই রাতের অন্ধকারেও দেখতে পায়?

প্রভাত হাসল, হ্যাঁ কিছুটা বটে।

-কিছুটা বলছ কেন? পুরোটাই বা নয় কেন?

-বলছি কেন সেটাও বলছি। তার আগে জানতে হবে আমরা কেন দেখি বা আমাদের চোখ কেন দেখতে সক্ষম পদার্থবিদ্যার দিক থেকে তার ব্যাখ্যা আমরা জানি। কিন্তু এর আবার কিছু জীববিজ্ঞানের ব্যাখা জানতে হবে নাহলে জানাটা সম্পূর্ণ হবে না। আসলে আমাদের চোখ একটা যন্ত্র বটে তবে তা আমাদের শরীরের অঙ্গও বটে। তাই বিষয়টার শেষ ব্যাখ্যা যে জীববিজ্ঞান দেবে তাতে আর বিস্ময় কেন থাকে।

-ঠিক। একেবারে ঠিক।

-আমাদের শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা যন্ত্র কিন্তু নিজে থেকে কাজ করতে পারে না। এই জন্যে রয়েছে স্নায়ুতন্ত্র বা নার্ভাস সিস্টেম। চোখ, নাক, কান ইত্যাদিও একই ভাবে কাজ করে। আর তুমি জানো যে আমাদের শরীর কোষ দিয়ে তৈরি হলেও বিভিন্ন অংশের কোষ কিন্তু আকারে, প্রকারে বা কাজে এক নয়। যেমন হার্টের কোষ, লাংসের কোষ, ব্রেনের কোষ, কিডনির কোষ ইত্যাদি সবই আলাদা আলাদা। আসলে যে যন্ত্র বা অংশের কাজ যেমন সেই অনুযায়ী কোষও বিভিন্ন। এই যেমন ধর আমরা বাড়ির দেওয়াল ইট দিয়ে গড়লেও মেঝেটা গড়ি মোজেইক বা মার্বেল দিয়ে। আবার জানলা তৈরি করা হয় কাঠ বা স্টিল অথবা এলুমিনিয়ামের সঙ্গে কাঁচ বা ফাইবার দিয়ে। কারণ আমাদের বাড়ির সব অংশের কাজ এক নয়।

আবার মাথা মৃদু নাড়াল সঙ্গীতা। ইঙ্গিত দিল সে বুঝেছে।

-আমাদের চোখের বিভিন্ন অংশের নির্মাণও কিন্তু বিভিন্ন কোষ দিয়ে হয়। স্নায়ুতন্ত্রের ব্যবহার এখানেও আছে তবে এটি সাধারণ স্নায়ুতন্ত্র বা পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম। যেমন চোখের পাতা ফেলা বা তোলা, লেন্সের আকার বড় হওয়া বা কম হওয়া সবকিছুই স্নায়ুনিয়ন্ত্রিত হলেও স্থানে স্থানে বিভিন্ন প্রকারের কোষ থাকে। কিন্তু কানে শোনা, চোখে দেখা, স্বাদগ্রহণ, গন্ধ ও স্পর্শ অনুভব করা এই পাঁচটি হল বিশেষ কেন্দ্রীয় অনুভূতি বা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের কাজ। তাদের জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা আর বিশেষ রকমের স্নায়ুকোষ সেখানে থাকে।

তুমি বলেছ আমাদের চোখের লেন্সের মধ্যে দিয়ে আসা সমস্ত আলোক রেখাগুলি পেছনের পর্দা বা রেটিনায় মিলিত হয় আর প্রতিকৃতি সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়। এই ধারণা আমাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে বলে এটা একটা গাছ, এটা একটা মানুষ, এটা একটা গরু এইসব। অভিজ্ঞতায় যা নেই তার ধারণা আমরা পাই না। যেমন যে কখনও কোনোভাবে নদী দেখে নি অর্থাৎ যার মস্তিষ্কে নদী সম্পর্কে কোনও ধারণা তৈরি হয় নি সে নদী বলতে একটা কিছু দেখবে তবে সেটা যে নদী তা বলতে পারবে না।

-একদম ঠিক।

-আমাদের চোখের পেছনে যে রেটিনা আছে তার সঙ্গে যুক্ত আছে অপটিক নার্ভ গুচ্ছ যার মাধ্যমে ছবিটা আমাদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। এই রেটিনা হল এমন একটা অংশ যার কাজ হল চোখের লেন্সের মধ্যে দিয়ে আসা আলোক শক্তিকে মস্তিষ্কের অনুভূতি যোগ্য বিষয়ে রূপান্তরিত করা। কিন্তু সবচেয়ে আগে এই অংশের আলোক শক্তি ধারণের ক্ষমতা থাকা দরকার।

-এটা তো ঠিক। তা যদি না থাকে তো মানুষ চোখ ছাড়া নাক দিয়েও দেখতে পেত।

-ঠিক। এই রেটিনায় রয়েছে দুই বিশেষ ধরণের আলোক গ্রহণকারী কোষ যাদের রড কোষ (Rod cell) আর কোন কোষ (Cone cell) বলে। এরা রেটিনায় তৈরি হওয়া আলোকচিত্রটি অনুভূতিযোগ্য করে অপটিক নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রবেশ করায়।

সঙ্গীতা যেন লাফিয়ে উঠল, আরিব্বাস কী বললে গো! তার মানে এই কোষ না থাকলে আমরা-

-ঠিক ধরেছ। আমরা দেখতেই পাব না। মানে চোখ থাকতেও অন্ধ যাকে বলে। তবে সেটা চলতি কথা হলেও এটা একেবারে বাস্তব সম্মত কথা।

-কিন্তু এই রড আর কোন কোষ কোথায় আর কীভাবে থাকে। এদের সংখ্যাই বা কত?

-কোন কোষগুলি থাকে রেটিনার মধ্যাঞ্চলে। আর রড কোষগুলি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। চিত্র ইন্টারনেট হইতে সংগৃহীত

-মানে সমান সংখ্যায়?

-আরে না না। রড থাকে কোনের থেকে বিশাল সংখ্যক বেশি সংখ্যায়। যেখানে কম বেশি ১২০ মিলিয়ন রড কোষ থাকে সেখানে কোন থাকে কমবেশি মাত্র ৬ মিলিয়ন।

-এই কমবেশি কথাটা ব্যবহার করলে কেন?

-তার কারণ এই সংখ্যা সবার ক্ষেত্রে সমান হয় না। কারোর কম কারোর বেশি।

সঙ্গীতা বলল, বুঝেছি বুঝেছি। সেই জন্যেই লোক ভেদে দৃষ্টির তারতম্য হয়।

-একেবারে ঠিক। তবে শুধু যে লোক ভেদে মানে মানুষ ভেদে তা নয়। মেরুদন্ডী বা অমেরুদন্ডী সব চোখবিশিষ্ট প্রাণীর ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য।

বিস্ময়ে হতবাক হয়ে চুপ করে রইল সঙ্গীতা বেশ কিছুক্ষণ। তাকে ভাবার জন্যে নির্দিষ্ট সময় দিয়ে প্রভাত বলল, এবার দিই তোমার প্রশ্নের উত্তর। তার আগে জানতে হবে রেটিনায় উপস্থিত এই কোষগুলির ভূমিকা ঠিক কী।

--ভেরি ইন্টারেস্টিং গো। আমার আর তর সইছে না।

-রড কোষগুলি আলোক গ্রহণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা গ্রহণ করে। এগুলি এত বেশি আলোক সংবেদনশীল যে খুব কম শক্তির আলোও সে গ্রহণ করতে পারে।

-তার মানে যাদের এই কোষের সংখ্যা বেশি তারা-

-খুব কম আলোতে দেখতে পায়। এমন কী রাতে পর্যন্ত- অন্য বাহ্যিক আলোর সাহায্য ছাড়াও। তাকে থামিয়ে দিয়ে সঙ্গীতা বলে উঠল, বুঝলাম এই প্রাণীরা যাদের চোখ রাতে জ্বলে তারা কেন অন্ধকারেও দেখতে পায়। আমার মনে হয় এদের রেটিনায় রড কোষের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে।

প্রশংসা গদ গদ ভাবে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে প্রভাত বলল, একশ ভাগ সঠিক। তবে গল্প এখনও কিছু বাকি আছে।

-বল। রাত যতই বাড়ুক। গল্পটা শুনতে আমার কৌতূহল আর আগ্রহ ততই বেড়ে যাচ্ছে।

-আচ্ছা গল্পের শেষ অংশটুকু বলি। আবার অপরদিকে এই কোষ মানে রড কোষ (Rod cell) আর কী, অধিক শক্তির আলো গ্রহণ করতে অক্ষম। সেক্ষেত্রে চড়া আলোয় কাজ করার জন্যে রয়েছে কোন কোষ (Cone cell) যেগুলো বিন্যস্ত থাকে রেটিনার মধ্যভাগে আর তার সংখ্যা যে রডের তুলনায় নগণ্য তাও বলেছি। এই কোষগুলি যাদের রেটিনায় তুলনায় কম তারা কিন্তু খুব চড়া আলো সহ্য করতে পারে না। এদের আলোকভীতি বা ফোটোফোবিয়া (photophobia) আসতে পারে।

সঙ্গীতা চুপ করে রইল।

-সাদা কালো ছাড়া অন্য রঙিন আলো দেখতে কিন্তু এই কোষ বিশেষ কোনও সাহায্য করতে পারে না। সেক্ষেত্রে কোন কোষগুলির সাহায্য গ্রহণ করতে হয়।

আবার চোখ ছানাবড়া হল সঙ্গীতার, তার মানে তুমি বলছ অন্ধকারে যারা দেখতে পায় তারা রঙ বুঝতে পারে না?

-ঠিক। তারা সাদাটাকেও পুরো দেখতে পায় না। কালোর সঙ্গে সাদা মেশানো অবস্থায় যাকে আমরা গ্রে কালার বা ধুসর রঙ বলি সেটা।

-রঙ দেখতে পায় না কেন?

-বলছি। কোন কোষের এই চড়া আলো সহ্য করা ছাড়াও আরও একটা মস্ত বড় ভূমিকা আছে সেটা হল তার রঙ গ্রহণের ক্ষমতা। কোন কোষগুলি বস্তুর রঙ বুঝতে সাহায্য করে। মানে রঙের অনুভূতি মস্তিষ্কে প্রবেশ করাতে আর কী। রড কোষের এই ক্ষমতা একেবারে নেই। তাই নাইট ভিশনে শুধু আমরা সাদা কালোর মিশ্রণ বা গ্রে কালার দেখতেই সমর্থ হই। যদিও বিজ্ঞানের দিক থেকে এই গ্রে কোনও রঙ নয়। কালোর তো কোনও আলোই নেই তাই সে রঙ নয়। আর সাদা হল সব রঙের মিশ্রণ সেই দিক থেকে দেখতে গেলে সেটা একক কোনও রঙই নয়।

চুপ করে ভাবছিল সঙ্গীতা। হঠাৎ একটা কথা মনে আসায় সে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা অনেক লোক যে বর্ণান্ধতায় ভোগে সেটা কি-

-প্রথম কথা বর্ণান্ধতা কোনও রোগ নয়। শরীরের একটা অবস্থা। আর দ্বিতীয় কথা হল এটা এত বিস্তারিত ব্যাপার যে আজ আর বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কাল আবার অফিস করতে হবে। তোমাকে রান্না করতে হবে। এখন ঘুমোবার সময়। আলো যদিও নেভানোর কথা। তবে যদি তুমি-

--আগে হলে ভয় পেতুম গো। সত্যি বনের মধ্যে যা দেখেছি। তবে এখন আর নয়। তুমি এমন সহজ আর সুন্দর ভাবে বুঝিয়েছ যে তার পরেও অন্ধকারে ভয় কেউ ভয় পেলে আমি তাকে চিমটি কেটে দেব কিন্তু। লজ্জা পেলেও সজোরে বলে উঠল সঙ্গীতা। চিত্র ইন্টারনেট হইতে সংগৃহীত